Siliguri Rally

পুর্নবাসন সহ একাধিক দাবিতে বস্তিবাসীদের বিক্ষোভ মিছিল শিলিগুড়িতে

রাজ্য জেলা

অনিন্দিতা দত্ত – শিলিগুড়ি


ক্ষমতায় আসলে ২০ দিনের মধ্যে বস্তিবাসীদের জমির পাট্টা দেওয়ার শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কি হলো ? এখনও কেন বস্তির ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহ করা গেলো না ? জবাব চাইছেন শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের অন্তর্গত ১৪৯টি বস্তির হাজার হাজার মানুষ। তাই তৃণমূলীদের দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলো বস্তিবাসীদের মিছিল থেকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বস্তি উন্নয়ন সমিতি দার্জিলিঙ জেলা কমিটির ডাকে রেল ও সরকারী জমিতে সুদীর্ঘ বছর ধরে বসবাসকারী গরীব মানুষদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে পুর্নবাসনের দাবি সহ নয়দফা দাবিতে বস্তিবাসী মানুষদের বড় মিছিল কর্পোরেশন অভিমুখে রওনা হয়। 
মিছিল সরব হয়েছে পুর্নবাসন ও বাস্তু জমির পাট্টার দাবিতে। মিছিলে চলতে চলতে বস্তি উন্নয়ন সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক ভট্টাচার্য বলেন,  একাধিক দাবিতে বস্তিবাসীদের সাথে নিয়ে এর আগেও বহু আন্দোলন করেছি। বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বর্তমান রাজ্য সরকার ও বর্তমান শিলিগুড়ি পৌর বোর্ড। কিন্তু এই সময়ে কোন প্রতিশ্রুতিই কার্যকরী করা হয়নি’’। অবিলম্বে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের অন্তর্গত ১৪৯টি বস্তিবাসীদের বুনিয়াদি সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি। পুলিশ প্রশাসন ও বর্তমান পৌরবোর্ডের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষদের নিয়ে কোন ডেপুটেশন দিতে আসলেই দেখা যায় পুলিশ দিয়ে কর্পোরেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোন গরীব মানুষের কর্পোরেশনের ভেতরে ঢোকার অধিকার নেই। ভাঙচুর করতে নয়, গরীব বস্তিবাসীদের দাবি জানাতেই আমরা এসেছি। তিনি বলেন, ‘‘জমির কিছু দালাল, প্রমোটার’রা কর্পোরেশন পরিচালনা করছে। জমির দালালরা কর্পোরেশনে মাতব্বরি করছে। কিন্তু সাধারন মানুষের কোন প্রবেশের অধিকার নেই। বারবার এই ঘটনা ঘটছে’’। বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে এই ঘটনারও তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি।


এদিন অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে থেকে সুবিশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি হাসমিচক, হাসপাতাল মোড় ধরে এগিয়ে এসে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের সামনে এসে শেষ হয়। অশোক ভট্টাচার্য ছাড়াও এদিন মিছিলে অংশ নেন জীবেশ সরকার, সমন পাঠক, নুরুল ইসলাম, দিলীপ সিং, জয় চক্রবর্তী, কাজল পাল প্রমুখ। আগাম জানানো সত্ত্বেও এদিনও কর্পোরেশনের ভেতরে ও বাইরে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে কর্পোরেশনের গেট সামনে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরী করে বস্তিবাসীদের মিছিল আটকে দেওয়া হয়। বস্তিবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তাঁরা স্পষ্ট বলেন, তক্ষন না পর্যন্ত প্রতিনিধিদের কমিশনারের সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে, ততক্ষন রাস্তা জুড়ে অবস্থান চলবে। গেটের সামনে বসে পড়লেন মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষজন। অবরুদ্ধ রাস্তা। 
পানীয় জল সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাস্তাঘাট, নালা নর্দমার মেরামত ও সাফাইয়ের কাজ করা, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বিধনা, বার্ধক্য, পেনশন ও ১০ কেজি চাল দেওয়া, শহর এবং বস্তি এলাকায় ছোট দোকান, ঘুমটিঘর, বেআইনীভাবে উচ্ছেদ না করা, স্মার্ট মিটারের নামে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি করা চলবে না বস্তি এলাকায় বসবাসকারী যুবক ও যুবতীদের স্বনিযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি দাবিতে সোচ্চার হন বস্তিবাসী মানুষ। একই সঙ্গে তৈরী হয়ে থাকা ৬৪১টি পাট্টা অবিলম্বে দেওয়ার দাবিও জানানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভ চলতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালীন সাত জনের প্রতিনিধি দল কর্পোরেশনের ভেতরে কমিশনারকে স্মারকলিপি দিতে যান। নেতৃত্ব ফিরে না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে এসে সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি দিলীপ সিং জানান, কমিশনার ভয় পেয়েছে। তাই আগাম জানানো সত্ত্বেও স্মারকলিপি নেবার সময় অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। কমিশনারের অনুপস্থিতিতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে কর্পোরেশনের আধিকারিকের হাতে। তিনি বলেন, ২০১১সালের পর বস্তির কোন মানুষ পাট্টা পায়নি। উল্টে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গরীব বস্তির মানুষের রুটিরুজির ওপর আঘাত নামিয়ে আনা হয়েছে। 
গণ আন্দোলনের নেতা জীবেশ সরকার বলেন, উন্নয়নের নামে বস্তির মানুষদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের পাট্টা দেওয়া হচ্ছে না। সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বস্তি বাসিন্দারা। আগামীদিনে আরো বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এদিন বক্তব্য রাখনে সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক কাজল পাল, নুরুল ইসলাম প্রমূখ।
 

Comments :0

Login to leave a comment