Paersh rawal speech

পরেশ রাওয়ালের বিদ্বেষ-ভাষণে প্রবল ক্ষোভ দেশজুড়ে

জাতীয়

‘‘গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী হবে? বাঙালির জন্য মাছ ভাজবেন নাকি?’’ মঙ্গলবার গুজরাটের ভালসাদে বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচারে হাততালি কুড়োতে এমনই ঘৃণ্য মন্তব্য করেছেন সেদলের প্রাক্তন সাংসদ-অভিনেতা পরেশ রাওয়াল। মোদী-রাজত্বে গ্যাস সিলিন্ডারের আকাশছোঁয়া দাম এবং বেকারত্বকে হালকা করে দিতে তাঁর এই মন্তব্যে হাততালির বদলে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বাধ্য হয়ে বুধবার তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু সরাসরি ক্ষমা চাননি। উলটে উদ্বাস্তু সমস্যাকে উসকে দিয়েছেন। টুইটারে লিখেছেন, বাঙালি বলতে তিনি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশ থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের বোঝাতে চেয়েছেন। তবু যদি কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি ক্ষমা চাইছেন। তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তাঁকে। 
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শুক্রবার কলকাতায় পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। অভিযোগ করেছেন, রাওয়াল ঘৃণা ছড়াচ্ছেন এবং দাঙ্গায় মদত দিচ্ছেন। নেটিজেনদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মাছ খাওয়ার জন্য প্রকাশ্যে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন পরেশ রাওয়াল, এরপরেও কেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না?’’


গুজরাটে প্রথম দফার ভোট হয়েছে বৃহস্পতিবার। শেষ দফার ভোট সোমবার। তার আগে বৃহস্পতিবারই ভালসাদে জনসভার আয়োজন করে বিজেপি। অভিনয় জগতে পরিচিত মুখ পরেশ রাওয়ালকে মঞ্চে তুলে ফায়দা নিতে গিয়ে শেষপর্যন্ত বিপাকেই পড়েছে তারা। দেশজুড়ে এবং বিশেষ করে গুজরাটের ভোট প্রচারে বিরোধীরা বারবারই বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের লাগামছাড়া দাম নিয়ে বিজেপি’কে তুলোধোনা করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে খেলো করে দিতে রাওয়াল বলেন, ‘‘গ্যাস সিলিন্ডারের অনেক দাম ঠিকই। কিন্তু কাল দাম কমে যেতেই পারে। দেশের মানুষজনের কর্মসংস্থানও হবে নিশ্চিত। কিন্তু যদি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীরা আপনার পাশে থাকতে শুরু করেন, দিল্লির মতো, তাহলে কী হবে? তখন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী করবেন? বাঙালিদের জন্য মাছ রাঁধবেন?’’ এই জনসভার ভিডিও ভাইরাল হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বঙ্গভাষীরা। সোশাল মিডিয়ায় বিজেপি’র এই প্রাক্তন সাংসদকে একহাত নেন তাঁরা। প্রবল সমালোচনার পরে সাফাই দিতে গিয়ে রাওয়াল লেখেন, ‘‘মাছ নিয়ে কিছু বলিনি। গুজরাটের লোকজনও মাছ রান্না করে খায়।’’ 


রাওয়ালের সাফাইয়ের জবাবে নেটিজেনদের একাংশ বলেন, ‘‘ও তাই? বাঙালি মানেই বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা? তাহলে পাঞ্জাবিরাও খালিস্তানি? ২০১৪ সালের আগে কখনই বাঙালিদের বাংলাদেশি বা পাঞ্জাবিদের খালিস্তানি বলে সম্বোধন করা হতো না। মুসলিমদেরও পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলা হতো না। ধর্মান্ধতা চরমে পৌঁছেছে।’’ রাওয়ালের টুইটের নিচেই একজন বলেন, ‘‘আপনাকে আপনার মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতেই হবে।’’ আরেক নেটিজেন, কৌতুক দৃশ্যে অভিনীত পরেশ রাওয়ালের মুখভঙ্গির ছবি পোস্ট করে পয়েন্ট করে-করে লেখেন, ‘‘আমরা বাঙালিরা মাছ ভালোবাসি। সব বাঙালিই রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি নন। বাংলার বাঙালিরাও ভারতেরই নাগরিক। কিন্তু পরেশ রাওয়াল, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি আবার বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি বাঙালিদের ঠিক কতটা ঘৃণা করে।’’ মাছ খাওয়ার জন্য বিজেপি বাঙালির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে বলেও সরব হন নেটিজেনদের একাংশ। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন এখনও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রতিবাদ করছেন না?’’ সংবিধানের প্রস্তাবনা তুলে ধরে আরেকজন লেখেন, ‘‘উই দ্য পিপল মানে শুধু হিন্দিভাষী মানুষজন নন। বাঙালি, তামিল, মারাঠি, কন্নড় সহ সমস্ত ভাষাভাষির মানুষই এই ‘উই’-এর মধ্যে আছেন।’’ 


চাপে পড়ে বিজেপি তাদের চিরাচরিত কৌশল নিয়ে ময়দানে নেমে পড়ে। পাঁচ বছরের পুরানো ভিডিও ভাইরাল করে আইটি সেলের লোকজন ছড়িয়ে দেয়, রাওয়াল ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। যদিও ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট বুম জানিয়েছে, এই ভিডিও ২০১৭ সালের। এক মিনিটের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল ক্ষুব্ধ যুবক পরেশ রাওয়ালের সঙ্গে তর্ক করছেন এবং ক্ষমা চাওয়ার জন্য জোর করছেন। গুজরাটের মানুষজন ক্ষোভের সঙ্গে পরেশ রাওয়ালকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করছেন বলেও তুলে ধরা হয় ওই ভিডিও’তে।
 

Comments :0

Login to leave a comment