শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়াতে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর যে ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির আপামর শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্র প্রিয়, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানালো সিপিআই(এম)। রবিবার দুপুরে হিলকার্ট রোডে অনেক বিশ্বাস ভবনে সিপিআই(এম) দার্জিলিং জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক বৈঠকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে ও জেলার শান্তি সম্প্রীতির পক্ষে এই আহ্বান জানান সিপিআই(এম) দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক।
তিনি বলেন, মাটিগাড়ার ঘটনা একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় মেরুকরণ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলাতে এইরকম অপসংস্কৃতি কোন সময় অতীতে দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্ত কোন ঘটনা যদি ঘটেও থাকে তাহলে জেলাবাসি ঐক্যবদ্ধ ভাবে তা প্রতিরোধ করেছেন। কোনভাবেই বাড়বাড়ন্ত হতে দেননি। বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায় ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে একসাথে দীর্ঘদিন ধরে এই জেলাতে বসবাস করে আসছেন। তাই দার্জিলিং জেলার বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। মাটিগাড়ার ঘটনা অনেক রাজনৈতিক দল ও তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উস্কানিমূলক ও প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলছেন। উস্কানি মূলক কথাবার্তা বলে ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেবার চেষ্টা করছে। কিন্তু শিলিগুড়ি সহ-সংলগ্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যেন কোন প্ররোচনায় পা না দেন। সিপিআই(এম) এই ধরনের কাজের তীব্র বিরোধিতা করছে। একই সাথে পুলিশ প্রশাসনকে শক্ত হাতে দুষ্কৃতীকারীদের দমনের জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। পাঠক বলেন, পুলিশ যদি সক্রিয় থাকতো তাহলে প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিন মাটিগাড়াতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতো না। এই ঘটনার সঙ্গে যারা যে সম্প্রদায় বা ধর্মের মানুষ যুক্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে উপযুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির নেতা গৌতম ঘোষ, দিলীপ সিং ও জয় চক্রবর্তী।
বর্তমান মাটিগাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হিংসা, শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অতি সক্রিয় পুলিশি ভূমিকা গ্রহণের দাবিতে এদিন দুপুরে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন জেলা জেলা বামফ্রন্টের পক্ষে সমন পাঠক ও গৌতম ঘোষ, নুরুল ইসলাম, দিলীপ সিং, জয় চক্রবর্তী, বিকাশ সেন রায়, অনিরুদ্ধ বোস,লক্ষ্মী মাহাতো প্রমূখ। চার দফা দাবি জানিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। দাবি গুলির মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া বা চেষ্টা করার জন্য জামিন অযোগ্য ধারায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং প্রতিরোধমূলকভাবে আটক করা উচিত যাতে আরও উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায়, পুলিশকে অবশ্যই সমস্ত ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও তাদের রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ইত্যাদি।
অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক সমন পাঠক অভিযোগ করে বলেন, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পন্ন একটি দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কমিশনারের সাথে দেখা করতে গেলেও, কমিশনার আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি। গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ এক ঘন্টা গেটের বাইরে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে কিছু আবেদন করার জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের উচিত সাধারণ মানুষের কথা শোনা তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতা নজরে এসেছে। যদিও চাপে পড়ে পরবর্তীতে পুলিশ কমিশনার বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য হন। প্রথম দিনের মাটিগাড়ার পরিস্থিতি যা ছিল পুলিশ প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই তা মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতো। কিন্তু পুলিশের তরফে সেই রকম কোন সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তাই দ্বিতীয় দিন আবার মাটিগাড়ার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। মাটিগাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনভাবেই যাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সাথে আলোচনা হয়েছে।
Comments :0