Podojatra

রুটি-রুজির যন্ত্রণা অনুভবের সঙ্গীরা গ্রামের পর গ্রামে

রাজ্য

চোর আর লুটেরাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে লাল ঝান্ডার পদযাত্রা ঘুরছে মাঠ-ঘাট-পথ পেরিয়ে খেতমজুর, কৃষকের উঠানে। গরিবের জীবন-যন্ত্রণার ভাষাই জাঠার স্লোগান। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যাওয়ার পথে কৃষক-খেতমজুর-গাঁয়ের শ্রমজীবী মানুষ মনে করছেন, এই মিছিল তাঁদের রুজি–রুটির আন্দোলনকে মজবুত করার কথাই বলছে। ‘‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে বর্ধমান সদর-১ এলাকার কৃষক-শ্রমিক পদযাত্রা হলো বাঘাড়-১ এলাকার পিলখুড়ি থেকে মাহিনগর পর্যন্ত এবং রায়ান-১ অঞ্চলের নাড়ি মোড় থেকে নাড়ি গ্রাম,  কপিবাগান, বনমসজিদ, খাঁপুকুর, সুকান্তপল্লি, আদিবাসী পাড়া হয়ে বেলবাগান পর্যন্ত। মিছিল শেষে সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন দেবু রায়। বক্তব্য রাখেন শ্রমিকনেতা মৃণাল কর্মকার, চন্দন সোম্য, হাসনাত জালালী।
মঙ্গলকোট ব্লক গণসংগঠনগুলি উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে  ইছাবট গ্রাম থেকে পালিশগ্রামে। বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে, শ্রম কোড বাতিলের দাবিতে, বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে স্লোগান ওঠে পদযাত্রায়। কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম চাই, ১০০ দিনের কাজ চাই, বকেয়া মজুরি চাই, মূল্যবৃদ্ধি থামাও, জিনিসের দাম কমাও, চোরদের হটিয়ে দুর্নীতিমুক্ত জনগণের পঞ্চায়েত গড়তে চাই— এই দাবি নিয়ে পদযাত্রার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। পদযাত্রায় হেঁটেছেন প্রাদেশিক কৃষক সভার নেতৃবৃন্দ ও পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষক আন্দোলনের নেতা অচিন্ত্য মল্লিক। পথযাত্রায় হাঁটছেন সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সহসভাপতি দুর্যোধন সর, খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা নেতা শাজাহান চৌধুরি, বিপদতারণ নন্দী, বৃন্দাবন ঘোষ প্রমুখ। এদিন  আউসগ্রাম থানার দিকনগর-১ পঞ্চায়েত এলাকা এবং দেবশালা পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি পদযাত্রা হয় গরিব শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে। 
দিগনগর-১ এলাকার পদযাত্রার সূচনা করেন পূর্ব বর্ধমান জেলার গণআন্দোলনের নেতা সৈয়দ হোসেন। তিনি শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় পা মেলান। এই পদযাত্রাটি আনন্দবাজার আদিবাসী পাড়া থেকে শুরু হয়। হাটতলা, মালদাপাড়া, রথতলা হয়ে গোন্যা গ্রামে পৌঁছে শেষ হয়। এই মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন আলমগীর মণ্ডল, সুশান্ত ঘোষ, গৌতম রায় প্রমুখ। মিছিলের সামনে পিছনে ছিল ব্যান্ড পার্টি। লাল পতাকা এবং নানা রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো দশটি টোটো ছিল এই পদযাত্রায়। এই বর্ণাঢ্য মিছিল গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাসিন্দারা আগ্রহের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে পদযাত্রাকে সংবর্ধিত করেন। দেবশালা অঞ্চলের পদযাত্রা দেবশালায় শুরু হয়। এখান থেকে রাইকোনা কৌচা কাঁকড়া, গোবিন্দপুর হয়ে বিলাসপুরে দুপুরে খাওয়ার জন্য বিরতি হয়। তারপর আবার শ্রমজীবী মানুষের এই পদযাত্রা জঙ্গল ঘেরা রায়গঞ্জ হয়ে প্রদুমা গ্রামে গিয়ে শেষ হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সুরেন হেমরম, অলক রানা, কার্তিক কোনার প্রমুখ।
মেমারি-২ ব্লকের বড়পলাশন-১ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মালম্বা বাজারে সভার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রার উদ্বোধন করেন এসএফআই’র পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরি। সকালে মালম্বা বাজার থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে ভগবানপুর, বামুনিয়া, সারগাছি, হলধরপুর হয়ে উন্টিয়া গ্রামে দুপুরে শেষ হয়। গ্রামের মানুষই পদযাত্রীদের দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আবার বিকাল ৩টেয় পদযাত্রা শুরু হয়ে বস্তেপোতা, চকচকিয়া গ্রাম হয়ে মণ্ডলগ্রাম বিশেরপাড় বাজারে পৌঁছায়। সেখানে সভার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। গ্রামে গ্রামে পথসভাও হয়। পথসভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন কৃষকনেতা তাপস বসু, সুদেব ঘোষ, বলাই দত্ত, সাফাৎ মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা।
পদযাত্রায় ভাতার-২এরিয়া কমিটি এলাকার গ্রামগুলিতে ভালোই সাড়া মিলেছে শনিবার। মিছিলের যাত্রীদের ফুলমালা দিয়ে বরণ করেছেন গ্রামের মানুষ। সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকাতেও দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গিয়েছে। শনিবার বামুনারা অঞ্চলের কুমারুন থেকে শুরু করে রতনপুর, ঝুজকো ডাঙা, পানুয়া, চণ্ডীপুর, কাপসর, কানপুরে শেষ হয় আরেকটি পদযাত্রা। সেই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের দুপুরে ভাত খাইয়েছেন গ্রামের মানুষই। পদযাত্রায় পা মেলান সিপিআই(এম) নেতা বামাচরণ ব্যানার্জি, সিদ্ধার্থ রায়, সিতাংশু ভট্টাচার্য, তারাপদ ঘোষ, সুধাময় মালিক, রাস হাজরা, সেলিমা বেগম, আতাউর রহমান প্রমুখ। ভাতাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটার, কুলচণ্ডা, ভাতাড়, পালাড়, ভাতাড় বাজারের ৭টি বুথে পদযাত্রায় মানুষের উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছে। পদযাত্রার সূচনা করেন সুভাষ মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমান, নজরুল হক, সফিকুল ইসলাম, হরিহর চৌধুরি, ইন্দ্রজিৎ হাজরা, কবিরুল ইসলাম, জামাল হোসেন, সত্যনারায়ণ কর্মকার।
মেমারির তাতারপুরে এদিন পদযাত্রার সূচনা করেন মহিলা আন্দোলনের প্রবীণ নেত্রী ৯১ বছরের মহারানি কোনার। লাল পতাকার ঢেউ আছড়ে পড়ে মেমারির বিস্তীর্ণ গ্রামে। জাঠাকে কেন্দ্র করে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

Comments :0

Login to leave a comment