Anubrata mondal

অনুব্রতকে আরও ঘিরছে সিবিআই, ছায়াসঙ্গী উপ পৌরপ্রধানকে জেরা

রাজ্য

গোরু পাচারের টাকার গন্তব্যস্থলের হদিশ পেতে এবার অনুব্রত মণ্ডলের ছায়াসঙ্গী বোলপুর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান ওমর শেখকে জেরা করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। 
কৌতূহল ছিল, অনুব্রতর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে সিদ্ধহস্ত বোলপুরের এই তৃণমূল নেতা কীভাবে সিবিআই’র তলবের বাইরে রয়েছেন? অনুব্রত মণ্ডলকে আদালতে তোলার আগের দিন সেই কাউন্সিলর তথা বোলপুর পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান ওমর শেখকে জেরা করলেন সিবিআই’র গোয়েন্দারা। 
বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের রতনকুঠিতে সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছিল ওমর শেখকে। প্রথম দফায় পনেরো মিনিটের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। কিছুক্ষণ পরেই ফের তাকে হাতে নথি নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় রতনকুঠিতে। এরপর প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। 
ওমর শেখকে অনুব্রতর ‘ছায়া’ বললে ভুল হয় না। অনুব্রত মণ্ডলের বিশ্বস্তদের বৃত্তে একদম প্রথমেই থাকবে ওমর শেখের নাম। মনোনয়নে বাধা, ভোট লুট থেকে শুরু করে অনুব্রত মণ্ডলের যে কোনও কুকাজে ডাক পড়ত এই ওমরের। লোকলস্কর, লেঠেল বাহিনীর অন্যতম সরবারহকারী এই ওমর শেখ। 'ওমরের বাহিনী'তেই পুরো ভরসা ছিল অনুব্রতর, এতটাই কাছের মানুষ সে। 
সেই ওমরের বিপুল জমি ও সম্পত্তির হদিশ সিবিআই পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই বিপুল সম্পত্তি ও টাকার উৎস কী? বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত গোরু পাচারের মসৃণ ‘রুট’ করে দেওয়ার বিনিময়ে এনামুল হকের থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ কাঁচা টাকাও কি ওমরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছিলেন মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য বাহুবলী নেতা অনুব্রত মণ্ডল ? সেই রহস্যের সন্ধানেই সিবিআই’র এই তৎপরতা বলে মনে করা হচ্ছে। 
আরও গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি সিবিআই খোলসা করতে চাইছে, তা হলো, অনুব্রতর হয়ে সায়গলের মতো ওমরও মিডলম্যানের কাজ করত কি না?  কারণ, ওমরের ফোন নিয়মিত ব্যবহার হতো অনুব্রত মণ্ডলের মাধ্যমেই। ফলে সেই ফোনে আসা ও ফোন থেকে যাওয়া বার্তা গোরু পাচার মামলায় নতুন তথ্যের হদিশ দিতে পারবে। এর আগে সিবিআই গোরু পাচার মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল, এনামুল হকের সঙ্গে বিভিন্ন ভুয়ো মোবাইল নম্বরের মাধ্যমেই পাচারের কারবারে নজর রাখতেন অনুব্রত। মূলত তাঁর দেহরক্ষী বর্তমানে তিহার জেলে বন্দি সায়গল হোসেনের ফোনের মাধ্যমে গোরু পাচারের কিংপিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। এক্ষেত্রে ওমরের মাধ্যমেও এনামুল হক কিংবা গোরু পাচারকারীদের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল ফোনে কথোপকথন চালাতেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা।
তবে এদিন তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা যায়, সাংবাদিকদের প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচতে গাছপালা পেরিয়ে, বেড়া পার হয়ে সিবিআই ক্যাম্প অফিসে হাজিরা দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়!  রতনকুঠি গেস্ট হাউসে সিবিআই ক্যাম্প অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। মূল গেট দিয়ে না গিয়ে, পিছনে জঙ্গলঘেরা তারের বেড়া পার হয়ে ক্যাম্প অফিসে লুকিয়ে ঢোকেন এই তৃণমূলী কাউন্সিলর।
ওমর শেখ ছাড়াও এদিন ফের জেরার মুখে পড়েছিলেন বোলপুরের অপর কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মুন। এর আগে কখনও তাঁর বাড়িতে গিয়ে, কখনও ডেকে পাঠিয়ে সিবিআই একাধিকবার জেরা করেছে এই কাউন্সিলরকে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর পৌরসভার এই তৃণমূল কাউন্সিলরের অ্যাকাউন্টে কীভাবে এককালীন ৪৬ লক্ষ টাকা এল, কীভাবে এই কাউন্সিলের অ্যাকাউন্টে একাধিক বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে, মূলত সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বলা ভালো, সিবিআই নিশ্চিত হয়েছে, একদা অনুব্রতর বাড়িতে ‘কাজের লোক’ হিসাবে থাকা, পরবর্তীতে কাউন্সিলর হয়ে ওঠা এই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে বিপুল লেনদেনের উৎসতেও রয়েছে অনুব্রত-যোগ। এদিন ফের একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে লটারি এজেন্সির মালিক, ব্যাঙ্ক আধিকারিকদেরও। 
উল্লেখ্য, এর মধ্যেই গোরু পাচার মামলায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল, হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারি, ব্যবসায়ী রাজীব ভট্টাচার্য, সঞ্জীব মজুমদার, শিক্ষা ব্যবসায়ী মলয় পীঠকে দিল্লিতে ডেকে জেরা করেছে ইডি। বুধবারই ইডি একযোগে ১৩ জনকে জেরা করেছে দিল্লির সদর দপ্তরে। তিন দিন নাগাড়ে জেরা করা হয়েছে অনুব্রতর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে। মেয়ের বয়ান অনুব্রত মণ্ডলের অস্বস্তি আরও বাড়াতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র সূত্রে।

 

Comments :0

Login to leave a comment