Tea Workers

চা বাগানের বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

রাজ্য জেলা

কম বোনাস নেবেন না শ্রমিকরা। ১৬ শতাংশ বোনাস ঘোষণা হবার পর থেকে আলিপুরদুয়ার চা বাগান গুলিতে বিক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছে। এই প্রতিবাদে সরব চা বাগানের শ্রমিকরা। ২০ শতাংশ বোনাস দিতে হবে দাবি শ্রমিকদের। ১৬ শতাংশের বেশি বোনাস প্রদানের দাবিতে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার নিউল্যান্ডস, কুমারগ্রাম, সংকোশ, রায়ডাক, কার্তিকা, মেচপাড়া সহ একাধিক চা বাগানে শ্রমিকরা গেট মিটিং-এ সামিল হন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা বেঙ্গল চেম্বার্স অফ কমার্সে আয়োজিত বোনাস বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এবছর ভাল চা বাগানে ১৬ শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে। আর রুগ্ন চা বাগানগুলিতে বোনাসের পরিমান অনেকটাই কম।  কিন্ত এই সিদ্ধান্তের পর চা শ্রমিকরা খুশি নন। শ্রমিকদের বক্তব্য,গত বছর ১৯ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছিল এবছর ও ১৯ শতাংশ বোনাস দেওয়া হোক কম বোনাস তারা মানবেন না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে এতো কম বোনাস কেউ তারা মানছেন না। 
চা বাগানের মহিলা শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। তারা বলছে আমাদের সাথে কথা না বলেই ইউনিয়ন গুলি একক ভাবে সিন্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমরা এটা মানবো না। 
রায়ডাক বাগানের শ্রমিক নেতা টেরেজা খালকো জানান, ‘‘বোনাস নিয়ে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সাথে বঞ্চনা করছে। ভালো বাগানগুলি আর রুগ্ন বাগানের বোনাসের পরিমান এক, এটা হতে পারে না। আর শুধু বোনাস নয় কেন্দ্র রাজ্য দুই শাসক চা শ্রমিকদের দাবিতে অনিহা। কিন্তু ১৯৫১ সালে লেবার প্ল্যান্টেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে শ্রমিকদের ঘর, জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মালিকদের প্রদান করার আইন চালু হয়েছে কিন্তু শ্রমিকরা তা পাচ্ছে কিনা বা না পেলে মালিকরা কি শাস্তি পাবে? তা নিয়ে ধোঁয়াশা। আপাতদৃষ্টিতে সরকারের তৈরি করা আইন উল্লেখযোগ্য মনে হলেও সরকারের তদারকির অভাবে বাগানের ম্যানেজার ও বাবুরা শ্রমিকদের কাছে মা-বাপ হয়ে ওঠে। চা বাগানের নুন্যতম মুজুরি, গ্রাচ্যুয়িটি, জ্বালানি, ঘর মেরামত এগুলো কোনোটাই শ্রমিকরা পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়ে আছে। তার বহিপ্রকাশ ঘটছে চা বাগান গুলিতে।’’
প্রসঙ্গত: আলিপুরদুয়ার জেলায়  কালচিনি এবং মাদারিহাট সাতটি চা বাগান বন্ধ সেখানে আর দুরবস্থা শ্রমিকের। ভয়াবহ সংকটের মধ্যে কাটছে তাদের প্রতিদিনকার জীবন যাপন। এমনকি বামফ্রন্ট এর সময় বন্ধ বাগান গুলিতে যে ফাওলা চালু করেছিলো তাও অনেকে পাচ্ছে না। 
সিআইটিইউ নেতা বিদ্যুৎ গুন বলেন, ‘‘কর্পোরেট তোষণ চলছে কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারের। চা শ্রমিকদের প্রথম নুন্যতম মুজুরি ঠিক করা প্রয়োজন। বাগানগুলি আগে ক্যাটাগুরি হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু এখন সরকারের নীতির ফলে ভালো উৎপাদন বাগান এবং রুগ্ন বাগান এক করে দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই লাভবান হচ্ছে মালিকপক্ষ। তবে বোনাস নিয়ে সংগত আন্দোলন শ্রমিকদের। শ্রমিকদের সংকটে সারা বছর ঋণ নিয়ে বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা মেটায়। বোনাস পেলে সেগুলো শ্রমিকরা পরিশোধ করে দেয়। তাই বোনাস কম পেলে অসুবিধার সন্মুখীন হয়। তবে চা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে। শ্রমিকদের নুন্যতম সুবিধা অসুবিধা সরকারের দেখা উচিৎ। নাহলে আগামীতে শ্রমিক সংকটে চা বাগান বন্ধ হবার সম্ভাবনাও তৈরী হতে পারে।’’
মঙ্গলবার মেটেলী ব্লকের বাতাবাড়ি চা বাগানের শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ ভাবে কাজে যাওয়ার আগে প্রতিবাদে নামলেন। এদিন সকাল ৭ টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবর ১৬ নয়, দিতে হবে ২০ শতাংশ বোনাস।

এদিন ন্যায্য ও সম্মানজনক বোনাসের দাবিতে সোচ্চার হলেন একশো বছরের পুরোনো তরাইয়ের থানঝোরা চা বাগানের শ্রমিকেরা। সিআইটিইউ অনুমোদিত চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন দার্জিলিঙ জেলার উদ্যোগে প্রতিদিনই কাজের শেষে ১৬ শতাংশ বোনাসের দাবিতে তরাইয়ের থানঝোরা চা বাগানে গেট সভা ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার হয়েছে। প্রচারের জেরে ন্যায্য বোনাসের দাবিতে চা শ্রমিক আন্দোলনের মেজাজও ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। মঙ্গলবার থানঝোরা চা বাগানের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়নের দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, চা শ্রমিক নেতা রাজু সরকার প্রমুখ। দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভ সভা চলে।

উল্লেখ্য, কলকাতায় মিটিং—এ মালিকপক্ষ ১৬শতাংশ হারে বোনাস দেবার দাবির মীমাংসা করেছে। বোনাস বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবার পরেও খানঝোরা চা বাগান কর্তৃপক্ষ ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস দেবার কথা জানিয়েছে। এরপরেই বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বাগানের শ্রমিকেরা। কলকাতার বোনাস বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়া ১৬ শতাংশ বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন বাগানের শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের স্পষ্ট কথা, ৮.৩৩ শতাংশ বোনাস কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। ন্যায্য বোনাস দেওয়া না হলে বাগান ছেড়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এদিন সমস্ত শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একত্রিতভাবে থানঝোরা চা বাগান শ্রমিকদের ১৬ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে বাগানের ম্যানেজারের হাতে দাবিপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
মালিকপক্ষের উদাসীনতায় থানঝোরা বাগিচা শ্রমিকদের ন্যায্য বোনাসের দাবিতে আগামীদিনে যে কোন বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠলে তার দায়ভার বর্তাবে কর্তৃপক্ষের ওপর। একথা জানিয়ে চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়নের দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে গত ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর তরাই ও ডুয়ার্সের ১৭৬টি বাগানের বোনাস নির্ধারিত হয়েছে ১৬শতাংশ হারে। কিন্তু থানঝোরা বাগানের তরফে কোন সম্মতি পত্র দেওয়া হয়নি। এরপরেই তরাইয়ের থানঝোরা বাগান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে ৮.৩৩ শতাংশের বেশী বোনাস দেওয়া সম্ভব নয়। তাও আবার কর্তৃপক্ষ দুই কিস্তিতে দেবার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের দাবি এক কিস্তিতে ১৬ শতাংশ হারে বোনাস দিতে হবে। এই দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে। দ্রুততার সাথে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাসোসিয়েশন লেভেলে আলোচনার জন্য বাগান ম্যানেজারকে বলা হয়েছে। এবিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে লেবার কমিশনারকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment