চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অধোগতি, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের অত্যাচার, সীমাহীন দুর্নীতি সহ একাধিক বিষয়ে ব্যাকফুটে থাকা বিজেপি হিমাচল প্রদেশে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের ভালো দিক নিয়ে ভোট প্রচার চালালেও তাতে চিঁড়ে ভিজছে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে এসে জনসভা করাতে হচ্ছে। আগামী শনিবার হিমাচলে বিধানসভা ভোট। এক সপ্তাহ আগে এই শনিবার কংগ্রেস নির্বাচনী ইশ্তেহার প্রকাশ করে একহাত নিয়েছে বিজেপি’কে। এক লক্ষ চাকরি, বিনামূল্যে তিনশো ইউনিট বিদ্যুতের পাশাপাশি পুরানো পেনশন প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। সেইসঙ্গে কংগ্রেস জিতলে রাজ্যের ১৮ বছরের তরুণী থেকে ৬০ বছরের মহিলা মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতাও পাবেন। ঘোষণা করা হয়েছে সাংবাদিকদের পেনশন। একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম রাজ্যের অটো চালকদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা। কংগ্রেস আরও আশ্বাস দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে রাজ্যের ঘাড়ে বিজেপি যে ঋণের বোঝা চাপিয়েছে, তাও হালকা হবে।
বিজেপি’র ‘ডবল ইঞ্জিন’র প্রচারের মধ্যেই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সপ্তম বেতন কমিশনের পরিমার্জিত বকেয়া মেটায়নি সরকার। প্রায় দু’লক্ষ সরকারি কর্মচারী পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতেও অনড় রয়েছেন। যা হাতিয়ার করেই কংগ্রেস ভোটের ফসল তুলতে চাইছে। কংগ্রেসের ইশ্তেহার কমিটির চেয়ারম্যান ধানিরাম শাণ্ডিল বলেন, ‘‘এটি শুধু ইশ্তেহার নয়। হিমাচল প্রদেশের মানুষদের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য তৈরি একটি নথিপত্র।’’ এদিন কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সমষ্টিগত নেতৃত্বেই ভোটে লড়বে দল। জয়ের পর ঠিক করা হবে কে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন। এদিন ইশ্তেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল সহ কংগ্রেসের অন্যান্য শীর্ষ নেতাও। বাঘেল বলেন, ‘‘রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের সরকার ইতিমধ্যে পুরানো পেনশন প্রকল্প চালুর দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রকে। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি। খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কেন্দ্রকে আমরা চিঠি দেব এবং এই প্রকল্প ফিরিয়ে আনতে আইনি পরামর্শও চাইব।’’ হিমাচলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজীব শুক্লা বলেন, ‘‘সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেই এই ইশ্তেহার তৈরি করা হয়েছে।’’
কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, বিজেপি সরকার এই পাঁচ বছরে কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেনি। রাজ্যের আপেল চাষিরা মারাত্মক দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। কেন্দ্র বিদেশ থেকে আসা আপেলে আমদানি শুল্ক আরোপ না করায় আপেলের দাম কমে যাচ্ছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজ্যের রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। বিজেপি রাজত্বে বিন্দুমাত্র উন্নয়নও হয়নি, এই অভিযোগ করে কংগ্রেস জনগণের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে, ‘‘সাধারণ মানুষ কোন সরকারকে চায়? যারা সুযোগ পেয়েও কোনও কাজ করেনি নাকি যারা অতীতে উন্নয়মনমূলক কাজ করেছে তাদের?’’
বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শশী কুমার সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘বিজেপি ডবল ইঞ্জিন সরকার নিয়ে যতই প্রচার চালাক, ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। রাজ্যের কোনও বিষয়ের সিদ্ধান্ত দিল্লিতে বসেই নেওয়া হবে কি না সেই প্রশ্নও রয়েছে তাঁদের মধ্যে।’’
Congress Manifesto
‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের বড়াই বিজেপি’র, আক্রমণ কংগ্রেসের
×
Comments :0