CPI(M) Protests Rally

ভুয়ো ভোটার বাতিল, পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে বারাসতে মিছিল

রাজ্য জেলা

ছবি- সৌদীপ দাস।

বামফ্রন্টের সময় প্রতিবছর যেমন দুর্গাপূজা হতো তেমন এসএসসি পরীক্ষাও হতো। যেমন প্রতিবছর যেমন ঈদ হতো তেমনি টেট পরীক্ষা হতো। লেখাপড়া জানা শহর গ্রামের ছেলে মেয়েরা উৎসাহ নিয়ে পড়াশুনা করতো। জানতো লেখাপড়া শেষে চাকুরি নিশ্চিত। এটাই ছিল অতীতের পশ্চিমবঙ্গ। সেই সময় সরকার চেয়েছিল তাই স্বচ্ছ নিযোগ হয়েছিল। এখন টিভি’র সান্ধ্যকালীন আলোচনা সভাতে উঠে এসেছে বামফ্রন্টের আমলে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ হয়েছিল। বারাসত ২৮ নং ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলার তাঁর পরিচিতি পত্রে লিখছেন আমি শিক্ষিকা ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করেছিলাম। শুক্রবার বারাসতে এক বিক্ষোভ সভায় একথা বলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। এদিন সিপিআই(এম) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির আহ্বানে ভোটার তালিকা থেকে মৃত এবং ভুয়ো ভোটার  বাতিলের দাবিতে জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সভা হয়। বিক্ষোভ সভা শেষে এদিন জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে থেকে যোগ্য শিক্ষকদের চাকুরি কেড়ে তাদের ওপর পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে মিছিল হয়। মিছিল জেলা শাসক, জেলা বিচারপতির বাংলোর পাশ দিয়ে যশোর রোডের ওপর দিয়ে চাপাডালির মোড়ে অবরোধ করে বারাসত ব্রীজের কাছে শেষ হয়েছে। 
উত্তর ২৪ পরগনার ভোটার তালিকা থেকে মৃত এবং ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া এবং স্বচ্ছ ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এদিন অবস্থান বিক্ষোভ সভা থেকে জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দিতে যান সিপিআই(এম) নেতা গার্গী চাটার্জি, সায়নদীপ মিত্র, আত্রেয়ী গুহ, সত্যসেবী কর ও রাজু আহমেদ। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন ও প্রতিবাদী মিছিলে পা মেলান সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই(এম) জেলা কমিটির সম্পাদক পলাশ দাশ, সোমনাথ ভট্টাচার্য, মানস মুখার্জি, আহমেদ আলি খান, দেবশংকর রায়চৌধুরী, ঝন্টু মজুমদারসহ জেলা ও এরিয়া কমিটির নেতা ও কর্মী সহ সাধারণ মানুষ।  বিক্ষোভ সভায় সভাপতি ছিলেন নিরাপদ সরদার। 
এদিন সুজন চক্রবর্তী বলেন, ভোটার লিষ্টে ব্যপক কারচুপির কারণে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের ভোটের প্রতিফলন ঘটছে না। ভোটার তালিকা তৈরির সময় থেকে ভোটের দিন , গণনার সময় এমনকি জয়ী প্রার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়ার সময়ও কারচুপি চলেছে। অনেকক্ষেত্রে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পৌরসভা এমনকি বিধানসভা নির্বাচনেও কোথাও পুলিশের সহযোগিতায় বিরোধী দলের বিশেষ করে বামপন্থী প্রার্থী ও কর্মীদের ভয় দেখিয়ে মারধর করে ভোট গননা কেন্দ্র থেকে বার করে দেয় শাসক দলের নেতা কর্মীরা। আবার এমনও দেখা গেছে ভোট হওয়ার শেষে নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা করা হলো ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ। পরের দিন তা পাল্টে হয়ে গেছে ৭৬ শতাংশ। এমনই কারচুপির ভোট মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোটে ধরা পড়েছে। এমনই কারচুপির ভোট রাজ্যের শাসক দল ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার করে চলেছে। এর বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন কে বুথ স্তরে নিয়ে যেতে হবে। 
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বিধানসভায় আমরা দাবি করেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার প্যানেল  ও এম আর শিট প্রকাশ করার। কিন্তু রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রী একটি টেলিভিশনের সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, আমার কোটার চাকরি আমি আমার দলের ছেলেদের দেব তাতে কার কি। তৃণমূলের মুখোপাত্র টিভি সাক্ষাৎকারে জানালেন, পার্থ চাটার্জি এস এস সি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন এটা দলের সকলেই জানতেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ১২ বার বিধানসভায় শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আমাদের তোলা প্রশ্নকে গুরুত্ব দেননি। এখন পরিস্কার মেধার ভিত্তিতে নিয়োগকে কলুষিত করতে তিনি তৃণমূল নেতাদের সাদা খাতা জমা দেওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিতে উৎসাহিত করেছিলেন। সেই সময় বিধানসভায় এসএসসি প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে যারা বেশি চেঁচিয়েছিলেন তারা হয় আজ জেলে নয় বিরোধীদলে। এসএসসি দুর্নীতির প্রশ্নে যার টাকা খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যেমন আন্দোলন করতে হবে তেমনই যারা যোগ্য মেধা সম্পন্ন চাকরিহারা তাদের রক্ষা করতে হবে। পলাশ দাশ বলেন, ভোটার তালিকা থেকে ভুতুরে ভোটার বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রশাসনকে প্রকাশ করার দাবি নিয়ে এদিনের ডেপুটেশন অবস্থান বিক্ষোভে দেখা গেছে , একই বুথের ভোটার তালিকায় একই ভোটারের নাম দুজায়গায়, শুধু বাবার নাম আলাদা। এমন হাজারো ত্রুটি আমরা খুঁজে পেয়েছি। আমাদের পার্টির তরফ থেকে জেলাজুড়ে এক সমীক্ষায় যা আমাদের নেতা ও কর্মীরা খুঁজে বের করেছেন, তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, জেলার ২৮টি বিধানসভার মধ্যে আপাতত ২২টি বিধানসভার ভোটার লিষ্টে ৩৭ হাজার ৪৯২টি ভুয়ো ও মৃত ভোটারের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার তথ্য একটি পেন ড্রাইফের মধ্যে আমাদের প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন। আমরা খুঁজে পেয়েছি এই ৩৭ হাজার ৪৯২টি ভোটারের মধ্যে ৩০ হাজার ২৫৬ জন মৃত। এলাকায় ছিলেন কিন্তু বর্তমানে অন্যত্র চলে গেছেন এমন ভোটারের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৯ জন। এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এমন ভোটারের সংখ্যা ৮১২ এবং একই ব্যাক্তির বিভিন্ন স্থানে নাম আছে এমন সংখ্যা ৩৬৫টি।

Comments :0

Login to leave a comment