Communal tension in West Bengal

দাঙ্গায় গ্রাম জ্বলছে মুখ্যমন্ত্রী জলসায় ব্যস্ত

সম্পাদকীয় বিভাগ

কেন্দ্রীয় সরকারের আনা ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল। ৮ এপ্রিল মুর্শিদাবাদেও অশান্তির সূত্রপাত সেকমই একটা বিক্ষোভ মিছিল থেকে। প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হলেও, তা দ্রুতই সুতি ও সামসেরগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক হিংসাত্মক রূপ নেয়। দাঙ্গাকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘটনায় ৩ জন নিহত ও অনেকেই আহত হন। বহু ঘরবাড়ি দোকানপাট ভাঙচুর লুট করা হয়। আক্রান্তদের অভিযোগ, মুখে গামছা বেঁধে সংগঠিতভাবেই এই লুটপাট, ভাঙচুর, আগুন লাগায় দুষ্কৃতীরা। ৫০০ জনের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম এবং মালদা জেলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। 
প্রশ্ন, প্রশাসন কি কিছুই জানত না? আগাম কিছুই কি আঁচ করতে পারেনি? তাহলে পুলিশের গোয়ান্দা বিভাগ কি করছিল! বিক্ষোভ তো কয়েকদিন ধরেই চলছে নানা জায়গাতেই। বিগত রাম নবমী ও হনুমান জয়ন্তীকে ঘিরে নানা সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ও হুঙ্কার চলছে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই। তাহলে পুলিশ প্রশাসন কি সেসব জেনেও নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? কে তাদের ঘুমিয়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল? সেদিন সন্ধ্যায় বিনা বাধায় লুটপাট তিন-চার ঘণ্টা চলে, তখন পুলিশ কি করছিল? নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, নাকি উপরতলার নির্দেশেই নির্বিচারে লুটপাট চালাতে দিয়েছে দুষ্কৃতীদের? জেলার পুলিশ সুপার কি করছিলেন? যদি তার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ওপরতলায় সেনা বা আধাসেনা বাহিনীকে পাঠাবার অনুরোধ কেন করেননি? কেন কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলো? হাইকোর্ট নির্দেশ না দিলে কি আদৌ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হতো, নাকি এই লুটপাট ভাঙচুর অরাজকতা আরও চলতে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল প্রশাসনের? তিন-চার ঘণ্টাব্যাপী বিনা বাধায় চলা দাঙ্গার ব্যাপকতা এবং হিংস্রতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একেবারেই অপ্রস্তুত ছিল। এই প্রস্তুতিহীনতা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? সত্যিই কি রাজ্য সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সেই কারণে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নাকি সব জেনেবুঝেও একে ঘটতে দেওয়া হয়েছে? তিন-চার ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলেছে, কেন দমকলের দেখা পাওয়া গেল না? এই ঘটনাগুলো কি রাজ্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, নাকি দাঙ্গার আগুনে রাজ্যের দুর্নীতি অনাচার অবিচার ঢাকার মরিয়া প্রচেষ্টা? ঘটনা এতক্ষণ ধরে ঘটল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি আবার পুলিশ মন্ত্রীও, তিনি কি জানতে পারেন নি? জেনে থাকলে, সাথে সাথে এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেন না কেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরব দর্শকের ভূমিকায় কেন? তার পুলিশ দপ্তর তো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চূড়ান্ত ব্যর্থ, এটা গত ১৪ বছরে প্রতিদিনই প্রমাণ হচ্ছে। আসলে থানাগুলোর নিয়ন্ত্রণ তো তার নির্দেশেই শাসক দলের নেতা দুষ্কৃতীরা অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে। শাসক দলের দুষ্কৃতী নিয়ন্ত্রিত থানা কীভাবে দুষ্কৃতীদের ঠেকাবে? 
২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি গেছে মুখ্যমন্ত্রীর দলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির কারণে। ১০০ দিনের কাজ নেই, কাজের মজুরি নেই। কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে যুব সম্প্রদায়। শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তা নেই। বস্তি উচ্ছেদ করে প্রোমোটারদের হাতে শহরের জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এসব দেখে, রাজ্যবাসী রাগে ফুঁসছে। এই সময়ে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানো মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। এই সময়ে জাত-ধর্ম-ভাষার নামে দাঙ্গা লাগলে শাসক তৃণমূলেরই সুবিধা। আর সারদা, নারদ, কয়লা, বালি, পাথর, সোনা পাচারে তৃণমূল যখনই বিপদে পড়েছে, তাদের রক্ষাকর্তা হয়েছে বিজেপি। এক্ষত্রে বিজেপি’র লাভ দ্বিমুখী। একদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তৃণমূলেকে বাঁচানো যাবে, আর অন্যদিকে তাদের বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতেও ষোলোআনা সুবিধা হয়ে যায় দাঙ্গার আগুন ছড়ালে। মানুষ মরুক, ঘর-দোকানপাট জ্বলুক – তৃণমূল বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেই হলো। এই ভয়ঙ্কর রাজনীতিকে পরাস্ত করতেই হবে।

Comments :0

Login to leave a comment