Rally Left Front

শান্তি-সম্প্রীতির পক্ষে আজ মিছিল বামপন্থীদের

রাজ্য কলকাতা

সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে, শান্তি-সম্প্রীতির পক্ষে সোচ্চার হতে রাজ্যের বামপন্থী দল সমূহ মঙ্গলবার বিকালে কলকাতায় মিছিলের ডাক দিয়েছে। বামপন্থী দলগুলির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন। যুদ্ধ নয়, শান্তি-সম্প্রীতির সপক্ষে সোচ্চার হন। ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এই লক্ষ্যে মঙ্গলবার বিকালে কলকাতায় ধর্মতলা থেকে শিয়াদলহ পর্যন্ত মিছিলে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষকে শামিল হতে আবেদন করা হচ্ছে।
সিপিআই (এম), সিপিআই, এআইএফবি, আরএসপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(সি), আরসিপিআই, এমএফবি, ওয়ার্কাস পার্টি ও বলশেভিক পার্টির পক্ষ থেকে এই আহবান জানানো হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে ধিক্কার জানিয়ে এই আহবানে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে ২৫ জন পর্যটক ও একজন টাট্টুচালকের নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশ স্তম্ভিত, শোকাহত হয়েছে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, যারা তার পরিকল্পনা করেছে, তারা দেশের জনগণের শত্রু, কাশ্মীরের জনগণের শত্রু। দেশের প্রায় সমস্ত প্রান্তে মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন। কাশ্মীরে ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে মানুষ নজিরবিহীন ভাবে বন্‌ধ পালন করে, রাস্তায় নেমে এই হত্যাকাণ্ডকে ধিক্কার জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা সর্বত্র বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করেছে। এই ঘটনার পরে সর্বদলীয় বৈঠকে সমস্ত রাজনৈতিক দলই কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছিল।
কিন্তু যুদ্ধের বিরোধিতা করে বামপন্থীদের আহ্বানে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের ঘটনার পরিণতিতে ভারতের সামরিক বাহিনী ৬-৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালায়। সামরিক বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ভাবে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতেই প্রথমে আক্রমণ করা হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো বা অন্য কোনও অসামরিক জায়গায় আক্রমণ করা হয়নি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের তরফে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে গোলাগুলি বর্ষণে অন্তত ৪০ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই সামরিক সংঘাত উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। বামপন্থীরা স্বভাবতই উত্তেজনা বৃদ্ধি না করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদের পিছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে। তাদের ভূখণ্ড সন্ত্রাসবাদীরা অতীতেও ব্যবহার করেছে, এখনও করছে। পাকিস্তানের ওপরে সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করা দরকার যাতে সন্ত্রাসবাদকে কোনোভাবেই তারা মদত না দেয়। সঙ্গে সঙ্গে একথাও মনে রাখা দরকার দু’টি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘাত অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু সামরিক অভিযানে সন্ত্রাসবাদের নিরসন হবে না, অতীতের ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। ভারত সরকারের উচিত হবে কূটনৈতিক পথেও অগ্রসর হওয়া, পাকিস্তানের ওপরে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের জমি যাতে তৈরি না হতে পারে সেই লক্ষ্যে রাজনৈতিক সমাধানই আসল পথ। যুদ্ধ নয়, শান্তির বাতাবরণ তৈরি করাই ভবিষ্যতের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষত বামপন্থীরা যুদ্ধের পক্ষে নিজেদের মত প্রকাশ করেনি, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে বলেছিল।
সংঘর্ষ বিরতিকে স্বাগত জানিয়েও মার্কিন মধ্যস্থতায় প্রশ্ন তুলে বামপন্থী দলগুলির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বামপন্থীরা এই সংঘর্ষ বিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে। লক্ষণীয়, ভারত সরকার এমন ঘোষণা করার আগেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে দেন তাঁদের মধ্যস্থতায় দু'দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয়েছে। মার্কিন বিদেশ সচিব আরও জানিয়েছেন, বৃহত্তর প্রশ্ন আলোচনায় 'নিরপেক্ষ জায়গায়' বসতেও দু'দেশ রাজি হয়েছে। এই ঘটনাক্রম শুধু বিস্ময়ের নয়, এ ধরনের অনধিকার চর্চার আমরা তীব্র বিরোধী। কাশ্মীরের প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনও তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কথা না বলা, মধ্যস্থতা না করা ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান। ভারত সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রশ্নে একমত। সিমলা চুক্তির মর্মবস্তুও তাই। এই অবস্থায় ভারত এমন মার্কিন মধ্যস্থতা মেনে নিচ্ছে কেন, তার উত্তর কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিতে হবে।
দেশের অভ্যন্তরে জনগণের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বামপন্থী দলগুলির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতের বিদেশ সচিবই বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীদের হামলার লক্ষ্যই ছিল ভারতবাসীর ঐক্যে আঘাত করা। অন্যদিকে, কেন্দ্রের শাসক দল সন্ত্রাসবাদী আক্রমণকে ব্যবহার করে শোকের বদলে দেশের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরির প্রচেষ্টাও আমরা লক্ষ্য করেছি। যে সাম্প্রদায়িক শক্তি নিরন্তর বিষাক্ত আবহাওয়া তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তারাই কাশ্মীরের ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করছে। বিকৃত জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে যুদ্ধ-উন্মাদনা তৈরির কাজও করেছে। দুঃখের হলেও সত্যি যে একাংশের সংবাদমাধ্যম ভুয়ো খবর ছড়িয়ে এই কাজে সাহায্য করেছে। এই সময়ে আমাদের রাজ্য ও সারা দেশের সচেতন নাগরিকদের প্রধান কর্তব্য হলো সমস্ত ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নিবিশেষে ভারতীয় জনগণের ঐক্য রক্ষা করা। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতীয়দের শক্তিই পারে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে। সংঘর্ষ বিরতি হলেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কাশ্মীরের অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা কিছু সঙ্গত প্রশ্নকেও সামনে এনেছে। কীভাবে নিরাপত্তা জালের মধ্যেও সন্ত্রাসবাদীরা অনায়াসে পহেলগাঁওয়ের মতো পর্যটন স্থলে ঢুকতে পারলো, অনায়াসে সেখান থেকে পালিয়েও যেতে পারল? এই সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে এমন খবর আগে থেকেই ছিল, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত রাজ্য, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তাই এই সব প্রশ্নের জবাব কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিতে হবে।
ভারত ও পাকিস্তান দু’টি দেশের জনগণই যুদ্ধ চায় না। তাই উভয় দেশের প্রতিনিধিদের কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে বামপন্থী দলগুলি মত প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে রাজ্যবাসীর কাছে আহবান জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন। যুদ্ধ নয়, শান্তি-সম্প্রীতির সপক্ষে সোচ্চার হন। ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

Comments :0

Login to leave a comment