FAKE BALLOT PRINTING

ভুয়ো ব্যালট ছাপা হচ্ছে, অভিযোগ প্রশাসনেই

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে পুরুলিয়া জেলার দুই শীর্ষ আধিকারিককে আকস্মিকভাবে বদলি করে দিল রাজ্য সরকার। গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে রহস্যের যথেষ্ট উপাদান আছে বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। 
অভিযোগ, এর সঙ্গে জড়িত ভুয়ো ব্যালট পেপার ছাপানোর ঘটনা। রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় মূলত জেলা পরিষদের দখল নিশ্চিত করতে শুরু হয়েছে এই নয়া জালিয়াতি।

পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষত, জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যালট ছাপানোর মূল দায়িত্বই ছিল অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) প্রণব কুমার ঘোষের। তাঁকে এবং একইসঙ্গে রাতারাতি বদলি করে দেওয়া হয়েছে পুরুলিয়া জেলার ডিপিএলও (ডিস্ট্রিক্ট প্ল্যানিং অফিসার)-কে। জেলার ওসি ইলেকশন হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন ডিপিএলও দীপ ভাদুড়ী।


পঞ্চায়েত নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা দুই শীর্ষ আধিকারিকের বদলি নিয়ে জেলায় ‘নকল ব্যালট’ পেপার ছাপানোর অভিযোগ সামনে চলে এসেছে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, অতিরিক্ত জেলা শাসকের কাছে জেলা শাসকের কাছ থেকে জেলা পরিষদের আসনের জন্য যে পরিমাণ ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা তার দ্বিগুণ ব্যালট ছাপানোর নির্দেশ আসে।

ওপরতলার নির্দেশ বলে আধিকারিককে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানোর। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা শাসক মৌখিক নির্দেশ মানতে চাননি। তিনি লিখিত নির্দেশ চেয়েছিলেন। তারপরেই রাতারাতি দুই আধিকারিককে বদলির নির্দেশ কার্যকর করে নবান্ন। 

নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার পর থেকে আধিকারিকদের বদলি করতে হলে নির্বাচন কমিশনের আগাম অনুমতি নেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে তার অবশ্য ব্যাতিক্রম হয়নি। 

নবান্ন থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দপ্তরের যুগ্ম সচিবের জারি করা নির্দেশিকাতে এডিএম (উন্নয়ন) প্রণব কুমার ঘোষকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নবান্নে প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দপ্তরের ওএসডি পদে আনা হয়েছে। 

একইসঙ্গে, ডিপিএলও দীপ ভাদুড়ীকেও স্থানান্তরিত করা হয়েছে নবান্নের প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দপ্তরের ওএসডি পদে। কার্যত নির্বাচনী কোনও কাজের সঙ্গে যাতে এই দুই আধিকারিকের কোনোরকম যোগ না থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, এই বদলি আসলে এক অর্থে শাস্তিমূলকই। কমপালসারি ওয়েটিং-এর মতোই গুরুত্বহীন করে রাখা।  
নবান্নের একটি সূত্রে জানা গেছে, জেলা শাসকের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দুই আধিকারিককে বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সায় দেন। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, জেলা শাসক দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ওপরতলার নির্দেশ কার্যকর না করায় ‘অবাধ্যতার’ অভিযোগ করেছেন। 

রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ওপরতলার নির্দেশ যদি আইনের বিরুদ্ধে যায় তা মানতে হলে মৌখিক আদেশের পরিবর্তে লিখিত নির্দেশ চেয়ে কোনও অন্যায় কাজ করেননি আধিকারিক। শিরদাঁড়া সোজা রেখেছিলেন বলেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলো।’’ 

রাজ্যের বেশ কিছু জেলা থেকে ইতিমধ্যেই নকল ব্যালট ছাপিয়ে রাখার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। আবার নকল ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফ থেকে আলোচনা শুরু হতে সেই ভুয়ো ব্যালট নষ্ট করার খবরও আসছে। 

রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, এদিনই হুগলী জেলার একটি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে যে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছিল তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলার বাকি ব্লকে তা হয়নি। 

পুরুলিয়া জেলাতেও বেশ কিছু ব্লকের স্রেফ ব্যালট ছাপানোর কাগজের অভাবে এখনও ব্যালট ছাপানো যায়নি। অথচ ব্যালটের কাগজ হিসাব করেই পাঠানো হয়ে থাকে। তারপরেও কাগজের কৃত্রিম সঙ্কটের জন্য আধিকারিকরা জেলায় জেলা পরিষদ ভোটের জন্য অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানোর দিকেই আঙুল তুলছেন।

সাধারণভাবে কোনও বুথে যদি ৬৩২জন ভোটার থাকেন তাহলে ‘রাউন্ড ফিগার’—এ ৬৪০টি ব্যালট ছাপানোর সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ১০টি ব্যালট পেপার ছাপানোর বিধি করা আছে। 

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সেই বিধিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে ৭০, ৮০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো চলছে। নম্বরহীন এই ব্যালট কেন ছাপানো হচ্ছে তার কোনও সদুত্তর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে নেই। আর কেন ছাপানো হবে, তার লিখিত নির্দেশ চাইতে গিয়ে দুই আধিকারিককে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। কোনোরকম প্রশ্ন না এই অবৈধ কাজে সহায়তা করে গেলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। 

এই প্রসঙ্গেই আধিকারিকরা ফের রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরাজ্যে বহু নির্বাচনে এমনকি ভিনরাজ্যে গিয়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করা এক অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘নকল ব্যালট ছাপানোর মতো গুরুতর অভিযোগ ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে করা হয়েছে। সেই নকল ব্যালট ছাপানোর মৌখিক নির্দেশ পালন করতে না চাওয়াতে দুই আধিকারিককে শাস্তির মুখে পড়তে হলো। কমিশনের উচিত অভিযোগকে খতিয়ে দেখে এখনই পুরুলিয়ার জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া।’’ 


রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই দেশের বাইরে চলে যাওয়া ব্যক্তি পঞ্চায়েতে শাসক দলের প্রার্থী হয়ে গেছেন! মামলা গড়িয়েছে আদালতে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার জন্য আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু জালিয়াতির সব সীমা পার করে এখন প্রশাসনিক মদতে চলেছে নকল ব্যালট পেপার ছাপানো। যদিও আদালতে প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ রাজ্য সরকার ও কমিশনের কাছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা করেছে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment