NEP RSS

তৈরির আগে ‘পরামর্শ’ ছিল, এবার রাজ্যে নয়াশিক্ষা নীতির পক্ষে প্রচার সঙ্ঘের

রাজ্য

NEP RSS

নয়া শিক্ষানীতির জন্য তারা ‘পরামর্শ’ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ধারাবাহিক দিয়েছে। বৈঠকও করেছে শিক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে ঘন ঘন। এবার তাদের পছন্দের নয়া শিক্ষানীতির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে আরএসএস।
এটি তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও তা চলছে। প্রধানত সঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলগুলিতে যে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে, তাদের অভিভাববকদের এই ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম করছে তারা। এই ক্ষেত্রে আরএসএস-এর স্কুল পরিচালক সংগঠন বিদ্যাভারতীর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে,‘‘বিদ্যাভারতীর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে এনইপি-২০২০ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে হবে। দেড় লক্ষ শিক্ষক, প্রায় ৫০লক্ষ অভিভাবক, কমকরে ১০লক্ষ প্রাক্তনী, প্রাক্তন-অভিভাববক, প্রায় ২৫ হাজার বিদ্যাভারতী স্কুলের ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের দায়িত্ব এই শিক্ষানীতি বোঝানোর।’’ ইতিমধ্যেই আসাম, গুজরাট, উত্তর প্রদেশের মতো কিছু রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের এই উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ চলছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সঙ্ঘের কৌশল হলো, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নানাভাবে প্রভাবিত করে নিজেদের দিকে আকর্ষিত করা। নয়াশিক্ষা নীতির প্রাথমিক প্রচারক হিসাবে তাদের গড়ে তোলা। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে তারা এই কাজ চালাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে এখন সঙ্ঘের স্কুল আছে ৩৩৬টি। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে আছে ১১২টি। ছাত্র-ছাত্রী আছে প্রায় ৮৮হাজার। এই স্কুলগুলি ‘ফরমাল’ স্কুল। এছাড়া প্রায় ৪০টি ‘ইনফরমাল’ স্কুল আাছে। রাজ্যে দুই ভাগে স্কুল পরিচালনা করে আরএসএস। দক্ষিণবঙ্গে পরিচালনকারী সংস্থার নাম ‘বিবেকানন্দ বিদ্যাবিকাশ পরিষদ।’ উত্তরবঙ্গে তার নাম ‘বিদ্যাভারতী উত্তরবঙ্গ।’ মমতা ব্যানার্জির শাসনে রাজ্যে সঙ্ঘের বেশ কিছু স্কুল অনুমোদন পেয়েছে। আরএসএস-এর মহিলা সংগঠন রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির নেত্রী, তথা সঙ্ঘের স্কুলগুলির পরিচালক রিতা চক্রবর্তীর কথায়,‘‘মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছেন আমাদের কার্যপ্রণালীতে। আমাদের অনেকগুলি স্কুলই মাধ্যমিক পর্যায়ের অনুমোদন পেয়েছে। আগামী দিনেও আরও কয়েকটি পাবে। আমরা আশাকরি আগামীদিনে নয়া শিক্ষানীতির ভিত্তিতেই রাজ্যে আমাদের স্কুলগুলিতে আমরা পঠনপাঠন চালাতে পারব।’’


দেশে এখন সঙ্ঘ পরিচালিত ‘ফরমাল’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১২,৮৩৫টি। এই স্কুলগুলিতে ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৩৫লক্ষ। তাছাড়া ‘ইনফরমাল’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ১১,৩৫৩টি।
নয়াশিক্ষা নীতি তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘর প্রতিনিধিদের প্রতি মাসে একবার করে অন্তত বৈঠক করেছে। সঙ্ঘ তাদের স্কুলগুলিতে যা পড়ায়, তা নথি আকারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকে জমা দিয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে সঙ্ঘের স্কুলগুলি যারা পরিচালনা করেন, তাদের থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও মোদীর নয়া শিক্ষানীতি তৈরির জন্য ‘পরামর্শ’ গিয়েছিল। আরএসএস-এর মহিলা সংগঠন রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির নেত্রী, তথা সঙ্ঘের স্কুলগুলির পরিচালকদের অন্যতম রিতা চক্রবর্তীর বক্তব্য,‘‘আমরা আমাদের রাজ্যের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত মন্তব্য বিদ্যাভারতীর কেন্দ্রীয় পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তার আগে কিছু সেমিনার করেছিলাম। নয়াশিক্ষা নীতি গৃহীত হয়ে গেছে। এবার তার বিষয়গুলি নিয়ে আমরা প্রচার চালাচ্ছি নানাভাবে।’’

এই সব কিছুই রাজ্যের তৃণমূল সরকার জানে। রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘রাজ্যে বিদ্যাভারতী নয়া শিক্ষানীতির পক্ষে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাববকসহ অন্যান্যদের মধ্যে মনোভাব গড়ে তোলার কাজ করছে। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। পার্থবাবু শিক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন নয়া শিক্ষানীতি সম্পর্কে আমাদের মনোভাব আমরা জানিয়েছি কেন্দ্রকে। পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা কে দেবে, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকেই।’’
তবে নয়া শিক্ষানীতি শুধুই ‘পরিকাঠামো’র জন্য টাকা কে দেবে, সেই প্রশ্নের বিষয় নয়। অনেকটাই আরএসএস-এর পঠনপাঠনের ধারা আছে নরেন্দ্র মোদীর নয়াশিক্ষা নীতিতে। আছে হিন্দি পড়ানোকে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ। আছে শিক্ষা থেকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কমিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত। আছে বেসরকারি, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঢালাও ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়ার নীতি। এমনকি নয়া শিক্ষানীতির ফলে বিরাট অংশের গরিব পরিবারের সন্তান শিক্ষার অধিকারই হারিয়ে ফেলবে, এই আশঙ্কাও প্রবল।

এর বিরুদ্ধে এসএফআইসহ বিভিন্ন বামপন্থী, প্রগতিশীল সংগঠন, ব্যক্তি লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছেন। উলটোদিকে মমতা ব্যানার্জির দল এবং সরকারের পরোক্ষ সহায়তায় সঙ্ঘ সমাজে এই শিক্ষানীতির পক্ষে প্রচার শুরু করে দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment