সুসংবাদের দিনেই গুরুতর দুঃসংবাদ।
সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো করলেও ব্রাজিল শিবিরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন নেইমার। সার্বিয়া ম্যাচে নেইমার আঘাত পেয়েছেন। আঘাত খুব অল্প বলেও মনে হচ্ছে না। দলের চিকিৎসক জানিয়েছেন, গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচে গোড়ালির চোটের জন্য খেলতে পারবেন না নেইমার। তবে ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে সুখবর এটাই, তিনি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাননি। দল শেষ ষোলোয় উঠলে, নেইমার আবার নামতে পারেন। সেক্ষেত্রেও স্থির কোনো নিশ্চয়তা না দিয়ে চিকিৎসক জানিয়েছেন, চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁকে সুস্থ করার। ভালোই আঘাত পেয়েছেন রাইট উইঙ ব্যাক দানিলোও। তিনিও বাকি বিশ্বকাপে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন।
গোড়ালির সমস্যা ব্রাজিলের ‘প্রাণভোমরাকে’ ভোগাচ্ছে বহুদিন ধরেই। অতীতেও, গোড়ালির চোটের কারণে বহু ম্যাচে খেলতে পারেননি।
সার্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচের বয়স তখন ৮০ মিনিট। হঠাৎই নেইমারকে তুলে নিতে বাধ্য হন, কোচ তিতে। তার আগেই সার্বিয়ার ডিফেন্ডার নিকোলা মিলেনকোভিচের সঙ্গে সংঘর্ষে ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়ে গিয়েছিলেন নেই। মাঠের বাইরে এসে জার্সিতে মুখ ঢেকে ফেলেন। তাঁর চোখে জলও দেখা যায়। বিষণ্ণ মুখে, ম্যাচের পর মিক্সড জোনে ফোলা গোঁড়ালি নিয়েই আসেন। যদিও দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছিলেন, কখনও কখনও অসুবিধে হচ্ছিল তাঁর।
এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের সঙ্গে চিকিৎসক হিসাবে আছেন রড্রিগো লাসমার। ম্যাচের পরপরই নেইমারের চোট প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের শান্ত থাকতে হবে, এত দ্রুত কিছু বলা যাবে না। আমরা চোটের জায়গায় দ্রুত বরফ দিয়েছি। চিকিৎসা শুরু করেছি। ২৪-৪৮ঘণ্টা সময় লাগবে পরিস্থিতি বুঝতে। নেইমার ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যাচ্ছে, উন্নতি লক্ষ্য করলেই জানিয়ে দেওয়া হবে।’ কিন্তু শুক্রবার সকালে নেইমার ও দানিলো দু’জনেই ঘুম থেকে উঠে যন্ত্রণার কথা বলেন। ভিডিও বিবৃতিতে চিকিৎসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের এমআরআই করানো হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা যায় নেইমারের ডান পায়ের গোড়ালিতে ল্যাটারাল লিগামেন্টে আঘাত রয়েছে, হাড়ও ফুলে আছে (ইডিমা)। দানিলোর বাঁ পায়ে লিগামেন্টে আঘাত রয়েছে। এখনই বলে দেওয়া যায় পরের ম্যাচে তাঁরা খেলতে পারবেন না। প্রতিযোগিতায় তাঁরা যাতে ফিরতে পারেন সেই চেষ্টা হচ্ছে। ব্রাজিল শিবিরে আশঙ্কা, নেইমার আদৌ আর খেলতে পারবেন তো?
রিচার্লিসনের জাম্প ভলি গোলটির পাস বাড়ানো ভিনসিয়াস অবশ্য আশাবাদী সুইস ম্যাচের আগেই তাঁর সতীর্থ সুস্থ হয়ে উঠবেন। ভিনির কথায়, ‘নেইমার ঠিকই আছে। আঘাতে কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছে। তবে আমি আশা করছি, সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচের আগেই সুস্থ হয়ে উঠবে নেইমার।’ বিশ্বব্যাপী আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই নেইমার নিজেও টুইট করে জানিয়েছেন, ‘ঠিকই আছে।’ কিন্তু সব যে ঠিক নেই সে খবরও এসেছে ব্রাজিল শিবির থেকে।
সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের দু’টি গোলের একটিও নেইমারের পা থেকে আসেনি, গোলের পাসও বেরোয়নি। তিনি নিজের জায়গা পরিবর্তন করে, কিছুটা নিচের দিকে খেলছিলেন। মাঝমাঠে নেমে। যাতে বাম প্রান্ত থেকে নিজের সহজাত খেলাটা খেলতে পারেন ভিনসিয়াস জুনিয়র। তবুও নেইমার বল ধরলেও তাঁকে আটকাতে হিমশিম খাচ্ছিল সার্বিয়া। ম্যাচে সার্বিয়ানরা নয়বার ফাউল করেন নেইমারকে। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের জয়ের নেপথ্যে তাঁর প্রভাব খুব একটা না থাকলেও ব্রাজিলের জার্সি গায়ে নেইমারের মাঠে উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জন্যই গোটা ব্রাজিল শিবির চাঙ্গা থাকে।
আছে মানসিক প্রভাব। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেইমার যদি খেলতে না পারেন, সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হতে পারে সেলেকাওদের। ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নেইমারের না থাকাটা ব্রাজিলকে ভুগিয়েছিল। ওই বিশ্বকাপের শেষ আটের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বিয়ার ফুটবলার ক্যামিলো জুনিগা খুবই বাজেভাবে আঘাত করেছিলেন নেইমারকে। চোট গুরুতর হওয়ায় সেমিফাইনালে মাঠে নামতেই পারেননি। গ্যালারিতে বসেই দলের হার দেখেছিলেন। সেদিন, গোটা ব্রাজিল দলটা মানসিকভাবে এতটাই বিধ্বস্ত ছিল, লড়াই করার আগেই হেরে যায়। জার্মানি ব্রাজিলের ঘরের মাঠে সাত গোল দিয়েছিল নেইমারহীন ব্রাজিলকে। সময় পালটেছে অনেকটাই। এবার বিশ্বকাপে ব্রাজিল আর নেইমার কেন্দ্রিক দল নয়, একাধিক তারকা। যারা একক দক্ষতায় ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। তিতের রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী। তবুও আট আগের সেই দিনটার ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা ভেবেই ‘ভীতি’ কাজ করবেই, নেইমারের অভাব অনুভূত হবে তাঁর সতীর্থদের।
Comments :0