Editorial 22 January

মোদীর গুজরাট আদানির ভোগ্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হবার আগে গৌতম আদানির নাম কেউ জানতেন না। দেশের অন্যতম শিল্পোন্নত রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মোদীর অভিষেকের পরই দ্রুত পাদপ্রদীপের আলোয় আবির্ভূত হতে থাকেন আদানি। মোদীর অতি ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে সরকারি আনুকূল্যে উল্কা গতিতে বাড়তে থাকে আদানিদের বাণিজ্যের সাম্রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মোদীর কল্যাণে ভারতে শিল্প-বাণিজ্যের আকাশে উদয় হয় নতুন নক্ষত্র। ভারতের কর্পোরেট মহলে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকার করেন তিনি। তারপর থেকে আর আদানিকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মোদীর উত্থানের সঙ্গে সমান্তরালে উত্থান হয় আদানিরও। মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর ‘ভাগ্য’ খুলে যায় তাঁর। তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের বিস্তার, সম্পদ বৃদ্ধি, মুনাফা ইত্যাদি সবই বেড়ে চলে অবিশ্বাস্য গতিতে। দু’দশক আগেও ভারতের ধনী তালিকায় যার নাম সহস্রের ধারে কাছেও ছিল না সেই তিনি প্রতিবছর সম্পদের মালিকানায় উল্লম্ফন দিতে দিতে এখন শুধু ভারতের ধনীতম বা এশিয়ার ধনীতম নন, একেবারে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। ভারতের ইতিহাসে কোনোদিন কোনও ধনিক শ্রেষ্ঠ এত কম সময়ে এমন সীমাহীন সম্পদের মালিক হতে পারেননি। মোদী জমানায় তাঁরই প্রিয় বন্ধু আদানিই সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। এমন অভাবনীয় সাফল্যের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার মোদী হবেন না আদানি হবেন সেই প্রশ্ন আপাতত তোলা থাক। সত্য এটাই মোদীর জমানাতেই এটা সম্ভব হয়েছে।
মোদীর রাজ্য গুজরাটের এক শিল্পপতি যখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্পদের মালিক তখন সেই রাজ্যেই প্রতিদিন গড়ে ৯ জন করে দিন মজুর অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। তেমনি প্রতিবছরই দৈনিক আত্মহননের সংখ্যা বাড়ছে। অর্থাৎ গরিব মানুষের কাজ ও আয়ের সঙ্কট বাড়ছে। রাজ্যের অর্থনীতি যত বাড়ছে, যত বিনিয়োগ বাড়ছে ততই বাড়ছে কর্পোরেট মুনাফা ও বিত্তবানদের সম্পদ। অর্থাৎ যত সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে তার সবটাই জমা হচ্ছে বড়লোকদের ঘরে। গরিবের জন্য প্রায় কিছুই জুটছে না। ধর্মের আফিম আর হিন্দুত্বের উন্মাদনা ছড়িয়ে মোদীরা যত উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্প শোনান না কেন বাস্তবের জমিটা বড় নির্মম। দিনমজুরের ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার ঘটনা তারই লাল সঙ্কেত। মোদীর সরকারের মন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যানই বলছে গত পাঁচ বছরে গুজরাটে দিনমজুরের আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ২০১৭ সালে যে সংখ্যা ছিল ২১৩১ জন ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩২০৬ জন।
প্রশ্ন হলো প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্যের এমন হাল কেন? তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের কালের গুজরাটকে মডেল হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল ভারতের প্রেক্ষাপটে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ভারতকে গুজরাট বানাবেন। তাঁর সেই মডেল গুজরাট এতই উন্নত যে সেখানে গরিব মানুষের কাজ জোটে না। আবার কাজ জুটলেও মজুরি জোটে না। গুজরাট শিল্পোন্নত রাজ্য যেমন তেমনি শ্রম শোষণেও সকলের শীর্ষে। গুজরাটই একমাত্র রাজ্য যেখানে দিনমজুরদের মজুরি সবচেয়ে কম। গরিব মানুষ উদয়াস্ত শ্রম দিলেও মজুরি পান না। যে পরিমাণ মজুরি জোটে তাতে এক বেলার খাবারও হয় না। কেরালায় যেখানে একজন দিনমজুর মজুরি পান ৮৩৭ টাকা সেখানে মোদীর গুজরাটে ২৯৫ টাকা। বিহারের মতো অনুন্নত গরিব রাজ্যেও গুজরাট থেকে মজুরি বেশি। আসলে মোদী উন্নয়ন মডেল আদানি-আম্বানিদের জন্য। সাধারণ মানুষের সেখানে কোনও জায়গা নেই। কর্মপ্রার্থী বাড়ে কিন্তু কাজের সুযোগ বাড়ে না। জীবন-জীবিকার খরচ বাড়ে কিন্তু মজুরি বাড়ে না। জিনিসের দাম বাড়ে কিন্তু আয় বাড়ে না। কর্পোরেট কর কমে কিন্তু সাধারণ মানুষের ঘাড়ে করের বোঝা বাড়ে।

Comments :0

Login to leave a comment