দলিতদের ওপরে ক্রমবর্ধমান আক্রমণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানালো জাতীয় কনভেনশন। দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চ, সারা ভারত দলিত অধিকার আন্দোলন, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, ভারতীয় খেতমজদুর ইউনিয়ন, সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ শ্রমজীবী সংগঠন শনিবার মিলিতভাবে দিল্লিতে এই কনভেনশনের আয়োজন করে।
এদিন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সাফাইকর্মী আন্দোলনের নেতা বেজওয়াদা উইলসন। তিনি বলেন, এই সময়ের কর্তব্য দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তোলা। যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে, ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি ছড়ানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চের সহ সভানেত্রী সুভাষিনী আলি। কনভেনশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অস্পৃশ্যতা রয়ে গেছে। দলিতদের বিরুদ্ধে সমস্ত রকমের বৈষম্য বাড়ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রে ও কয়েকটি রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন হবার পর থেকে এই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি বেড়েছে। বিজেপি আরএসএস নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল। তারা মনুস্মৃতি ও বর্ণাশ্রমে বিশ্বাস করে। এর ফলে জাতপাতের নামে নিপীড়ন বৈধতা পায়।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারি তথ্যেই স্পষ্ট দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও অধিকাংশ ঘটনাই নথিভুক্ত হয় না। দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ২০১১-তে ছিল ৩৩,৭১৯, তা ২০২০-তে বেড়ে হয়েছে ৫০,২৯১। উদ্বেগের বিষয় হলো দলিতদের ওপরে অত্যাচার নিরোধক আইন (পিওএ) ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিচার ছাড়া পড়ে আছে। দলিতদের কোথাও পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, কোথাও উচ্চবর্ণের শিক্ষকের কলসী থেকে জল খাবার অপরাধে মেরে ফেলা হচ্ছে, বিয়ের শোভাযাত্রায় ঘোড়া চড়ার জন্য খুন হতে হচ্ছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ৩৪৭ জন নিকাশি কর্মী বর্জ্য পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। দলিতদের জন্য ভদ্র চাকরির ব্যবস্থা নেই। ক্লাস থ্রি ও ক্লাস ফোর স্তরের কিছু কাজ পেলেও সরকারি কাজের উচ্চপদে মাত্র ৪ শতাংশ দলিত। দলিতদের মধ্যে বেকারি বাড়ছে।
কনভেনশন থেকে বিশেষ করে নজর করানো হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২০-র মধ্যে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন দেশে ১০ জন দলিত মহিলা ধর্ষিত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষকরা নির্যাতিতাকে খুনও করছে। জাতীয় পরিবার সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, রক্তাল্পতায় ভোগা মহিলাদের ৫৫.৯ শতাংশ দলিত। দলিত মহিলারা কাজও পান না, পেলেও কম মজুরি পান। অনেকেই ব্যক্তিগত বাড়ি, অফিস, কারখানা, হাসপাতালে নিকাশি শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। স্কিম কর্মী হিসাবে কম ভাতায় কাজ করেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে তরুণ দলিতরা ভয়ঙ্কর বঞ্চনার শিকার হয়। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে তাদের আলাদা খেতে হয়। এমনকি আইআইটি, মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও দলিত ছাত্ররা বঞ্চনার শিকার হন। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। নতুন শিক্ষানীতি দলিতদের শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া আরও কঠিন করে তুলবে। এই শিক্ষানীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে বেসরকারিকরণে। ইতিমধ্যে গ্রামীণ এলাকায় শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কনভেনশন বলেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ধ্বংস, ঠিকা কাজ দলিতদের জন্য কাজে সংরক্ষণকে গল্পকথায় পরিণত করেছে। উচ্চতর পদে সরকার সরাসরি নিয়োগ শুরু করায় সংরক্ষণের ব্যবস্থাই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র রক্ষা, ঠিকাকরণের বিরোধিতা, বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য লড়াই একসঙ্গেই করতে হবে।
কনভেনশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২১-র হিসাব অনুযায়ী দারিদ্র সবচেয়ে বেশি তফসিলি আদিবাসীদের মধ্যে (৫০.৬%), এর পরেই তফসিলিদের মধ্যে (৩৩.৩%)। ২০১৮-১৯’র হিসাবেও দেখা যাচ্ছে ৮০ শতাংশ দলিতের কোনও জমি নেই, মোট জমির ৯.৫ শতাংশ তফসিলি জাতিভুক্তদের। মোদী সরকার জোর করে জমি দখল করতে রাজ্য সরকারগুলিকে উৎসাহিত করছে। জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে।
এদিন কনভেনশন পরিচালনা করেন রামচন্দ্র ডোম, রাম মূর্তি, বি বেঙ্কট, দেবী সিং, শ্রী রাম চৌধুরি। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএসএমএম’র জাতীয় সভাপতি রাধা কৃষ্ণান, চিত্তায়াম গোপাকুমার, বিক্রম সিং প্রমুখ।
কনভেনশন থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে মনুবাদী, নয়া উদারবাদী, সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। জাতভিত্তিক জনগণনা রূপায়নের দাবিও তোলা হয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যভিত্তিক কনভেনশন, বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।
DALIT CONVENTION
দলিতদের ওপরে আক্রমণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান
×
Comments :0