অবৈধ প্রার্থীদের শূন্যপদে নিয়োগের আবেদন এসএসসি কার নির্দেশে করেছে? কার মস্তিস্কপ্রসূত এই আবেদন? বুধবার এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘এটা একটা সংগঠিত অপরাধ।
যোগ্য প্রার্থীরা রাস্তায় রয়েছেন, অথচ অযোগ্যদের নিয়োগ!’’ কে বা কারা এই অবৈধ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন তা খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এই আবেদন কে করেছে তা জানাতে বৃহস্পতিবার সকালেই আদালতে হাজির হতে বলেছেন শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মনীশ জৈনকে। এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, সাতদিনের মধ্যে সিবিআই’কে এই আবেদনকারীর হদিশ দিতে হবে।
এদিন আদালত মন্তব্য করেছে, বৈধ প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে অবৈধদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই আবেদন স্কুল সার্ভিস কমিশন করেছে? কমিশনের আইনজীবীর কাছে এই প্রশ্ন করেন বিচারপতি। এই প্রশ্নের কোনও লিখিত প্রমাণ কমিশনের আইনজীবী আদালতে দিতে পারেননি। এরপরেই বিচারপতি জানতে চান, কমিশনকে সামনে রেখে কার নির্দেশে শূন্যপদে অবৈধদের নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে? এই আবেদন কে করেছে তা সিবিআই’কে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।
এসএসসি’র গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ, নবম, দশম এবং একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদে বেআইনি নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি করছেন তাঁদের চাকরি ছেড়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এবার এসএসসি’র তরফে এই চারটি বিভাগে নিয়োগের বৈধতা দেবার জন্য চারটি আবেদন জমা পড়ে।
তারপরেই আদালতে প্রশ্ন ওঠে, এই আবেদন কে করেছে? কমিশন এদিন এই আবেদন প্রত্যাহার করতে চেয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এই আবেদন প্রত্যাহার করা যাবে না। আদালতের নির্দেশেই এই প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ হলো বলে জানানো হয়েছে।
এদিন আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, এই আবেদন কমিশনের নামে হলেও একাজ কমিশনের নয়। কেউ এই আবেদন করিয়েছে। এই আবেদনের ব্যাপারে কমিশনের ফাইলে কী রয়েছে তা দেখতে চায় আদালত। এব্যাপারে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় শিক্ষা দপ্তরের সচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এদিন বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী যদি কিছু বলতে চান আদালতে আসতে পারেন। বহিরাগত কেউ এব্যাপারে কিছু বলতে চাইলে তাঁকেও স্বাগত।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তর অতিরিক্ত শূন্যপদে যোগ্য কিন্তু কোনও কারণে বঞ্চিত রয়েছেন, এমন প্রার্থীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সরকারের বক্তব্য সরিয়ে রেখে শূন্যপদে আদালতের নির্দেশে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁদের পুনর্বহালের কথা বলেছে এসএসসি। বুধবারও আদালতে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের অধীনে কী নেই এসএসসি! কারণ এর আগেই শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষায় নিয়োগের জন্য সুপারনিউমারিক পোস্ট তৈরি করার সময় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এই একই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার।
গত ১৯ মে শিক্ষা দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, এসএসসি’র শূন্যপদে নিয়োগের জন্য ৬৮২১ টি অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এই পদগুলিতে নিয়োগ করা হবে মেধা তালিকায় রয়েছেন এমন যোগ্য বাদ পড়া প্রার্থীদের। সেখানে বলা হয়েছিল, শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষক পদে এই নিয়োগ হবে। এরপরও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আদালতের নির্দেশে যাঁদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে তাঁদের পুর্নবহালের আবেদন জানিয়েছে কমিশন। বুধবার বিচারপতি সরাসরি মন্তব্য করেছেন, এই আবেদন কমিশনের নয়। আদালত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কেউ কমিশনকে দিয়ে একাজ করিয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষায় অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু প্রশ্ন তুলেছিলেন অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমারিক পোস্ট) কীভাবে তৈরি হলো তা নিয়েই। রাজ্য সরকারের তরফে এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতকে জানিয়েছিলেন, এসএসসি যেভাবে নতুন অতিরিক্ত পদ তৈরি করেছিল আইনসঙ্গত হয়নি। আইন না মেনেই এই পদ সৃষ্টি করেছে এসএসসি। এই পদ সৃষ্টির ব্যপারে রাজ্য সরকার কিছু জানতো না বলে তিনি আগেই আদালতকে জানিয়েছিলেন। সেদিনও এসএসসি’র আইনজীবী তাঁদের ভুল স্বীকার করে আদালতকে জানিয়েছিলেন, বরখাস্ত হওয়া বা বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে এমন কোনও প্রার্থীকে চাকরি দেবে না স্কুল সার্ভিস কমিশন।
শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ২০১৯ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, এসএসসি কোনও বিধি না মেনে ২০২২ সালে যেভাবে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করেছে আইনসম্মত নয়। দ্রুত চাকরি দেওয়ার নামে আইন মানা হবে না কেন? বেআইনিভাবে চাকরি হলে সেখানে বিপদ থেকেই যাবে।
বুধবার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, অবৈধ চাকরির বৈধতা দেবার জন্য কারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তাঁদের খুঁজে বের করা উচিত। আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, আইন ভেঙে সরকারি নিয়োগ অবৈধ। সেই নিয়োগে বৈধতা দেওয়ার জন্য মামলা। কারা এই মামলা করেছে তা জানতে হবে। এসএসসি বিধি মেনে সরকারি চাকরি দিলে কোনও আইনি সমস্যা তৈরি হবে না। এদিন আদালতে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সহায়তা করেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, বিক্রম ব্যানার্জি।
Comments :0