ডাবল ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও গুজরাটে তাদের নির্বাচনী এক্সপ্রেস বেলাইন হবার আশঙ্কা করছে বিজেপি। তাই সামান্যতম কোনও ঝুঁকি না নিয়ে গুজরাটের নেতাদের উপর ভরসা না করে নির্বাচনের যাবতীয় দায়দায়িত্ব নিজেদের কবজায় রেখেছেন মোদী-শাহরা। বস্তুত প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে, ইস্যু নির্বাচন, প্রচার কৌশল সবটাই হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে। রাজ্য বিজেপি কার্যত দম দেওয়া পুতুলের মতো কাজ করছে।
গত ২৭বছর রাজ্যে এবং ৮বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় বিজেপি। তারমধ্যে মোদী নিজে দীর্ঘকাল ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীর তৈরি গুজরাট মডেলকে প্রচারের অন্যতম ইস্যু করেছিলেন মোদী নিজে। সেই সময় রাজনীতিতে গুজরাট মডেল নিয়ে আলোচনা হলেও এখন তা ধারে ও ভারে গুরুত্বহীন। গুজরাট মডেল নামক চোখ ধাঁধানো মোড়কবন্দি পণ্যটি গুজরাটের ভোটের বাজারে বিকোচ্ছে না। মোদী মার্কা গুজরাট মডেলের উন্নয়ন আর গুজরাটবাসীদের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বিশেষ টানছে না। উন্নয়ন মানে তো আর কিছু বড় বড় ফ্লাইওভার, শিল্পপার্ক, কারখানা নয়। কয়েকটা বড় বড় শহর ও অগ্রসর জেলা মানে গোটা গুজরাটের মুখে থাকা না। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে গুজরাট দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম, আর শিল্প উৎপাদনে প্রথম। তেমনি দেশে বণিকশ্রেষ্ঠরাও গুজরাটের। আবার ব্যাঙ্কের টাকা বিদেশে পালানো শিল্পপতি ব্যবসায়ীরাও প্রায় সকাল গুজরাটে। বাইরের জলুসের আড়ালে জেলাগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য গুজরাটেই বেশি। তেমনি পারিবারিক আয় বৈষম্যের দিকেও সামনের সারিতে গুজরাট। মোদীর গুজরাট মডেল আসলে তেলা মাথায় তেল দেওয়া এবং ধান্ধার ধনতন্ত্রের ফসল।
এতদ্সত্ত্বেও সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের বিজেপি’র ভোটের অংশ এবং আসন কমেছে। গত নির্বাচনে (২০১৭ সাল) মাত্র ৯৯টি আসনে জিতে কোনোরকমে সরকার গড়েছে বিজেপি। তারমধ্যে আবার বেশ কিছু আসনে জিতেছে নামমাত্র ভোটে। বিশেষ করে জনজাতি অধ্যুষিত কেন্দ্রে বিজেপি’র অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। নতুন প্রজন্মের মধ্যে কাজের চাহিদা এবং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আঁচ পেয়ে ডাবল ইঞ্জিনের সব বগি নিয়ে মোদী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন গুজরাটে। গত মার্চ মাস থেকে ঘন ঘন গুজরাট সফর করেছেন তিনি। ৩০ জেলায় গিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন। গুজরাট মডেল বা গুজরাট সরকার দিয়ে ভোটে চিঁড়ে ভেজানো যাবে না। তাই মোদীই এবারের নির্বাচনে বিজেপি’র একমাত্র প্রচারের ইস্যু। যাবতীয় প্রচার হচ্ছে মোদীকে ঘিরে। গুজরাটের কিছু নেই, মোদীর ভিশন, মোদীর ভাবমূর্তি, মোদীর শক্তি ও ক্ষমতা ইত্যাদিই প্রধান। আর স্বয়ং মোদী কখনো বলছেন তিনি মহাত্মা গান্ধীর পথে চলেছেন। কখনো বলছেন সুভাষচন্দ্র বসুর পথে, দেওয়ালির আগে বলেছেন রামের ভাবনা অনুসরণ করে দেশ চালাচ্ছেন। বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে তিনি বলেছেন আদিবাসীরাই তাঁর প্রেরণা। বোঝাই যাচ্ছে বড্ড চাপে আছেন। এরই ফাঁকে জাগিয়ে তুলেছেন গুজরাট গৌরব’। দাবি করেছেন আজকের গুজরাট তাঁর হাতেই তৈরি। তিনিই নাকি এই গুজরাটের মালিক। মোদীর বিচিত্র ভাষ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে গুজরাট নিয়ে তিনি কতটা উদ্বিগ্ন। গুজরাট আর মোদীকে তিনি এক করে দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে জিততে চাইছেন। এছাড়া উপায়ই বা কি। গুজরাটের জয়পরাজয় যে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে অনেকটাই প্রভাবিত করবে।
Editorial
ডাবল ইঞ্জিন কি বেলাইনের আশঙ্কা
×
Comments :0