RSP Conference

আরএসপি’র সম্মেলনে বললেন ইয়েচুরি
শুধু নির্বাচনে পরাস্ত করা নয়, বিচ্ছিন্ন করতে হবে বিজেপি’কে

জাতীয়

RSP Conference

হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে মতাদর্শগতভাবেই। আরএসপি’র সর্বভারতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছেন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার সম্মেলনের প্রথম দিনে সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআই (এম-এল) নেতা রবি রায় এবং কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও বক্তব্য রাখেন। সীতারাম ইয়েচুরি আরএসপি’র প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানান এবং সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন সিপিআই (এম)’র পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, কেরালার ভিন্ন পরিস্থিতির কথা বাদ দিলে বাকি দেশে আরএসপি বামফ্রন্টেরই অংশ। গুরুত্বপূর্ণ বামপন্থী সঙ্গী। তিনি বলেন, দেশকে রক্ষা করতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনে পরাস্ত করা নয়, বিজেপি’কে বিচ্ছিন্ন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে আক্রমণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইয়েচুরি বলেন, বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে শাসক শ্রেণির হাতে। আমাদের দেশেও জরুরি অবস্থার সময়ে আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রের উপরে যে আক্রমণ চলছে তার গুণগত পার্থক্য আছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে এনে ইয়েচুরি বলেন, এক শতাব্দী ধরে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গির মতাদর্শগত লড়াই চলেছে। প্রথমটি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। কংগ্রেসের বক্তব্য ছিল, ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসাবে গড়ে তোলার। এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েও আমরা বামপন্থীরা থেমে যাইনি। আমাদের বক্তব্য ছিল এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিকে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা ব্রিটিশের থেকে পেয়েছি, কিন্তু তাকে ভারতের প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় পরিণত করতে হবে। সেটা একমাত্র সম্ভব হবে সমাজতন্ত্রে পৌঁছাতে পারেলে। আর তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি ছিল দেশ হবে ধর্মীয় পরিচয় ভিত্তিক। একদলের বক্তব্য ছিল হিন্দুত্ববাদী হবে দেশ। অন্য অংশের বক্তব্য ছিল মুসলিম ধর্মীয় পরিচয়ভিত্তিক। ইয়েচুরি বলেন, স্বাধীনতার পরে যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র গড়ে উঠল, তাকে এখন অতি দ্রুতবেগে অসহিষ্ণু, ফ্যাসিস্তধর্মী, হিন্দুত্বের রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। 
ইয়েচুরি বলেন, আজকে আমরা যা দেখছি, সেটা শুধু গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ নয়। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা। গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করা। এই কাজ একমাত্র সম্ভব হবে যদি ভারতীয় সংবিধানকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা যায়, সংবিধান বর্ণিত সমস্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যায়। ইয়েচুরি বলেন, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়— সংবিধানের প্রতিটি স্তম্ভ আক্রান্ত। এই আক্রমণ করা হচ্ছে আইনের মাধ্যমে। প্রতিটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই কাজ করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নির্দিষ্ট করে আক্রমণ করা হচ্ছে। আইনের ঢাল তৈরি করে এই আক্রমণ করা বিজেপি শাসিত সরকারগুলির অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়েচুরি বলেন, এই প্রথমবার দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী রামমন্দির নির্মাণের নেতৃত্ব দিতে গেলেন অযোধ্যায়। নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণের সূচনাও করা হলো হিন্দু ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে। অন্যান্য সমস্ত জায়গায় প্রধানমন্ত্রী একইভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে চলেছেন। এইসব করে এই বার্তা তিনি দিতে চাইছেন যে, ধর্ম এবং রাষ্ট্রের কোনও পার্থক্য নেই। বর্তমান ভারত একটি হিন্দুত্ব রাষ্ট্র। তিনি বলেন, সংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠবাদীদের দখলে। কোনও আলোচনা, জবাব দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের দখল নেওয়ার চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সিবিআই, ইডিকে রাজনৈতিক এজেন্টের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসারিত রাজনৈতিক সংস্থার মতো ব্যবহার করা হচ্ছে রাজ্যপালদের। কর্পোরেট-কমিউনাল আঁতাতের কথাও তুলে ধরেন ইয়েচুরি। 
জীবন জীবিকার বিবিধ প্রশ্নে লড়াই চললেও হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির লড়াইকেও সমানতালে করতে হবে বামপন্থীদের। তিনি বলেন, দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ লাল পতাকার তলায় লড়াই করছেন। লাঠি খাচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন। মিথ্যা মামলার মুখে পড়ছেন। কৃষক আন্দোলন ঐতিহাসিক পর্যায়ের পৌঁছেছে। কিন্তু ভোটে জিতছে বিজেপি। কেন এই ঘটনা ঘটছে বামপন্থী দলগুলিকে তা উপলব্ধি করা প্রয়োজন, হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্র করতে গেলে। যুক্তি এবং বিচারবুদ্ধির উপরে যে আদর্শগত আক্রমণ হিন্দুত্ববাদীরা নামিয়ে এনেছে তাকে মোকাবিলা করতে হবে। টিভি সিরিয়াল, সোসাল মিডিয়া, বলিউডের উপরে চাপ দিয়ে এমন সিনেমা বানানো হচ্ছে যা সরাসরি যুক্তি এবং বিচারবুদ্ধির উপরে আক্রমণ নামিয়ে আনছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভোট প্রচারে হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ভারতের জনতা ক্ষুধার্ত থাকবে কিন্তু আস্থাকে কখনও ছাড়বে না। অর্থাৎ এদের নীতিতে খিদে, বেকারি বাড়বে। আর ভোটের সময়ে এসে এরা আস্থা-বিশ্বাসের কথা শোনাবে। তাই হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে মতাদর্শগত লড়াই করতে হবে। সেই কারণেই শুধু বিজেপি’কে নির্বাচনে পরাস্ত করলেই হবে না, বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সেটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।  
রবিবার সম্মেলনের শেষ দিনে ৫৩ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। এদের মধ্যে ২৩ জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে, ২০ জন কেরালা থেকে রয়েছেন। মনোজ ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।  

Comments :0

Login to leave a comment