পহেলগামের জঙ্গি হামলায় এক স্থানীয় যুবক সহ ২৬পর্যটকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সর্বোচ্চ প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি সবচেয়ে জরুরি সর্বদলীয় বৈঠক করে সমগ্র বিষয়টি সকলকে জানানো এবং সকলের মতামত শোনা। এমন সঙ্কটের সময় গোটা দেশকে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এধরনের বৈঠকের কোনও বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সেই বৈঠকের ব্যবস্থা করেছে বটে তবে প্রধানমন্ত্রী যথারীতি সেই বৈঠকে যোগ না দিয়ে চলে গেছেন ভোটমুখী বিহারে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জনসভায় ভাষণ দিতে। তিনি দেশের স্বার্থে বিদেশ সফর কাটছাঁট করে জরুরিভিত্তিতে দেশে ফিরতে পারেন কিন্তু দলীয় ভোট রাজনীতির স্বার্থকে উপেক্ষা করে বৃহত্তর স্বার্থে সর্বদলীয় বৈঠকে থাকতে পারেন না। বোঝাই যাচ্ছে এমন সঙ্কটের সময় সর্বদলীয় বৈঠক অপেক্ষা তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে ভোটের আবহে বিহারের জনসভা। বিহারের সভায় গরম গরম ভাষণ দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চিরাচরিত কায়দায় হুঙ্কার দিয়েছেন বটে সেটা সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির থেকে দিল্লিতে বসেই করা যেত। গণতন্ত্রে যেকোনও সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এমন গালভরা লম্বাচওড়া ভাষণ উরি ও পুলওয়ামায় হামলার পরেও তাঁর মুখে শোনা গেছে। সেগুলি যে কোনও কাজে লাগেনি, কথার কথাই থেকে গেছে সেটা বলাই বাহুল্য। যদি তাঁর কথা ও কাজ এক হতো তাহলে পহেলগামের এমন নারকীয় দৃশ্য দেখতে হতো না। এইভাবে গরম গরম ফাঁকা বুলি না আউড়ে যদি আগের ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজের কাজে মন দিতেন তাহলে ছন্নছাড়া গোয়েন্দা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা যেত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলিও ভরাট করা সম্ভব হতো। সর্বোপরি সমগ্র কাশ্মীরের জনগণের জীবন-জীবিকার ওপর এভাবে বিপর্যয় নেমে আসত না। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত গরম গরম বক্তৃতাদান থেকে বিরত থেকে আসল কাজে মনোনিবেশ করা।
গলার শিরা ফুলিয়ে ৫৬ইঞ্চি ছাতি দেখিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রণহুঙ্কার ছাড়লে সন্ত্রাস বন্ধ হয় না। পাকিস্তানও পালটা হুঙ্কার দিয়ে তাল ঠুকবে। যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরি হবে বাকি সব পণ্ড হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় যে চিড়ে ভেজে না সেটা ইতিমধ্যে দেশের মানুষ বুঝে গেছেন। তাই তাঁর এহেন কথাবার্তার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তেরো বছর ধরে এমন ফাঁকা আওয়াজ তিনি বিস্তর দিয়েছেন। সেগুলি যে অন্তঃসারশূন্য স্রেফ লোক তাতানো নাটক ছিল সেটা বার বার প্রমাণ হয়ে গেছে।
পাক সীমান্তে উরিতে ভারতীয় সেনা শিবিরে ভয়ঙ্কর হামলার পর প্রধানমন্ত্রী অনেক গরম ভাষণ দিয়েছেন, সার্জিকাল স্ট্রাইকও হয়েছিল কিন্তু কোনও কিছুই কাজে আসেনি। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০জওয়ানের মৃত্যুর পর তিনি রণংদেহি মূর্তি ধারণ করে পাক অভ্যন্তরে বালাকোটে বোমা বর্ষণ করেছিলেন। তাতে একজন জঙ্গিরও গায়ে আঁচড় লেগেছে তেমন নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। যথারীতি ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপও কিছুমাত্র কমেনি। সর্বোপরি পুলওয়ামায় তদন্ত রিপোর্টও আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। আদৌ কি সেই তদন্ত শেষ হয়েছে নাকি ভয়ঙ্কর কোন সত্য গোপন রাখতে সেটা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে এখন আর কোনও সন্দেহ নেই যে চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা গাফিলতির পরিণতি পুলওয়ামা। ছ’বছর পর পরও যে সেই ট্র্যাডিশন বয়ে চলেছে পহেলগাম তার প্রমাণ। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে মনে হয় না। যদি সেটা হতো তবে পাখির চোখ সেখানেই থাকত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শাসক বাহিনী সন্ত্রাসবাদ দমন অপেক্ষা সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করে হিন্দত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পুষ্ট করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টিতেই বেশি তৎপর। তাই জঙ্গির এবং আক্রান্তের ধর্ম খুঁজতে হিন্দুত্ববাদী শাসকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সীমান্ত পারে সন্ত্রাসবাদ দেখিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা যেমন তোলা হচ্ছে তেমনি সন্ত্রাসীর ধর্ম দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জমি পোক্ত করা হচ্ছে। দু’টোই ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ধ্বংসাত্মক।
PM skips all party meet
কথা কম কাজ বেশি

×
Comments :0