গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের সর্বত্র লটারি ব্যবসা ব্যাপক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে করোনা অতিমারীর ধাক্কায় অর্থনীতি যখন ধসে গেছে, মানুষের রুজি রোজগারের সুযোগ কমে গেছে তখন লটারি ব্যবসা আচমকাই যেন তেজি হয়ে উঠেছে। কাজ হারানো বা কাজ না পাওয়া মানুষ যেমন লটারির টিকিট বিক্রির দোকান খুলে বসছে তেমনি জীবিকার রসদ সংগ্রহে ব্যর্থ মানুষ বেশি বেশি করে ‘ভাগ্যের’ উপর নির্ভরশীল হয়ে লটারির টিকিট কিনছে ভাগ্য ফেরানোর প্রত্যাশায়।
এই প্রবণতায় হাওয়া জুগিয়েছে বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। ধর্মের উন্মাদনা, ধর্মাচরণে মানুষকে বেশি বেশি করে প্রলুব্ধ করা, ধর্ম বিশ্বাসকে জোরদার করার ইন্ধন জুগিয়েছে। তৃণমূলও পাল্লা দিয়ে ধর্মপূজার উৎসবে মেতেছে। দুই দলেরই যুগল সম্মিলনে ধর্মের প্রতি ভীতি ও আস্থা বাড়াতে সাহায্য করেছে। কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন দুই দলেরই অর্থনীতি পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা আমজনতার জীবনে আজকের ভয়াবহ সঙ্কটের উৎসব।
অসহায় মানুষ ধর্মের মহাসমারোহের আবহে ভাগ্যের কাছে নিজেদের সঁপে দিয়ে পরিত্রাণের স্বপ্ন দেখছেন। এই বাস্তবতার মধ্যে রাজ্যের সর্বত্র আনাচে কানাচে যেমন লটারির দোকান গজিয়ে উঠেছে তেমনি অনেক বেড়ে গেছে টিকিট কেনার লোক। ফলে সোনায় সোয়াগা লটারি কোম্পানিগুলির মালিকের। দু’হাতে মুনাফা কুড়াচ্ছে তাঁরা। কয়েক বছর আগেও যখন ৫ টাকার টিকিট বিক্রি করতে হিমসিম খেতে হয়েছে টিকিট বিক্রেতাদের, আজ সেখানে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ১০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, এমনকি ৫০০ টাকার টিকিটও। বোঝাই যাচ্ছে শুধু গরিব, নিম্নবিত্তরাই এখন লটারির দোকানে ভিড় জমাচ্ছে না, রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তরাও।
প্রসারিত এই ফুলে ফেঁপে ওঠা লটারি ব্যবসাকে অতি দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছে শাসক তৃণমূলের চোরেরা। অসৎ ও বেআইনি পথে কামানো টাকা আড়াল করতে এবং লুটের কালো টাকা সাদা করতে তারা কাজে লাগাচ্ছে লটারি ব্যবসাকে। শাসক দলের লুট সম্রাট অনুব্রত মণ্ডলের গোরু পাচারের টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে অনুব্রত মণ্ডল নাকি লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছিলেন।
আরও জানা যায় শাসক দলের এক বিধায়কের স্ত্রী এবং শাসক দলের অন্য অনেক প্রভাবশালী নেতাদের নিকটজনেরাও নাকি লটারিতে কোটি কোটি টাকা পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগছে তৃণমূলের নেতা বা তাদের পরিবারের লোকেরা এইভাবে লটারি জিতছেন কীভাবে! এর পেছনে কোনও রহস্য লুকিয়ে নেই তো? যাঁরা লটারি পাচ্ছেন তাঁরা কি নিয়মিত লটারির টিকিট কাটেন? নাকি একদিন কেটেই কোটি টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইতিমধ্যেই অনুব্রতকে জেরা করেছে সিবিআই। তদন্তে নামছে ইডি’ও। অনুব্রত যে টিকিটে কোটি টাকা পেয়েছে সেটা নাকি চার-পাঁচ হাত ঘুরে অনুব্রতের কাছে এসেছে। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এইসব চোর-লুটেরা নেতারা নাকি নিজেরা টিকিট কাটেন না। কে কোথায় লটারি জিতেছে লটারি চক্রের মাধ্যমে পৌঁছে যায় সেখানে। এক কোটি টাকা জিতলে কর দিয়ে হাতে মেলে ৬৫ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা। লুটেরা নেতারা ৮০/৯০ লক্ষ টাকা দিয়ে টিকিটটা কিনে নেয়। তার পর লটারির টাকা নিজেরা তুলে নেয়। এই প্রক্রিয়ায় সহজে কালো টাকা সাদা হয়ে যায়। চুরির টাকাও আড়ালে চলে যায়।
Comments :0