Salim on Modi Mamata meeting

রাজ্যের বকেয়া নয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক বৈঠক করেছেন মমতা : সেলিম

জাতীয় রাজ্য

‘‘রাজ্যের বকেয়া নয়, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজনৈতিক বৈঠক করেছেন মমতা ব্যানার্জি। এর আগেও এমন বৈঠক হয়েছে। তা থেকে রাজ্যের কোন দাবি মানা হয়েছে, কখনও জানানো হয়নি।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বৈঠক প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বুধবার তিনি বলেছেন, ‘‘সব বিরোধীরা যখন সংসদে এবং সংসদের বাইরে এককাট্টা হয়ে লড়ছে, তখনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন মমতা ব্যানার্জি। আসলে মমতা ব্যানার্জি বা তাঁর সাংসদরা প্রকৃত বিরোধী নয়।’’ুধবার মোদীর সঙ্গে মিনিট কুড়ির বৈঠক করেন মমতা। তার আগে, মঙ্গলবার, দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘বিরোধী ঐক্য ভেস্তে দেওয়া যায় কী করে, মমতা থেকে শিখতে হবে।’’এদিন কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সাথে ১০০ দিনের বকেয়া টাকা নিয়ে বৈঠক করে তৃণমূল সাংসদদের ব্যর্থতাও প্রমাণ করলেন মমতা ব্যানার্জি। তাঁরা টাকা নিতে পারেন, আর সব করতে পারেন, রাজ্যের দাবিতে সংসদে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারেন না। তৃণমূলের প্রচার অনুযায়ী, রাজ্যের বকেয়া আদায়ে তাই ‘গার্জিয়ান’কে যেতে হলো।’’সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বলেছিল রাজ্যের টাকা আদায় করে আনব। এখানে বাঘ আর দিল্লিতে গিয়ে বেড়াল! চুপিচুপি বৈঠক করে টাকার দাবি জানাতে হলো!’’ আন্দোলনের সময়েই মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠকের যে উদাহরণ অতীতেও থেকেছে মনে করিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, দেশের সংসদ থেকে ১৪০’র বেশি সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে সারা দেশে বিরোধীরা সরব এখন।  
সেলিম বলেন, ‘‘২০২০ সালে যখন গোটা শহর এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক মোদী’ স্লোগান তুলেছিল তখন তৃণমূল নেত্রী রাজভবনে গিয়ে চুপি চুপি দেখা করে এসেছিলেন। তারপর বাইরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন টাকা আটকে রেখেছে, তাই বলতে গিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত কোনও হিসাব দিতে পারেনি কত টাকা বৈঠক করে আদায় করা গিয়েছে।’’
এদিনও সেলিম কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’পক্ষের কাছেই রাজ্যের বকেয়া এবং বরাদ্দ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা হয়েছে দুই সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ দিনের টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু তা হয়নি। সেলিম বলেন, ‘‘আমরা বলছি কতো টাকা বাকি বলুক আমরা দিল্লি যাবো গিয়ে লড়াই করবো রাজ্যের টাকার জন্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সাহস নেই বলার যে কতো এলো, কতো খেলো আর কতো দিলো। তেমনি বিজেপি-ও জানাচ্ছে না কত টাকা রাজ্যকে পাঠানো হলো।’’

বুধবার রাজ্যের ১০০ দিনের বকেয়া টাকা নিয়ে নতুন সংসদ ভবনে দলের একাধিক সাংসদকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রায় ২০ মিনিট বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বকেয়া টাকা দেওয়ার জন্য এই বৈঠক। সূত্রের খবর, কেন্দ্র এবং রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গড়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কমিটি গোটা বিষয় খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে এই বিষয়।
উল্লেখ্য ১০০ দিনের বকেয়া টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানি করছে কেন্দ্র এবং রাজ্য। একাধিক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্য এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ১০০ দিনের টাকা লুঠ হয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই নিয়ে দিল্লি অভিযান করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দুই সরকার কোন হিসাব দেখাতে পারেনি। কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল টাকা বেনিয়মের দাবি তুললেও আইন অনুযায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বা নেতাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগও দায়ের করা হয়নি। বরং, রাজ্যের মানুষের পাওনা বন্ধ করেছে বিজেপি সরকার। বামফ্রন্ট এই সিদ্ধান্তকে নির্মম আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদে শামিল।
সেলিম বলেন, ‘‘এটা কোন প্রশাসনিক বৈঠক নয়। গিয়েছেন রাজনৈতিক বৈঠক করতে। এই বৈঠক যদি প্রশাসনিক বৈঠক হতো তবে দুই সরকারের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীরা থাকতেন, সচিবরা থাকতেন। এদিন তাদের মধ্যে থেকে কেউ ছিলেন না।’’

Comments :0

Login to leave a comment