Salim Muhammad Bazar

ক্ষমতা থাকলে পাঁচামী নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন মমতা

রাজ্য

রণদীপ মিত্র: মহম্মদ বাজার 
 

 ‘ক্ষমতা থাকলে মমতা ব্যানার্জি দেউচা-পাঁচামীর প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’ রবিবার বীরভূমের মহম্মদ বাজারে সিপিআই(এম)’র ডাকা জনসমাবেশ থেকে এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
এদিন দুপুরে মহম্মদ বাজারের কালীতলা ময়দানের সমাবেশে দাঁড়িয়ে পরিবেশ ধবংস করে কর্পোরেট লুটের প্রতিবাদে গলা মিলিয়েছেন সমবেত মানুষ। তার মধ্যে দেউচা পাঁচামীর বাসিন্দারাও, ছিলেন সোহাগিনি মুর্মু, চম্পা হেম্বব্রম, বাহা মার্ডি, বালকে হেমব্রমরা। জমি-জঙ্গল ধ্বংস করে দেউচা-পাঁচামী কয়লা খনির বিরুদ্ধে একরোখা মেজাজেই আছেন তাঁরা। মহম্মদ সেলিমের বক্তব্যের সমর্থনে তাঁরাও সাফ জানিয়েছেন, ‘‘প্রাণ থাকতে জমি দেব না।’’ পাঁচামীর মানুষের এই জেদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সেলিমও বলেছেন, ‘‘পাঁচামীর মানুষের জীবিকা বাঁচানোর লড়াই, ঘর বাঁচানো লড়াই, ভাষা-সংস্কৃতি বাঁচানোর লড়াই আমাদের বামপন্থীদেরও লড়াই।’’ 
কালীতলা ময়দান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্প এলাকা, যা বর্তমানে এদেশের অন্যতম বৃহৎ পাথর বলয়। সেখানে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) দেখিয়ে লুট বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। এখন সেই এলাকায় কয়লা খনি গড়ার নামে এলাকার মানুষকে একেবারে উচ্ছেদই করার চক্রান্তে নেমেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এদিন সিপিআই(এম)’র সমাবেশে আসা কেন্দপাহাড়ীর এক যুবক জানিয়েছেন, ‘‘ডিসিআর অর্থাৎ নকল চালানের নামে গাড়ি পিছু কয়েক হাজারের হিসাবে দিনে কোটি টাকা তোলাবাজি হচ্ছে পাথর থেকে। ফলে কমছে গাড়ি। খেসারত দিচ্ছি আমরা। গাড়ি কমায় কাজ কমছে আমাদের। কারণ আমরা দিনমজুরি করে খাই ক্র্যাশারে খাদানে। পাথরের বিক্রি কম মানে আমাদেরও কাজের ডাক কম পড়ছে।’’ যুবকের এই কথার রেশ ধরেই পাঁচামী থেকে আসা আদিবাসীরা ক্ষোভ উগড়ে জানালেন, ‘‘কাজ তো কাড়ছেই আমাদের, সেইসঙ্গে খনির নামে আমাদের পাকাপাকি এলাকা ছাড়া করতে চাইছে।’’ 


এই বেআইনি ডিসিআর বন্ধ, কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল এবং সর্বোপরি লুটের রাজত্ব খতম করে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার আহ্বানে এদিন সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সিপিআই(এম)’র মহম্মদ বাজার এরিয়া কমিটি। সেই সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে এসে বলে গিয়েছেন, আগের মতো সিস্টেমেই সব চলবে। আগের মতো সিস্টেম মানে ডিসিআর’র নাম লুট, কয়লা খাদানের নামে লুটের পাকা বন্দোবস্ত কায়েম করা। তার সঙ্গে আছে বালি, বেআইনি টোল, একশো দিনের কাজের নামে মজুরি লুট, আবাস যোজনার কাটমানি। তাই আমরা বলছি, এই সিস্টেম ভাঙব। এই চোরাচালান সম্ভব হতো না যদি পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ ও তৃণমূলের গুন্ডা-বদমাইশরা এককাট্টা না হতো। তাই চোর ধরো জেলে ভরো আওয়াজ তুলে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে গ্রাম জেগেছে। এবার আলপথ পেরিয়ে, সাঁকো বেয়ে পাড়ায় পাড়ায় মানুষ একজোট হয়ে এই লুটেরাদের তাড়াবে।’’
এদিন সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষের সভাপতিত্বে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে প্রথমেই বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনা হেমব্রম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামলী প্রধান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সভায় মহম্মদ সেলিম দেউচা-পাঁচামী নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘‘দেউচা পাঁচামীর জন্য আদানির ১ হাজার কোটি টাকা ঘুষ ঠিক হয়েছে। তার অর্ধেক মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল পেয়ে গিয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে। তাই গ্রাউন্ড লেভেলে কোনও কাজ না হলেও মমতা ব্যানার্জি বলছেন দেউচা-পাঁচামীর অর্ধেক কাজ হয়ে গেছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি করছি দেউচা-পাঁচামী নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক মুখ্যমন্ত্রী। কী প্রকল্প? কত টাকার প্রকল্প? কি করতে চায়? ডিপিআর হয়েছে? টেন্ডার হয়েছে? কাকে দেওয়া হয়েছে? কোন শর্তে দেওয়া  হয়েছে? এগুলি মুখ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন না কেন? গায়ের জোরে রাজ্য সরকার এখানে খনি করতে চাইছে। পরিবেশের উপর প্রভাবের সমীক্ষা না করে, এলাকার মানুষের সাথে আলোচনা না করে কী করে আদানিকে প্রকল্প দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? যেখানে আদানির অস্ট্রেলিয়ার খনি প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে গোটা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছেন খোলামুখ খনি চলবে না, সেখানে আদানির মতো শিল্পপতির সংস্থা যে জালিয়াতি করে টাকা জোগাড় করছে তাকে কেন বরাত দেওয়া হচ্ছে? মোদী, মমতা আর আদানি তো এক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন! তার বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। মমতা ব্যানার্জি সব বিষয়ে কথা বলেন, অথচ আদানির কারচুপি ফাঁস করা হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে কথা বলছেন না কেন? কার সিদ্ধান্তে তিনি ১ টাকার বিনিময়ে দেউচার বিপুল জমি আদানিকে দিয়েছেন? এর বিনিময়েই তো ৫০০ কোটি টাকা ইলেক্টোরাল বন্ড’র মাধ্যমে তৃণমূলকে দিয়েছে আদানি। মোদী সরকারের ক্ষমতা থাকলে প্রকাশ করুক ওই ৫০০ কোটি টাকা তৃণমূলকে কে দিয়েছে। করবে না। এখানেই বিজেপি এবং তৃণমূল এক। মমতা ব্যানার্জি বিজেপি’র বিরোধী নয়, আদানি বিরোধীও নয়। আদানির এক হাত মোদী ধরেছেন, আরেক হাত ধরেছেন মমতা ব্যানার্জি।


নওসাদ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তারী নিয়ে মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, যারা প্রকৃত বিরোধী তাদের উপরই আক্রমণ করছে তৃণমূলের সরকার। বিজেপি হচ্ছে নকল বিরোধী। মমতা ব্যানার্জির পা ছোঁয়া বিরোধী। বিধানসভায় আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকী একমাত্র বিরোধী বিধায়ক, যিনি গোড়া থেকেই বামফ্রন্টের পাশে আছেন। এই নওসাদ সিদ্দিকীকে তৃণমূল নানা প্রলোভন দিয়ে কিনতে চেয়েছিল, তিনি বিক্রি হয়ে যাননি, তাই গ্রেপ্তার করে কন্ঠরোধ করতে চাইছে।

Comments :0

Login to leave a comment