Khet Majoor Rally

‘চাই ১০০ দিনের কাজ, মেটাতে হবে বকেয়া’ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ খেত মজুর নেতৃত্বের

রাজ্য

অনিন্দ হাজরা, সৌরভ গোস্বামী : কলকাতা

পুলিশি অসহযোগিতা উড়িয়ে দিয়ে রানী রাসমণি এভিনিউ-এর ৩টি লেনেরই দখল নিয়েছেন খেতমজুররা। ২০১৫ সালে সংগঠন তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম এত বড় সমাবেশ করছে খেতমজুর ইউনিয়ন।
স্মার্ট মিটার থেকে ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি একাধিক বিষয় নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল এবং দেশের বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন খেত মজুর নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ বলেব, ‘‘ধর্মতলা অনেক ঐতিহাসিক আন্দোলনের সাক্ষী। সেই ঐতিহাসিক জায়গায় খেতমজুররা জমায়েত হয়েছেন। কাজের দাবিতে। গ্রামকে বাঁচাতে। রাজ্যের গরীবরা আজ এখানে এসেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের দাবি আছেই। কিন্তু মূল দাবি কাজের। গ্রামে কাজ নেই। ছেলেরা বাইরে গিয়ে মারা যাচ্ছে। ২ লক্ষ টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে পারবে? মাইক্রো ফাইন্যান্সের চাপে খেতমজুর দম্পতি আত্মহত্যা করল। ২ কোটি খেতমজুর রাজ্যের বাইরে কেন?’’ 


পঞ্চায়েতে শাসক দলের লাগামহীব দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘তুমি ভাবছ চুরি করে পঞ্চায়েত দখল করলেই মানুষ চুপ থাকবে। মদ মাংস দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখা যাবে না। সেই মানুষ ইসলামপুর, ভাংড়, রানীনগরে লড়েছেন। ৭ জন মানুষ জীবন দিয়ে গ্রামে গণতন্ত্র ফিরিয়েছেন আংশিক।’’ 
রাজ্য ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। কাজ করে টাকা পায়নি শ্রমিকরা। রাজ্য সরকার দাবি করছে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কেন্দ্র বলছে হিসাব দিলে টাকা দেবে। এই পরিস্থিতিতে বামপন্থীদের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই দাবি করে আসা হচ্ছে শ্বের পত্র প্রকাশ করার। সেই প্রসঙ্গ টেনে ঘোষ বলেন, ‘‘এখন তৃণমূল বলছে ১০০ দিনের কাজের টাকা আনতে ধর্না দেবে। তৃণমূল কেন কোনওদিন ১০০ দিনের কাজ নিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখেনি। মমতা নিজে লোকসভায় একটা শব্দ বলেনি এই নিয়ে। গ্রামে মেশিন বাড়ছিল। গতর সরবস্ব মানুষ কি করবে? সেই মানুষের কাজের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু হল। ১ কোটি সই সংগ্রহ হল বাংলা থেকে। ৬০ জনের বেশি সাংসদ লড়ল। তারপর ১০০ দিনের কাজ আইন হল। আজ ৮৪ লক্ষ জব কার্ড বাতিল হল। তৃণমূল ১০০ দিনে চুরি করেছে। সেই সুযোগে মোদী এখানে ২ বছর কাজের টাকা বন্ধ করেছে। যদিও ২ মাসের বেশি বন্ধ রাখা যায়না।’’ 


তিনি আরো বলেন, ‘‘মোদী মমতাকে লড়াইয়ের ময়দানে হারাতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। হিন্দু-মুসলিম-আদিবাসী-কুরমি লড়াইয়ে ভুললে হবেনা। মজুরির দাবি, কাজের দাবিতে লড়াই জোরদার করতে হবে। মোদী মমতাকে গদি থেকে নামাতে না পারলে এরাজ্যের খেতমজুরদের ভালো দিন আসবে না।’’

স্মার্ট মিটারের প্রসঙ্গ টেনে ঘোষ বলেন, ‘‘কেরালা স্মার্ট মিটার চালু করেনি। কিন্তু আদানির নমক খেয়ে তৃণমূল এরাজ্যে স্মার্ট মিটার চালু করতে চাইছে।’’
রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে তারা এখানে এসছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটে অংশগ্রহণ করেছে দরিদ্র মানুষ। তাদের ভীট লুট করল। ভোট দিতে দিল না। যে পব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পীঠস্থান সেখানে গরিবের ভোট লুট করেছে মমতা ব্যানার্জি। গ্রামীন শ্রমজীবির কাজ নেই। বিক্লপ আয়ের উৎস খোজো। সংসদে লড়াই করো। তার এতগুলো এম পি। অথচ তারা চুপ। আমরা করেছিলাম আইন। ২০০৫ সালে। সেই আইনের টাকা ২০১১ পর থেকে চুরি করছে মমতা ব্যানার্জির দল।’’ 


তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে চাকরি নেই। ছেলেমেয়েরা অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। কৃষিতে আয় নেই। অইঞ্চায়েতগুলো কে শুকিয়ে মারা হচ্ছে। দিল্লি টাকা দিচ্ছে না। আর রাজ্যে টাকা চুরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না দিল্লি। তাই গ্রামে গ্রামে ১০০ দিনের কাজের দাবিতে মানুষকে সংগঠিত করতে হবে।’’
এদিনের সমাবেশে বন্যা টুডু অলচিকি ভাষায় বক্তব্য রাখেন। টুডু বলেন, ‘‘রানী রাসমণি রোড এর তিনটি লেন ভর্তি। আমরা আজ এখানে এসেছি। কাল নবান্ন যাব। এই কালো কালো রোদে পোড়া মানুষগুলো আজ অধিকারের জন্য পথে নেমেছে। আগে আপনি বলতেন লাল ঝান্ডা দেখা যায়না। আজ গরীব মানুষ কাদরে  কাদরে এসেছেন। পেটের জ্বালায় এসেছেন। কিন্তু এগুলো মিডিয়া দেখাবে না। মিডিয়া শুধু শহরের ছবি দেখাবে। কাল আমরা ১৪ তলায় কাদরে কাদরে যাব। স্কুল বন্ধ। স্কুল খোলা থাকলে আমাদের আদিবাসী ছেলেরা লেখাপড়া শিখবে। চাকরি চাইবে। তাই তাদের অশিক্ষায় ঢুবিয়ে রাখতে চাইছে।’’

কাজের প্রসঙ্গ তুলে টুডু বলেন, ‘‘আমরা এখান থেকে ফিরে সবার আগে  ৪-ক ফর্ম ফিল আপ করার দাবি তুলব গ্রামে গ্রামে। কাজ না মিললে পঞ্চায়েত বিডিও অফিস ঘিরব। তারপর জেলা ঘিরব। তারপর নবান্নের ১৪ তলা। মোদী ধর্ম ধর্ম করছেন। আমরা আদিবাসী মানুষ। আমরা পেটের জ্বালা বুঝি। আমরা গতর খাটিয়ে খাই। আমরা জানি, ধর্মের ধোঁয়ায় পেটে ভাত জোটে না।’’

Comments :0

Login to leave a comment