জয়ন্ত সাহা ও অমিত দেব: কোচবিহার
কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গেও যোগসূত্র দৃঢ় করলেন না, মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিলেন না, এখন উত্তরবঙ্গে এসে এখানকার উন্নয়ন নিয়েও কোনো জবাবদিহি করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেবল ভারতীয় সেনাদের অপারেশন নিয়ে নিজের ভোটের রাজনীতির ঢাক পিটিয়ে গেলেন। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, যে অভিযান ভারতের বীর সেনাদের কৃতিত্ব সেটা ভোটের জন্য নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করছেন মোদী। বিজেপি এভাবেই সারা দেশের মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। এখনই এরাজ্যের ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন? উনি সবসময়েই ভোটের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন, দেশের কথা কমই বলেন।
এদিন কোচবিহারে সিপিআই(এম)’র জেলা দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রীর আলিপুরদুয়ারের প্রচার কর্মসূচি সম্পর্কে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সেলিম। সিপিআই(এম) নেতা অলকেশ দাস এবং পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়কে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, এতদিনে মোদীর উত্তরবঙ্গে অনুন্নয়নের কথা মনে পড়লো? উত্তরবঙ্গে কেন উন্নয়ন হয়নি? উনি তো গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের জন্য যে বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল তা কেন নেননি? যখনই ভোট আসে, তখনই বলা হয় বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে, বিমান চলাচল ও ট্রেন চলাচল আরও উন্নত করা হবে, পর্যটন শিল্পকে আরও জোরদার করা হবে, বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি হবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। উত্তরবঙ্গে এইমস গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নেন উত্তরবঙ্গে এইমস হবে না। এখনও উত্তরবঙ্গের মানুষকে দূর-দূরান্তে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়।
তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে চা বাগান ধুঁকছে, বাগান বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিকরা ন্যুনতম মজুরি পাচ্ছে না। বাগানের শ্রমিকের বেকার ছেলে মেয়েরা ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে চা বাগানের জমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিচ্ছেন দেখেও দেশের প্রধানমন্ত্রী চুপ করে আছেন। উত্তরবঙ্গের চা বাগান থেকে চা বিক্রি করে বিদেশ থেকে বিদেশী মুদ্রায় কোটি কোটি টাকা আসে দেশে। অথচ বন্ধ, রুগ্ন চা বাগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনো আশ্বাসের কথা নেই, চা বাগানকে কেন্দ্র করে নতুন বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা নেই। তিনি কেবল সিকিম রাজ্যের ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে যোগ দিয়ে আলিপুরদুয়ারে এসে ভোটের রাজনীতি করে গেলেন বিজেপি’র হয়ে।
প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ববোধহীন হিসাবে চিহ্নিত করে সেলিম বলেছেন, মনিপুরে দীর্ঘস্থায়ী জাতি দাঙ্গায় খুনোখুনিতে মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন, দায়িত্ববোধ থাকলে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যেতেই পারতেন। সেখানে যাওয়ার সময় পাননি, বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর সময় পেয়েছেন। কাশ্মীরের পেহেলগামে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের সাথে দেখা করার সময় পাননি। পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পর কাশ্মীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আওয়াজ তুলেছেন, বনধ পালন করেছেন। তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর যাননি। ৩৭০ধারা বাতিল করার পরে কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতা দূর করার সময় পাননি। এসব না করে প্রধানমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারে এসে সেনাদের কৃতিত্ব নিজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন যেন পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধটা তিনিই করেছেন।
এদিন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অযোগ্য, তাই শিক্ষকদের মধ্যে যারা অযোগ্য তাদের রক্ষা করার জন্য নানা ছল করছেন। উনি চাকরি নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি করিয়েছেন। চাকরি লুট করেছেন। আদালত অযোগ্যদের তালিকা চেয়েছিল উনি দেননি। এখন সেই অযোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। স্কুলে শিক্ষক নেই, স্কুল উঠে যাচ্ছে। সেসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোন চিন্তা নেই, যে অযোগ্যদের থেকে দাদন নিয়েছেন তাদের রক্ষা করাই তাঁর মূল চিন্তা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শ্রম কোড জারি করে যেভাবে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি মজুরির প্রশ্নে, কৃষকদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও ফসলের ন্যায্য মূল্যের দাবি সহ এরাজ্যের সীমাহীন দুর্নীতিতে বেকার যুবদের কাজের অধিকারকে খর্ব করার বিরুদ্ধে আগামী ৯ জুলাই দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নসমূহ, তা সফল করতেও জোরদার প্রস্তুতি চলছে।
Comments :0