বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার রয়েছে। উপাচার্য অপদার্থ। ছাত্রদের বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। এই উপাচার্যের অপসারণ দরকার। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় এই প্রতিষ্ঠান চালাতে ব্যর্থ কেন্দ্র। রাজ্য এবং কেন্দ্রের দুই সরকারই শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের পক্ষে কাজ করে চলেছে। এদিন দমদমে সিআইটিইউ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশেও ভাষণ দেন সেলিম।
লটারি কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, কালো টাকা সাদা করা হচ্ছে। ডিয়ার চালায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘মাই ডিয়ার’। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক কেন তদন্ত করবে না। বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারে পড়ে। খাদান, টোল, গোরু পাচারের কালো টাকা সাদা করছে লটারিতে পুরস্কার দেখিয়ে। সেলিম বলেন, আসামেও এমন কেলেঙ্কারি হয়েছে। অন্য রাজ্যেও চলছে। চক্রের মাথারা দলবদল করে। এ রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি’তে যাওয়া-আসা করে।
রাজ্যের প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘বেনিয়ম আছে বলেই শিক্ষা দপ্তরের সচিবকে আদালতের মুখে পড়তে দিতে চাইছে না সরকার। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে টাকা খরচ করে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে।’’ এই প্রসঙ্গেই শিক্ষক পদপ্রার্থীদের স্বচ্ছ এবং নির্দিষ্ট পদে নিয়োগের দাবি তোলেন তিনি। সেলিম বলেন, ‘‘সুপারনিউমারারির পদের কথা বলছে রাজ্য। তার অর্থ দুর্নীতিকে ভুলে যেতে বলা। চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির সময়েও এমনই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চোরের মতো কথা বলছেন। শিক্ষা মন্ত্রী তাঁর সহযোগী হয়েছেন।’’
এদিন দমদম ক্যান্টনমেন্টে জনসভায় তিনি বলেন, যারা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছে তারাই এখন নিয়োগের পথে বাধা হিসাবে বামপন্থীদের দেখিয়ে অপপ্রচার করছে। বৃহস্পতিবার দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন সংলগ্ন মাঠে সিআইটিইউ’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং আরএসএস অপপ্রচারে নেমেছে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকারের দাবিতে গ্রামাঞ্চলে পদযাত্রা চলছে। মানুষই জোট বাঁধছেন। এখন চোর ধরার দাবি জানানো হচ্ছে। যেভাবে সর্বত্র বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে, শিশুরা আহত হচ্ছে বা প্রাণ হারাচ্ছে, এরপর বোমা বের করার দাবিও তোলা হবে। আমতার চন্দ্রপুরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। বিস্ফোরণে নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবারও পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেনি। সন্ত্রাসদীর্ণ এই এলাকায় পদযাত্রা হবে। তিনি জানিয়ে দেন গঙ্গা ভাঙনে বিপন্ন মানুষের পুনর্বাসনের দাবি দিল্লিতে তোলা হচ্ছে বামপন্থীদের তরফে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিকল্প বসতি গড়া হয়েছে। এখন দুই সরকার দায় ঠেলাঠেলি করছে।
কেন্দ্রীয় কর্মীনিয়োগ ও জনঅভিযোগ মন্ত্রকের নথি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদ না থাকলে সুপারনিউমারারি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। শিক্ষক পরীক্ষায় সফল চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে এখন এই ব্যবস্থার কথা বলছে সরকার। যাতে চাকরি বিক্রি করে বেনিয়মের নিয়োগে পদে আসীনদের আড়াল করা যায়। সেলিম বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির গোটা চক্রকেই আড়াল করতে নেমেছে রাজ্য। যেন তেন করে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সুপারনিউমারারি পদের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। এভাবে চাকরি পেলে তাকে ঘিরে সংশয় থাকবে। নির্দিষ্ট পদে নিয়োগ করতে হবে। রাজ্যে লক্ষাধিক পদ খালি। চাইলেই স্বচ্ছ এবং বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুযায়ী নিয়োগ করতে পারে। চাকরিপ্রার্থীদের ধোঁকা দেওয়া যাবে না। আর যারা চাকরি নিলাম করল, সেই মন্ত্রী থেকে তৃণমূল নেতা, জড়িত আমলাদের শাস্তি দিতে হবে।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন যে মাদ্রাসা নিয়োগেও বেনিয়ম হয়েছে। মাদ্রাসা কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে।
ডেঙ্গি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য বারবার মৃত্যুকে আড়াল করে। করোনার সময়ও তাই হয়েছে। কেন্দ্রের পরামর্শে বেসরকারি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাকে নথি তৈরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের এর আগে অজানা রোগ লিখতে বলা হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন। এভাবে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে স্বাস্থ্যের মতো গণপরিষেবা ক্ষেত্রে নথি রাখার মতলবের উৎস ওয়াশিংটন। এ রাজ্যে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বিধানসভায় আদিবাসী দপ্তর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে অসত্য বলেছেন সেলিম। তিনি মনে করিয়ে দেন যে রাজ্যে আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর আগেও ছিল। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর, স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক দপ্তর রাজ্যে তৈরি হয়েছে আগে। তখন বামফ্রন্ট সরকারে আসীন। রাজ্যে হওয়ার পর কেন্দ্র তা গ্রহণ করে আলাদা মন্ত্রক করেছে। রাজ্য বিধানসভাতেই বিরোধীদের মত জানানোর উপায় বাড়াতে দপ্তর বিষয়ক কমিটি গড়া হয়। পরে দেশের সংসদে স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে তা চালু হয়।
এদিন দমদমে কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর নামাঙ্কিত নগরের কমরেড বাবলি দে ও কমরেড শ্রীদীপ রায়চৌধুরী নামাঙ্কিত মঞ্চে সিআইটিইউ’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দশম সম্মেলন শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম, সিআইটিইউ’র রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, জেলা সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জি, অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক রানা গুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন নেপালদেব ভট্টাচার্য্। সম্মেলন শেষ হবে ২৬শে নভেম্বর।
Comments :0