সর্বানন্দ সনোয়াল যা পারেননি হিমন্ত বিশ্বশর্মা তা করে দেখাচ্ছেন। আসামের বুকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভাষিক সংখ্যালঘুদের উপর নানাভাবে একের পর এক জুলুম চালিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষের স্থায়ী পরিবেশ তৈরিতে সনোয়ালকে টেক্কা দিচ্ছেন বিশ্বশর্মা।
তাঁর কথাবার্তা এবং কাজের ধরন দেখে এটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে ধর্মীয় মেরুকরণে তিনি গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও পেছনে ফেলে দিতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী হবার পর তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই হিন্দুত্বের নিক্তি মেপে নির্ধারিত হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রীর মতো আসামের মুখ্যমন্ত্রীও বুলডোজারকে তাদের সংখ্যালঘু বিদ্বেষের অন্যতম অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন।
কোনোরকম আগাম ঘোষণা ছাড়া সরকারি জমিতে যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরা বসবাসকারী হতদরিদ্র অসহায় মানুষদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রধানত নদীর চর এলাকায় উদ্বৃত্ত সরকারি জমিতে ভূমিহীন গরিব মানুষরা অস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে বসবাস করেন। সামান্য চাষবাস করে দিন মজুরি করে কোনোরকমে এদের দিন চলে। সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষ, যাদের নিজস্ব বাসস্থান করার সামর্থ্য নেই, তাদের উচ্ছেদ করাতেই বিশ্বশর্মার আনন্দ। আনন্দ অন্য কারণে।
তিনি কিন্তু সব সরকারি জমি থেকে সব বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করছেন না। করছেন বেছে বেছে ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের। তেমনি একবারের জন্যও ভাবছেন না উচ্ছেদের পর শিশু ও মহিলাদের নিয়ে মানুষগুলো কোথায় আশ্রয় নেবে। একবারের জন্যও ভাবছেন না তিনি এই মানুষগুলোরও মুখ্যমন্ত্রী। এদের জীবন জীবিকার উন্নয়নও তাঁর সরকারের দায়ের মধ্যে পাড়ে।
কিন্তু হিন্দুত্ববাদের আফিম খাওয়া মুখ্যমন্ত্রী বুলডোজার দিয়ে যাদের ভিটে মাটি ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন তাদের তিনি নাগরিক বা মানুষ হিসাবে দেখতে শেখেননি, শিখেছেন মুসলিম বা বাংলাভাষী হিসাবে দেখতে। তাই বিকল্প বাসস্থানের কথা না ভেবে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া করছেন।
এনআরসি-র মাধ্যমে যেমন ১৯ লক্ষ মানুষকে দেশহীন, অধিকারহীন, এমনকি পরিচয়হীন করে দেওয়া হয়েছে তেমনি ২৭ লক্ষ মানুষকে আধার কার্ড দেওয়া হয়নি। ফলত বিপুল সংখ্যক মানুষ সমস্ত ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বছরের পর বছর কেটে গেলেও এই মানুষগুলোর ভবিষ্যৎকে চরম বিপন্নতার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এইভাবে হামলা, আগ্রাসন, ভয় দেখিয়ে মানুষকে হিন্দুত্বের কাছে বশ্যতা স্বীকার করানোর অভিযান চলছে।
এতকিছু করেও ক্ষমতা হারানোর ভয় কাটছে না। তাই জনবিন্যাসের অবস্থা বিচার করে জেলা বিলুপ্তি এবং এক জেলার অংশ অন্য জেলায় জুড়ে দেবার তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস শুরু হয় ১ জানুয়ারি থেকে।
{Ad}
তার কয়েক ঘণ্টা আগে আচমকা চারটি জেলাকে অন্য জেলার মহকুমায় পরিণত করা হয়েছে। ১৪টি জেলার বিভিন্ন অংশ পাশাপাশি জেলার মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। লক্ষ্য, ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুরা যাতে কোনও কেন্দ্রে বেশি সংখ্যায় থাকতে না পারে। দলীয় নির্বাচনী স্বার্থে নিজেদের তৈরি নতুন জেলাকেও বিলুপ্ত করে দিয়েছে। আসলে দেশের নাগরিক সাধারণ মানুষের স্বার্থ তাদের কাছে মূল্যহীন। মানবিকতাও অর্থহীন। দেশের মানুষকে তারা ধর্ম দিয়ে, ভাষা দিয়ে ভোটার হিসাবে চেনে।
Comments :0