Gujarat Assembly Election

মসনদ ধরে রাখতে বিজেপি’র পথের কাঁটা সেই কর্মী পেনশনই

জাতীয়

Gujarat Assembly Election

 ‘গুজরাট মডেল বলে কিছু নেই। ওটা তো আসলে মোদীর মডেল- এখন তার পুরোপুরে বেআব্রু হয়ে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে যে বেরোজগারি মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে গেছে। রাজ্যে মুদ্রাস্ফীতিও ভয়ানক।’ এআইসিসি থেকে গুজরাট ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অশোক গেহলট জোরের সঙ্গেই একথা বলছেন। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের উপরতলার এই নেতা দাবি করলেন, ‘বেকারি আর লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ট মানুষ গুজরাটে বিজেপি-কে এবার উচিত শিক্ষা দেবেন।’


গত দু’দিন গুজরাটে কাটিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ব্যাপক প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া নজর করেছেন বলে জানালেন। বললেন, ভোটের ফলে এটা দেখা যাবে। কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘একটা সময় ওখানে রাস্তা ঘাট ভালো ছিল। এখন সেগুলি আর সেই অবস্থায় নেই। ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না। তাদের কোনও কাজের সুযোগও নেই। যদি কেউ কোনও চাকরি পেয়েও যায়, তাহলে মাইনে বড্ড কম। কর্মচারীরা অসন্তুষ্ট। গুজরাটের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভয় রয়েছে’। 
বেকারি-মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষের ক্ষোভের সঙ্গেই কর্মী-অসন্তোষকেও ভোটের লড়াইয়ে কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস। বিশেষ করে নয়া পেনশন প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত লক্ষ লক্ষ কর্মচারীর সমর্থন আদায়েই নজর কংগ্রেসের। ক্ষমতায় এলে ওই নয়া প্রকল্প আরব সাগরে ছুঁড়ে ফেলে পুরানো পেনশন প্রকল্প ফের চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে কংগ্রেসের সঙ্গে সদ্য গুজরাট অভিযানে নামা আপও। 


২০০৫-এর পয়লা এপ্রিল বা তার পর চাকরিতে যোগদানকারী কর্মচারীদের জন্য গুজরাট সরকার নতুন কন্ট্রিবিউটারি পেনশন স্কিম চালু করেছে। এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এনপিএস তহবিলে কর্মীরা মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার ১০শতাংশের সমান অবদান রাখবে। কেন্দ্রের প্রকল্পের অধীনে ২০১৯-এর ১ এপ্রিল থেকে একজন কর্মীচারীর বেতন ও ডিএ-র ১০শতাংশের বিনিময়ে সরকার তার মাত্র ১৪শতাংশ অবদান রাখবে। কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে গোটা দেশের মতোই গুজরাটেও অসন্তোষ-বিক্ষোভ রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্প বাতিলের দাবি এনিয়ে আন্দোলনেও নেমেছে লাখো কর্মচারী। ভোটে তার প্রভাব পড়বেই।


ইঙ্গিত মিলেছিল গত ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে গুজরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল শিক্ষক এবং সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে। দাবি ছিল, পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার। বস্তুত, গত আগস্ট থেকেই পুরানো পেনশন প্রকল্পের দাবিতে ওই রাজ্যে সরকারি কর্মী ও শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলন ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিচ্ছিল, বিধানসভা ভোটে বিজেপি-কে যার ‘ফল’ ভুগতে হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
ভোট চলে যাবে আন্দাজ করেই আড়ালে আবডালে সরকারের অবদান বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে তার কোনও নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি। সরকারি প্রাইমারি স্কুল টিচারদের সংগঠন অখিল ভারতীয় প্রাথমিক শিক্ষক সঙ্ঘের কার্যকরী সভাপতি দিগ্বিজয় সিং জাদেজার কথায়, ‘আমরা ১৫দফা দাবি আন্দোলন চালাচ্ছি। সরকার একটা কমিটি গড়েছে। তারা বলেছে জাতীয় পেনশন প্রকল্পের তহবিলে সরকার তার অবদান বাড়াবে। যদিও এখনও পর্যন্ত এনিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।’
প্রায় সাত লক্ষ সরকারি কর্মচারী পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় দুই লক্ষ প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক ‘গণছুটি’ নিয়ে গান্ধীনগরে বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। জাদেজা সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা। 


আসন্ন ভোটের আগে সেই আন্দোলন ফের নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে মোদীর জন্মদিনেই তার বি প্রমাণ মিলেছে। গোটা রাজ্যে সেদিন লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী ‘গণছুটি’ নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। চাপের মুখে সরকার অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দেয়। 
যদিও ইশারা-ইঙ্গিত বা মুখের কথায় চিড়ে ভিজছে না। সরকারি কর্মীদের সংগঠন রাষ্ট্রীয় সংযুক্ত মোর্চার আহ্বায়ক মহেশ মোরির কথায়, ‘সরকারের প্রতিশ্রুতি তো কেবলই মৌখিক। সরকারিভাবে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।’ মোরি আরও বললেন, ‘সরকারের অবস্থান এখনও পুরানো প্রকল্প ফেরানোর ব্যাপারে অনিশ্চিত। কিন্তু আমরা সমস্ত কর্মচারীর জন্য ওই পুরানো পেনশন প্রকল্পই লাগু করার দাবি জানিয়েছি। সরকার তো কোনও নোটিফিকেশনই করছে না।’ 


জাদেজা জানালেন, তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মচারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার ভিত্তিতেই সমস্ত রাজ্যেই পুরানো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চলছে। তাঁর কথায়, ‘ওই পুরোনো প্রকল্পই ভালো, কারণ তাতে অবসরপ্রাপ্ত তার সেই সময়ের বেতনের অর্ধেক পেনশন হিসেবে পান। এই এনপিএস শেয়ার বাজারের উপর চলছে আর কর্মীদের পেনশন কমছে।’ 
জাদেজা বললেন, গুজরাটের কর্মচারীরা জানেন যে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড পাঞ্জাবের তো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য তাদের কর্মীদের পুরানো পেনশন প্রকল্পে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। অথচ বিজেপি শাসিত ১৭টি রাজ্যেই এনপিএস চলছে। জাদেজা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভোটে কী করতে হবে সময়মতো তাঁরা ঠিক করে নেবেন।’ 
কর্মচারী নেতা সরাসরি খোলসা না করলেও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, আমেদাবাদের মসনদ ধরে রাখার পথে বিজেপি-র বড় কাঁটা ওই পেনশন। গতকাল হিমাচলের ভোটেও নিশ্চিতভাবে এটা অন্যতম নির্ণায়ক হতেই পারে।

Comments :0

Login to leave a comment