Junior Doctors

পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফের জুনিয়র ডাক্তাররা

রাজ্য

পূর্ণ কর্মবিরতিতেই ফিরছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘ বিবৃতিতে দাবি না মেটার বিভিন্ন নজির নির্দিষ্ট করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তাঁরা। 

উল্লেখ করেছেন বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার। ৯ আগস্ট আরজিকর হাসপাতালে ছাত্রীর দেহ মিলেছিল। ৫২ দিন কেটে যাওয়ার পরেও বিচার মেলেনি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্তে ঢিলেমির। রাজ্যে অতীতে একাধিক ঘটনায় সিবিআই তদন্তে কিনারা না হওয়ার উল্লেখও করা হয়েছে।

দশ দফা দাবি রাখা হয়েছে জুনিয়ার ডাক্তারদের পক্ষ থেকে। 

১. স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

 

২. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অবিলম্বে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

 

৩. রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় ভাবে রেফারেলব্যবস্থা চালু করতে হবে।

 

৪. প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, তা জানানোর জন্য একটি করে ডিজিটাল মনিটর রাখতে হবে।

 

৫. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।

 

৬. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের রাখতে হবে দায়িত্বে। নিরাপত্তার জন্য রাখতে হবে মহিলা পুলিশকর্মীদেরও।

 

৭. হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

৮. বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ের রাজনীতিচালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যস্তরেও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে।

 

৯. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজগুলির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি কমিটিতে চিকিৎসক পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

 

১০. পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।

 

উল্লেখ্য আর জি করের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মামলার শুনানি পিছানো হয়েছে। সোমবার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুনানির সময় পিছিয়ে যায় বিকেলের পরে। অল্প সময়ের জন্য হয় শুনানি। ফের ১৪ অক্টোবর দেওয়া হয়েছে শুনানির তারিখ। এই তারিখ পে তারিখ হতাশা বাড়িয়েছে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের। কর্ম বিরতির সিদ্ধান্তের পিছনে তাও একটি কারণ জানিয়েছেন তাঁরা। 

২৬ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর দুটি চিঠির রাজ্যের মুখ্য সচিব কে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের গঠন এবং প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোন চিঠির উত্তর মেলেনি। 

মুখ্যমন্ত্রী রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা মৌখিকভাবে করলেও সরকারি নোটিশ মেলেনি। বিকল্প কাঠামো কিভাবে তাও স্পষ্ট নয়। এর উল্লেখ করে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টেও প্রমাণিত আর জি করের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। মেডিকেল কলেজগুলিতে বিদ্যমান থ্রেট কালচার এবং দুর্নীতির ফলাফল। গত বৃহস্পতিবার কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার এবং নার্সদের ওপরে হামলার ঘটনার উল্লেখ করেছেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন তাদের দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা থাকলে বা খালি বেড কত কোথায় এই তথ্য নির্দিষ্ট থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত। 

পূর্ণ কর্ম বিরতিতে ফেরার সিদ্ধান্তের পিছনে এই কারণগুলির উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

Comments :0

Login to leave a comment