‘‘হেগেল একস্থানে মন্তব্য করেছেন যে, বিশ্ব ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা ও ব্যক্তি যেন দুবার হাজির হয়। সেইসঙ্গে একথাটা বলতে তাঁর ভুল হয়েছিল: প্রথমবার সেই ঘটনা হাজির হয় বিয়োগান্ত নাটকের রূপে, দ্বিতীয়বার প্রহসন হিসাবে’’। ১৮৫২ সালে কার্ল মার্কস তাঁর বিখ্যাত বই ‘লুই বোনাপার্টের আঠারোই ব্রুমেয়ার’-এ তখনকার ফ্রান্সের অবস্থার যে বর্ণনা দিয়েছেন, ১৭০ বছর পর ২০২২ সালে এসেও ভারতে বিশেষ করে বাংলায় যেন তার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। ঠিক যেন লুই বোনাপার্টের সময়ের ফ্রান্সের অবস্থা এই রাজ্যে বিরাজ করছে। মার্কসের কথায়, ‘‘হিতৈষী সমিতি স্থাপনের অছিলায় প্যারিসের লুম্পেন-প্রলেতারিয়েত সম্প্রদায়কে কয়েকটি গুপ্ত বিভাগে সংগঠিত করা হয়েছিল, প্রত্যেক বিভাগের নেতৃত্বে ছিল বোনাপার্টপন্থী দালালরা এবং সব কয়টার কর্তা ছিল জনৈক বোনাপার্টপন্থী জেনারেল। যাদের জীবিকানির্বাহের উপায় এবং বংশপরিচয় সন্দেহজনক সেই বদস্বভাবের লোকদের পাশাপাশি, বুর্জোয়াশ্রেণির উচ্ছন্ন ভাগ্যান্বেষী উপাঙ্গগুলোর পাশাপাশি ছিল ভবঘুরের দল, বরখাস্ত সৈনিক, ছাড়া-পাওয়া জেলঘুঘুরা, পলাতক কয়েদি, ঠগ, জুয়াচোর,..পকেটমার, ধোঁকাবাজ, জুয়াড়ি, বারবনিতার দালাল, গণিকালয়ের মালিক, মুটে মজুর, কলমচি...সেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অনির্দিষ্ট, ভেঙে-পড়া জনতার অংশ’’।
বাংলায় নাগপুরের বর্গি হামলার দশ বছর
অতীতে দশ বছর ধরে বাংলার মানুষ নাগপুরের বর্গিদের লুটতরাজ ও তোলাবাজির শিকার হয়েছে। বর্গিদের অত্যাচারে বাংলা সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক — সমস্ত দিক থেকেই ছারখার হয়ে যায়। বর্গি কথাটি এসেছে মারাঠা শব্দ ‘বরচি’ থেকে। বরচি শব্দের অর্থ বর্শা। মারাঠি ‘ধনগর’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা একটা সাত হাত লম্বা কম্বল ও লম্বা একটা বর্শা বা বরচি নিয়ে লুটতরাজ করতে বের হতো। সম্রাটের অশ্বারোহী বাহিনীকে মরাঠি ভাষায় ‘বারগির’ নামে ডাকা হতো। বারগির শব্দের অপভ্রংশ হিসাবে ওরা বর্গি নামে পরিচিত হলো। লুটতরাজ করে অর্থসংগ্রহ করা এবং তারজন্য খুনখারাবি করাই ছিল হিংস্র চরিত্রের এই মানুষগুলোর পেশা।
১৭৪১ সালে নাগপুরের মহারাজা রঘুজি ভোঁসলের প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর পণ্ডিত বাংলার ওপর নজিরবিহীন আক্রমণ চালিয়ে সোনার বাংলাকে প্রায় শ্মশানে পরিণত করে। বাংলায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। বর্শা হাতে ঘোড়ায় চেপে বর্গিরা অতর্কিতে গ্রামে গ্রামে আক্রমণ চালাতো। নাগপুরের বর্গি হানাদারেরা মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ইত্যাদি এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় চার লক্ষ নিরীহ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম তারা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। কত মহিলাকে তারা ধর্ষণ করেছে তার হিসাব পাওয়া যায় না। প্রাণের ভয়ে ও নারীদের ইজ্জৎ রক্ষার জন্য বাঁকুড়া, বীরভূম এলাকার তাঁতিরা ভিটেমাটি ছেড়ে নিঃসম্বল অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাঁতিদের অভাবে কাপড় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কাপড়ের কারখানাগুলোও সব অচল হয়ে যায়। বর্গিদের তোলাবাজি ও অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। মায়েরা তাঁদের সন্তানদের বর্গির ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াতেন। হাজার হাজার মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে ফেলে। বাংলার মানুষ খাদ্যের অভাবে জঙ্গলের কচু, লতাপাতা ইত্যাদি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। সেই সময় বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব ছিলেন আলিবর্দি খান। আলিবর্দির ষোল বছরের শাসনকালের বেশিরভাগটাই কেটেছে বর্গিদের আক্রমণের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত থেকে। বর্গিরা মোট ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হলেও আলিবর্দির পক্ষে রাজ্য পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্গিদের ঘোড়া আসার পথ বন্ধ করে কলকাতাকে রক্ষা করার জন্য ১৭৪২ সালে তিন মাইল লম্বা একটা পরিখা খনন করা হয়। একে ‘মারাঠা ডিচ’ বা মারাঠা খাল বলা হতো। ১৭৯৯ সালে এই খালের বেশিরভাগটাই বুজিয়ে দিয়ে সার্কুলার রোড তৈরি করা হয়। ওই রাস্তাটাই দু-ভাগ করে বর্তমানে নামকরণ করা হয়েছে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড ও আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড। ১৭৫১ সালে বর্গিদের দলপতি মীর হাবিবকে ওড়িশার শাসনকর্তা হিসাবে মেনে নিয়ে এবং বছরে ১২ লক্ষ টাকা ‘চৌথ’ বা কর দেবার শর্তে আলিবর্দি খান ওদের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলায় শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
তৃণমূল : বাংলার নয়া-বর্গি
বাংলায় বর্গি হানার নতুন সংস্করণ হিসাবে তৃণমূলীরা গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাকে শিক্ষা সহ সমস্ত দিক থেকেই একটা কলঙ্কিত রাজ্যে পরিণত করেছে। বর্গি বাহিনীর আদলে তৈরি হয়েছে তৃণমূলের লুটেরা ও গুন্ডাবাহিনী। ঘোড়ার বদলে তৃণমূলী বর্গিবাহিনী তৈরি করেছে বাইকবাহিনী। বর্শার বদলে ওদের হাতে থাকে বন্দুক। বামপন্থীদের ওপর আক্রমণ ছাড়া অন্যসময় পুলিশ ও প্রশাসন টেবিলের তলায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। গত এক দশক ধরে আমাদের রাজ্যে যে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে আঠারো শতকের বর্গি আক্রমণ ও উনিশ শতকের মাঝামাঝি ফ্রান্সের পরিস্থিতি যেন হুবহু মিলে যায়। ক্ষমতায় তৃণমূলীরা আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বামপন্থীদেরকেই প্রথমে তারা তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে বেছে নেয়। তৃণমূলী জমানার প্রথম আট বছরেই সিপিআই(এম)’র ৭৪৬ জন কমরেডকে ওরা খুন করেছে। ১ লক্ষ ২ হাজারের বেশি বামপন্থী কর্মীকে তৃণমূলী-বর্গিরা ভিটেমাটি ছাড়া করেছে। তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করার জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি কমরেডের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এতো অত্যাচার করেও যাদের বাগ মানাতে পারেনি তাদের বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণ করার প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে।
বাম জমানার নজিরবিহীন সাফল্য
সত্তরের দশকের আধা-ফ্যাসিস্ত সরকারের পতনের পর ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বাম সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বামফ্রন্টের পঞ্চায়েত নীতি সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসা লাভ করেছে। ভারতের সংবিধানের ৭৪তম সংশোধনের মাধ্যমে বামফ্রন্টের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নীতিকে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। পঞ্চায়েতের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। নির্দিষ্ট সময়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পঞ্চায়েত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, পঞ্চায়েত কর্মী ইত্যাদি সবার জন্য একটা সম্মানজনক বেতন কাঠামো তৈরি করে বামফ্রন্ট সরকার। তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা, অবসরকালীন। ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। ভূমিসংস্কার আইনের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বণ্টনের ফলে গ্রামের অর্থনীতিতে জোয়ার আসে। গ্রামের মানুষের হাতে অর্থ আসার ফলে গ্রামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, রাস্তা, পরিবহণ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতি ঘটে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষা, ছাত্রীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে বিদ্যালয়মুখী করা হয়। গ্রামে ও শহরে ১০০ দিনের কাজ সহ গরিবদের জন্য নানা ধরনের ভাতা দেবার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু পুঁজিপতি গোষ্ঠীর একাংশ বামপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কৃষির পর বাম সরকার যখন রাজ্যের বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পের অগ্রগতির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করে তখনই মমতা ব্যানার্জির মতো একজন চরম বাম বিরোধী ব্যক্তির মাধ্যমে রাজ্যে শিল্পবিরোধী বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। সারা ভারতের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এবং রাজনৈতিক দল সহ দেশি-বিদেশি অর্থে পুষ্ট এনজিও-গুলো একত্রিত হয়ে জমি আন্দোলনের নামে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ইত্যাদি জায়গায় অরাজকতা তৈরি করে রাজ্যের শিল্প-সম্ভাবনা বন্ধ করে দেয়। বুর্জোয়া সংবাদ মাধ্যমগুলোও এই ধরনের অরাজকতায় ইন্ধন জোগায়। লেখাপড়া জানা কিছু মানুষ মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে এবং ব্যক্তিগত লাভের আশায় তৃণমূল-বর্গি বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায়।
দুর্নীতি ও লুটতরাজের বিশ্বরেকর্ড
সারদা, নারদ দিয়ে শুরু। মন্ত্রী, মেয়র, বিধায়ক, সাংসদ, উচ্চপদস্থ সরকারি আমলারা তাঁদের অফিসের চেয়ারে বসে ঘুষ নিচ্ছে—দুর্নীতির ইতিহাসে এটা একটা বিরলতম ঘটনা। বাম জমানায় গ্রামের মানুষের হাতে যে পয়সা জমা হয়েছিল চিট ফান্ডের নামে সেই টাকা শহরের মানুষের হাতে এসে জমা হয়। গ্রামের আর্থিক অবস্থা আবার খারাপ হতে থাকে। পৃথিবীর কোথাও গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য সরকারি মদতে এবং ব্যবস্থাপনায় এত ব্যাপক দুর্নীতির ইতিহাস আছে বলে শোনা যায় না। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত খবরে কয়েকশো কোটি টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয়েছে। এখানেও বেশিরভাগ গ্রামের মানুষই যুক্ত। জায়গা জমি বিক্রি করে ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি কিনতে এবং চাকরির জায়গা বদল করতে হয়েছে। তৃণমূলী জমানায় গ্রাম বাংলার মানুষ আবার নিঃস্ব হয়ে গেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা ৬০০ দিনের বেশি রাস্তায় ধরনা দিচ্ছেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় ভয়ানক কষ্টের মধ্যেই হবু শিক্ষকরা রাস্তায় পড়ে আছেন। এই আধা-স্বৈরতান্ত্রিক ও অমানবিক সরকারের তাতে হেলদোল নেই। বরং মাঝে মাঝেই শিক্ষকদের ওপর পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। রেড রোডে কার্নিভালের নাম করে টাকার শ্রাদ্ধ করার সময় আন্দোলনরত হবু শিক্ষকদের চারদিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনরত যুবক-যুবতীদের পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। অযোগ্য শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্ররা কী শিক্ষা গ্রহণ করবে? এইসব ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কী? এমনকি উপাচার্যের যোগ্যতা ও নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আদালতের রায়ে একাধিক উপাচার্যের চাকরি চলে গেছে। এখন অনেক উপাচার্যই চাকরি হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ২৩ জন উপাচার্যের নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কর্মরত উপাচার্যকেও জেলের ভাত খেতে হবে—বাংলার মানুষ স্বপ্নেও কোনোদিন এটা ভাবতে পারেননি।
নিয়োগ, বদলি, ডিগ্রি প্রদান ইত্যাদি প্রায় সবই ঘটেছে কোনও না কোনও ধরনের ঘুষের বিনিময়ে। মন্ত্রীদের ডক্টরেট পাইয়ে দিয়ে অনেকেই যোগ্যতা না থাকলেও উচ্চপদে আসীন হয়েছেন। গত দশ বছরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন বন্ধ। অনেক মাছ বিক্রেতাও স্কুল-কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। পাড়ার ক্লাব থেকে শুরু করে লোকসভার নির্বাচন পর্যন্ত সবই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ভোটের কাজে ব্যবহার করার জন্য ক্লাবগুলোকে ঘুরপথে ২৫২ কোটি টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক প্রভৃতি অংশের মানুষরা ৩৫ শতাংশ ডিএ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিয়মরক্ষার জন্য রাজ্যে কাগজে-কলমে একটা বাজেট করা হলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর তুঘলকি সিদ্ধান্তে ভোটের দিকে তাকিয়ে দান-খয়রাত, মেলা ইত্যাদিতে টাকার শ্রাদ্ধ করে রাজ্যকে দেউলিয়া বানিয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূল-বিজেপি’র আঁতাত দীর্ঘদিনের। এই দুই দলই অনেকদিন ধরেই উত্তরবাংলার মানুষের সমস্যার সমাধান না করে আদিবাসী, রাজবংশী, নেপালি ও ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তুদের মধ্যে ভাগাভাগি করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত। যাতে সামান্য চিকিৎসার জন্যও উত্তরবাংলার মানুষকে রাজ্যের বাইরে যেতে না হয় তারজন্য কেন্দ্রের তৎকালীন সরকার একটা ‘এইমস’ হাসপাতাল চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও ২০১৩ সালে মমতা ব্যানার্জির প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় তা করা যায়নি। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের মতোই উত্তরবাংলার মানুষকেও বিশেষভাবে বঞ্চিত করে এখন কুমিরের কান্না কাঁদা হচ্ছে।
তৃণমূল সরকার যে আর তার দায়িত্ব পালন করার মতো অবস্থায় নেই, রাজ্যের মানুষের কাছে এখন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
পতনের শব্দ
এই সরকারের পতনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ‘কাউন্টডাউন’ শুরু হয়ে গেছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়ায় উত্তাল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। গত এক দশকের অন্যায় অবিচার ও অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার অপেক্ষায় রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি মানুষ। কেউ ভালো নেই। রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ অরাজনৈতিক মানুষের কথা না হয় বাদই গেল। তৃণমূলী নেতারা অনেকেই জেলে। ওদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ নেতারা পর্যন্ত যে কোনোদিন জেলে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। এমনকি চোর, ডাকাত, লুম্পেন, প্রোমোটার, ছোট-বড় তোলাবাজ, ভাড়াটে খুনি, পাড়ায় এতদিন দাপিয়ে বেড়ানো কাউন্সিলর সহ চুনো-মাস্তানেরাও যে কোনোদিন জেলে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে মানুষ পঞ্চায়েতের কাজের হিসাব বুঝে নিতে চাইছেন। ভয়ের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৃণমূলী-তোলাবাজ ও চাকরি-চোরদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা আদায় করা শুরু করেছেন। অনেক তৃণমূলী নেতা তোলাবাজির টাকা ফেরত দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামনেই গ্রামের পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোটলুট আটকাতে মানুষের জোট তৈরি হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষ বদ্ধপরিকর। রবীন্দ্রনাথের সুরে সুর মিলিয়ে তাঁরা আওয়াজ তুলেছেন :
‘‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই,
মরতে হবে।
পথ জুড়ে কী করবি বড়াই?
সরতে হবে।
লুঠ-করা ধন করে জড়ো
কে হতে চাস সবার বড়ো,
এক নিমেষে পথের ধুলায়
পড়তে হবে।’’
Post Editorial
‘আর ক-টা দিন সবুর কর’
×
Comments :0