Editorial

পর্দার আড়ালে

সম্পাদকীয় বিভাগ

যতদিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে মুর্শিদাবাদের ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা নয়। বেশ কিছুদিন ধরে আঁটঘাট বেঁধে পরিকল্পনা করে গোলমাল বাধানো হয়েছে এবং তাতে সাম্প্রদায়িক রং চড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে। একাজ বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিক সমাজ মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক ও উসকানিমূলক প্রচারের মাধ্যমে সংগঠিত করেছে হিন্দুত্ববাদীদের আইটি সেলের বাহিনী। তার প্রত্যাঘাতে মুসলিম মৌলবাদীদের বাহিনীও পালটা উসকানি প্রচারে শামিল হয়। দু’পক্ষকেই পেছন থে‍‌কে মদত জোগায় এবং তাতায় কেন্দ্রের ও রাজ্যের শাসক দল। লক্ষ্য একটাই যে কোনোভাবে গোলমাল একটা বাধানো সম্ভব হলে তাকে সামনে রেখে দুই শাসক ঝাঁপিয়ে পড়বে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে। মোদী সরকারের ওয়াকফ আইন সংশোধনীকে হাতিয়ার করে আরএসএস-বিজেপি উঠে পড়ে নামে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর ও উসকানির কা‍জে। একইভাবে মুসলিম মৌলবাদী শক্তিও বিরোধিতার নামে হিংসা ছড়ানোর উসকানি দেয়। তলে তলে এমন উত্তপ্ত আবহে যখন ওয়াকফ বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হয় তাতে ঢুকে পড়ে হিংস্র ও উন্মত্ত দুষ্কৃতীরা। সাধারণ প্রতিবাদীদের অজান্তেই ধর্মীয় মৌলবাদ মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা লন্ডভন্ড কাণ্ড শুরু করে দেয়। পুলিশের গাড়ি পোড়ায়, দোকানপাট-বাড়িঘরে আগুন দেয়, লুটপাট করে। আর আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বলা ভালো পুলিশই পরোক্ষে এমন এক ভয়ানক কাণ্ড ঘটানোর সুযোগ করে দেয়।
পুলিশ যদি সত্যি সত্যি চাইতো এমন অশান্তির আগুন জ্বলত না। শুরু হলেও অচিরেই তা বন্ধ করা যেত। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা এতটা অপদার্থ নিশ্চয়ই নয় যে অনেকদিন ধরে চলা এমন ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। অবশ্যই জানত। কিন্তু রাজ্যের শাসকরাই পদক্ষেপ না নিতে বাধ্য করেছে। চেয়েছে এমন একটা ঘটনা ঘটুক। তাহলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেহারা দিয়ে বিভাজন সহজ করা যাবে। হিন্দু ও মুসলিম ভোট সরাসরি বিভাজন করে তৃণমূল-বিজেপি ভাগ করে নিতে পারবে। তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী মানুষও সাম্প্রদায়িক হিংসার আতঙ্কে বাধ্য হবে বিজেপি ও তৃণমূলের ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই দ্বিদলীয় রাজনীতি জমি উর্বর করা এটা ছিল সহজ সুযোগ।
মানুষকে যদি পরধর্ম বিদ্বেষী করে তোলা যায় এবং সাম্প্রদায়িক ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে তারা বাকি সব ভুলে যাবে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও অপদার্থতা ভুলে যাবে। বেকারির যন্ত্রণায় দুই শাসককে কাঠগড়ায় তোলার বদলে তাদেরকেই আশ্রয় করবে। মানুষ যাতে তাদের প্রতিদিনের জীবন-যন্ত্রণা, রোজগারহীনতা, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শাসককে প্রশ্ন করতে না পারে, বিকল্প রাজনৈতিক ভাষ্য নিয়ে ভাবতে না পারে তার জন্য হিংসার আগুন জ্বালিয়ে তাতে সাম্প্রদায়িক ঘৃতাহুতি দেওয়া। জনগণকে বোকা বানিয়ে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা ও সীমাহীন লুটতরাজ চালিয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করার সাজানো খেলা।

Comments :0

Login to leave a comment