RSS TRIBAL

আদিবাসীদের প্রতারণায় আরএসএস’র জাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরএসএস তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের মাধ্যমে ভীষণভাবে সক্রিয়। আদর্শগতভাবে আরএসএস আদিবাসী বা তফসিলি উপজাতিদের আদিবাসী বলে না। আদিবাসীরা আরএসএস’র কাছে বনবাসী। ব্রাহ্মণ্যবাদী তথা মনুবাদী আরএসএস ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করে তাদের হিন্দুত্ববাদের মনগড়া ভাবনা অনুযায়ী আর্যদের বহিরাগত না বলে মূল ভারতীয় বলে গণ্য করে। আর্যরা যে সত্যি সত্যি বাইরে থেকে এসেছে সেটা মেনে নিলে আরএসএস’র সমগ্র আদর্শগত ভিত্তিটাই বাতিল হয়ে যায়। আর আর্যরা বহিরাগত হলে আদিবাসীরাই হয়ে যায় ভারতের আসল আদিবাসী। সেটা মানলে আর্য সভ্যতাকে ভারতীয় ঐতিহ্য বা পরম্পরা বলা যায় না। কিন্তু আরএসএস মতাদর্শ হিন্দুত্ববাদ দাঁড়িয়ে আছে আর্য সভ্যতার উপর। একারণেই আরএসএস আদিবাসীদের আদিবাসী না বলে বনবাসী বলে থাকে। তাদের হিন্দুত্ববাদী ধারণায় আদিবাসীদের কোনও জায়গা নেই। অথচ ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে আদিবাসীদের সমর্থন দরকার। তাছাড়া আদিবাসীদের ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলে তারা বিজেপি’র বিরুদ্ধে বড়সড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তাই আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে আরএসএস তাদের মধ্যে নানা সংগঠনের নামে কাজ করে। এক্ষেত্রে তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য তাদের স্বতন্ত্র ধর্ম বিশ্বাসের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মীয় আচারে অভ্যন্ত করা। তাদের হিন্দু করে তোলা যাতে ধর্মের রাজনীতি করে রাজনৈতিক ফসল তোলা সহজ হয়।
ধর্মান্তরকরণের প্রবণতা সর্বাধিক আদিবাসীদের মধ্যে। খ্রিস্টান মিশনারিরা কয়েকশো বছর আগে থেকে আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করে তাদের একাংশকে খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী করে তোলেন। বর্তমানে দেশে যারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তাদের বেশিরভাগই আদিবাসী। আরএসএস এই প্রবণতা বন্ধ করতে চায় এবং চেষ্টা করে আদিবাসীদের হিন্দু করে তুলতে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, ঝাড়খণ্ডে, ছত্তিশগড়ে, পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীদের মধ্যে আরএসএস তাই বেশ সক্রিয়। এই সক্রিয়তার কারণেই আদিবাসীদের ভোট অনেকটাই বিজেপি’র দিকে যায়।
ঝাড়খণ্ডের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যে এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতা দখলের জন্য আদিবাসীদের সমর্থন জরুরি। কিন্তু আরএসএস’র মতাদর্শগত ভাষ্য আদিবাসীদের কাছে হাজির করে সমর্থন পাওয়া যাবে না। তাই নানা কৌশল তাদের অবলম্বন করতে হয়। হালে যে কৌশলটি তারা জোরালোভাবে কাজে লাগাতে চাইছে সেটা হলো তাদের পরি‍‌চিতি সত্তা এবং সামাজিক সত্তার বিপন্নতাকে তুলে ধরা। ঝাড়খণ্ডে তারা গত কয়েক বছর ধরে প্রচার করছে বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীরা নাকি ঝাড়খণ্ডে জাঁকিয়ে বসছে। তাদের সংখ্যা নাকি এত দ্রুত বাড়ছে যে কয়েক বছরের মধ্যে আদিবাসীরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। একই প্রচার শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গলমহলেও। এখানেও নাকি বাংলাদেশি অনু‍‌প্রবেশকারীরা আদিবাসীদের জমি দখল করে নিচ্ছে। তাদের সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী বলতে বোঝাচ্ছে মুসলিম আধিপত্য। অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে আবিাসীদের ক্ষেপিয়ে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে এক সভায় অমিত শাহ বলেছেন ঝাড়খণ্ডে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করতে হয় সেটা তার ভালো জানা আছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। এইভাবে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনী‍‌তিকে হাতিয়ার করে আদিবাসীদের বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি।

Comments :0

Login to leave a comment