FARMER DISTRESS

'বীজের কালোবাজারি হবে’, মানছেন তৃণমূল নেতারা

রাজ্য

FARMER DISTRESS POTATO FARMER WEST BENGAL AGRARIAN CRISIS BENGALI NEWS

শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান


‘‘আমিই বুঝতে পারছি না কী করব, কোথায় যাবো, কাকে বলবো। গ্রামের মানুষকে আমি কী বোঝাবো?’’ মহম্মদ আয়ুব নবি মল্লিকের গলায় হতাশা, আক্ষেপ।
মহম্মদ আয়ুব নবি মল্লিক পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। মেমারি-২নং ব্লকের বীজপুর-২ পঞ্চায়েতে তিনি তৃণমূলের নেতা। সেই তাঁর আড়াই বিঘা জমি জলের তলায়। আলুর বীজ লাগিয়েছিলেন। সব শেষ। এবার কী হবে? তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো। উপপ্রধান আয়ুব নবি মল্লিক বললেন,‘‘জমিতে যে সার দিয়েছিলাম, তাতে অন্য কোনও ফসল হবে না। আলুই করতে হবে। আর কোনও পথ নেই। কিন্তু বীজ লাগবে। বীজ কোথায় পাবো? এবার তো কালোবাজারি হবে বীজের।’’
বীজের কালোবাজারি হবে নিশ্চিত এই তৃণমূল নেতা। তাঁর আরও আক্ষেপ,‘‘সবার তো শস্যবিমা নেই। আমারই নেই। করা হয়নি।’’ কেন শস্যবিমা করেননি? তৃণমূলের নেতা বললেন,‘‘যা ক্ষতি হয়, তা পাওয়া যায় না। লাভ কী শস্যবিমা করে।’’ অথচ এই শস্যবিমা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সভায় সভায় গর্ব করে বেড়ান। এবারে প্রশ্ন — আপনার দল সরকারে। পঞ্চায়েতে। আপনারই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে গরিব কৃষকদের হাল কী? বীজপুর-২নং-র উপপ্রধান বললেন,‘‘এডিও-কে বলেছি। দেখি কী হয়।’’
পঞ্চায়েতের কোনও ভূমিকাই নেই মমতা ব্যানার্জির শাসনে। অথচ বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিপর্যয়ে, বিপদে সবার আগে পাশে এসে দাঁড়াত পঞ্চায়েত। এখন তাই ছোট কৃষক স্বরূপ দে’র কান্না ছাড়া কোনও সহায় নেই। স্বরূপ দে’র নিজের ২বিঘে জমি। চুক্তিতে ৫বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। সেই জমি এখন জলের তলায়। তাঁর কথায়, ‘‘চুক্তিতে যে ধান চাষ করেছিলাম তার অর্ধেক ফসল জলে ডুবে আছে। তুলতে পারিনি। মহাজনের কাছে ৫০ হাজার টাকার বেশি দেনা। আলু বীজ সব মরে গেছে। কীভাবে ফের চাষ করব?’’ 
এর উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। ইতিমধ্যেই আত্মঘাতী হয়েছেন পূর্বস্থলীর থানার নিমদহ পঞ্চায়েতের ছাতনি উত্তর পাড়ার রূপ সনাতন ঘোষ (৪৫)। তাঁর আলুর জমিও জলের তলায়। সেই দৃশ্য ও ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। 
বেগুটের কৃষক কল্যাণ হাজরা বলেছেন,‘‘কয়েকদিন আগে যে আলু বীজ ১৭০০-২০০০ টাকায় নেবার লোক ছিল না সেই আলু বীজ এক লাফে ডবল হয়ে পড়েছে। সারও মিলছে না। একে মাথা ব্যথা ফসলের ক্ষতি। আর এক দুশ্চিন্তা নতুন বীজ কোথায় পাওয়া যাবে।’’ শনিবার মেমারি সহ জামালপুরে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আলুর বীজ মেলেনি। যা পাওয়া যাচ্ছে সেকেন্ড কাট আলু বীজ, পাঞ্জাব বীজ বলে অনেক জায়গাতেই কৃষককে ঠকাচ্ছে মহাজনরা। দামও চাইছে দ্বিগুণ। বীজ, সার, ট্রাক্টর, খেতমজুরের মজুরি এ সব দেনা করে মিটিয়েছেন কৃষক। এখন তাঁদের হাত ফাঁকা। তাই ফের হাত পাততে হচ্ছে মহাজনের কাছে আরও চড়া সুদে। 
মেমারির আরও এক গ্রাম গন্তার। এই গ্রামে বিশাল সমবায় লুট করেছে শাসকদলের বিধায়কের নেতৃত্বে তৃণমূলের মাতব্বর’রা। গ্রামের কৃষক তপন পাল, পার্থ ঘোষ, মিঠু ঘোষরা বলেছেন — ‘‘সমবায় আর নেই। কার কাছে ঋণ, সার, আলুবীজ পাবো?’’ বামফ্রন্টের সময়ে কৃষকরা জেলার প্রায় ৫০০ কাছাকাছি সমবায় প্রতিষ্ঠান থেকে সুলভে সার, বীজ, কীটনাশক ও কম সুদে ঋণ পেতেন। এখন সেই সমবায়গুলির অধিকাংশ শাসকদল লুট করেছে ফলে কৃষকের জন্য সেখানে দরজা বন্ধ। 
প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার বলেছেন, ‘‘কৃষকের যা ক্ষতি হয়েছে  তা সরকারকেই পূরণ করতে হবে। বিঘে প্রতি আলুতে ২০হাজার ও ধানে, সবজিতে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মাঠে নেমে প্রকৃত কৃষককে চিহ্নিত করতে হবে। ভাগচাষি, চুক্তিতে চাষ করেছেন যে কৃষকরা তাঁরা যেন বাদ না পড়েন সেটা দেখতে হবে সরকারকে।’’ সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক সমর ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘রায়না, খণ্ডঘোষ, সদর-১, মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোট, ভাতার, গলসী এলাকার কৃষকরা ধান মাঠ থেকে তুলতে পারেননি। তাঁদেরও ক্ষতি মারাত্মক। তেমনই মেমারি, জামালপুর সহ আলুচাষের এলাকায় আলুর ক্ষতি হয়েছে বড় ধরনের। এখন প্রশ্ন নতুন করে আলু চাষ করতে হলে কৃষক বীজ পাবে কোথায়?"। 

Comments :0

Login to leave a comment