ADENO VIRUS ADVICE

অ্যাডিনো ভাইরাস, দু’দিনের বেশি জ্বরে সতর্ক হোন

রাজ্য জেলা কলকাতা

adeno virus child care dr subarna goswami viral fever

ডা. সুবর্ণ গোস্বামী

প্রতি বছর এই সময় নাগাদ ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডেনো ভাইরাসের মতো বিভিন্ন ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এই ভাইরাস গুলি ঘুরে ফিরে আসে। এই বছর যেমন অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী বছর হয়ত অন্য কোনও ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হবে। 

কোভিডের মতো এই ভাইরাসও হাঁচি, কাশি কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। ধরা যাক আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কিংবা কাশির জীবানু দরজার হাতলে কিংবা সুইচ বোর্ডে লাগল। পরবর্তীকালে সেখানে কোনও সুস্থ মানুষ হাত দিল, এবং সেই হাত নাকে, মুখে চোখে লাগলে অ্যডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

কারা আক্রান্ত হন

শিশুরা এবং বড়রা- উভয়েই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ তেমন তীব্র আকার ধারণ করে না। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। চিকিৎসকদের পরিভাষায় সংক্রমণের তীব্রতা ‘মডারেট টু সিভিয়ার’। শিশুদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও কোনও প্রাপ্ত বয়স্কের যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যানসার কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের জন্য কমে গিয়ে থাকে, তবে তাঁর ক্ষেত্রেও অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। 

অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের ফলে শিশুদের মধ্যে হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলাব্যাথার পাশাপাশি কনজাঙ্কটিভাইটিসও হতে পারে। সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস এবং অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম(এআরডিএস) হতে পারে। প্রবল শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া উপায় নেই। 

চিকিৎসা কী

কোভিডের মতো অ্যাডিনো ভাইরাসেরও নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। এক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি কাজ করে না। তাই সাপোর্টিভ চিকিৎসা করতে হয়। অর্থাৎ ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর এলে জ্বরের চিকিৎসা, গা-হাত-পা ব্যাথা হলে তার চিকিৎসা ইত্যাদি। অধিক শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন এবং নেবুলাইজার দিতে হবে। এআরডিএস’র ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন ছাড়া উপায় নেই। 

 

অ্যাডিনো ভাইরাসের যেহেতু আলাদা করে কোনও চিকিৎসা নেই, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা স্বল্প মেয়াদে করা সম্ভব নয়। কোভিডের সময় থেকে আমরা বিভিন্ন ‘ইম্যিউনিটি বুস্টারের’ কথা শুনে আসছি। এগুলি বুজরুকি ছাড়া কিছুই নয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়াতে সারা বছর ধরে পুষ্টকর সুষম খাবার, যেমন তাজা শাক সবজি, মরশুমি ফল ইত্যাদি খেতে হবে। ৫-১০ মিনিট হলেও ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। ৫-১০ দিন ধরে নিয়ম মেনে চললে ‘ইম্যুউনিটি’ বাড়বে না। 

যদিও শরীরের রোগ প্রতিরোধী স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলেও সমস্যার। কোভিডের সময় আমরা দেখেছি ইম্যিউনিটি বাড়ার ফলে কোভিডকে তো হারানো গেল। কিন্তু বর্ধিত ইম্যিউনিটির ফলে শরীরে তৈরি হওয়া সাইটোকাইন অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে করণীয় কী? কোভিডের মতো অ্যাডিনো ভাইরাসও আরটিপিসিআর টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে কলকাতার ১-২ জায়গা ছাড়া কোথাও আরটিপিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা নেই। 

যেহেতু অ্যাডিনো ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই, তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, আরটিপিসিআর টেস্ট করে লাভ কী? কেউ পজিটিভ ধরা পড়লেও তো সেই সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্টই করতে হবে। 

সতর্কতা, পরীক্ষা

কিন্তু তারপরেও টেস্ট করা প্রয়োজন। তার প্রধান কারণ, এটা নিশ্চিত হওয়া যে এই সংক্রমণ অ্যাডিনো ভাইরাসের জন্যই হচ্ছে। অ্যাডিনোর নাম করে অন্য কোনও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে না। কিন্তু তার জন্য সারা রাজ্যে এই পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটি জেলায় বাচ্চাদের ওয়ার্ডগুলি উপচে পড়ছে। কিন্তু কলকাতার নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা ছাড়া রাজ্যের কোথাও এই টেস্ট হচ্ছে না। 

বিগত দেড় মাস ধরে শিশুদের মধ্যে জ্বরের খবর আসছে। যেই ২-৪টি টেস্ট করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে মনে করা হয়েছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাডিনো ভাইরাস দায়ী। কিন্তু তারপরেও রাজ্য প্রশাসনের বিশেষ হেলদোল নেই। গত ১৫-২০ দিন ধরে শিশু হাসপাতালগুলির পেডিয়্যাট্রিক ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটগুলি উপচে পড়ছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল, ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে একাধিক শিশু মারা গিয়েছে। প্রতিটি জেলার হাসপাতাল থেকে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে।

অ্যাডিনো ভাইরাসের মহামারিতে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এখনও সরকারের তরফে যথাযত প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

একদিকে যেমন সারা রাজ্যে টেস্টের পরিকাঠামো ছড়ানো হয়নি, তেমনই মঙ্গলবার এসে রাজ্যের তরফে অ্যাডিনো সংক্রমণ ঠেকাতে গাইডলাইন প্রকাশ করা হল।  গাইড লাইন প্রকাশ করতে এতদিন লাগে? ৩-৪ দিন ধরে সংবাদ মাধ্যম হইচই শুরু করেছে। তা নইলে গাইডলাইন প্রকাশে আরও দেরি হত।

জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ না করা হলে বলা এবং বোঝা যাবে না এই সংক্রমণ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং সেটা স্পষ্ট না হলে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাবে। 

একইসঙ্গে জ্বর হলেই শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর কিংবা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা এখনও বেরোয়নি। 

জ্বর কিংবা সর্দি নিয়েও শিশুরা ১৫ দিন স্কুলে গিয়েছে। মেলামেশা করেছে। অবাধে ভাইরাস ছড়িয়েছে। নির্দেশিকা পাঠিয়ে শিক্ষকদের বলা প্রয়োজন ছিল- কোনও বাচ্চার জ্বর কিংবা সর্দি হয়েছে বুঝলেই তাকে বাড়ি পাঠান। নির্দেশিকার অভাবে সেটা করা হয়নি। হাসপাতালের শিশু বিভাগ উপচে পড়ছে। 

একইসঙ্গে সুইমিং পুল কিংবা পুকুর থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এখনও কলকাতার সুইমিং পুলগুলি খোলা রয়েছে। সেখানে সরকারের তরফে নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলা হয়নি, অসুস্থ শিশুকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। ২-৩ সপ্তাহ ধরে বাড়াবাড়ি হয়ে চলেছে, তাও সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। 

বড় কিংবা শিশু, ২দিনের বেশি জ্বর থাকলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাস্ক পরুন, ভিড় জায়গা এড়ান। বড়রা জ্বর কিংবা সর্দিতে ভুগলে বাচ্চাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। বাচ্চা অন্য কোনও অসুখে ভুগলে আরও সতর্ক হতে হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment