ক্ষমতায় থাকলে যা খুশি তাই করা যায়। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দশ বছর আগে নির্মিত এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র দখল করে রাখাও যায়। শাসক দলের ডাকসাইটে নেতা। সেই নেতার ভয়ে এলাকার মানুষজন কথা বলতেও ভয় পান। শাসকদলের অন্য নেতাকর্মীরাও সেই নেতার দাপটে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। অভিযোগ সেই নেতা এতটাই ক্ষমতাশালী যে গত ১০ বছর ধরে সরকারি অর্থে ব্যয়ে তৈরি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র দখল করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন এবং দলীয় পতাকা লাগিয়ে পার্টি অফিস খুলে বসছেন। নিজেই গদগদ হয়ে বলেন এটা দলের দপ্তর। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ভাইপোর ছবি এবং দলীয় পতাকা জ্বলজ্বল করছে। চমকে যেতে হয় তার কথা শুনে। সদর্পে সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েও জানিয়ে দেন ঘর তিনি ছাড়বেন না।
পুরুলিয়া আড়ষা ব্লকের বেলডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যাত্রাটাঁর আইসিডিএস কেন্দ্র। এখন যেখানে কেন্দ্রটি চলে সেটা পাঁচ ফুট বাই ৫ ফুটের একটা ছোট্ট অপরিসর ভাঙ্গা ঘর। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রাঁধুনী রান্না করেন। গ্রামের লোকজন বাসন নিয়ে এসে খাবার নিয়ে যান। পড়াশোনা কিছুই হয় না। যেখানে এই রান্নাবান্নার কাজটি চলে সেটি যাত্রাটাঁড় গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে। বেলডি প্রাথমিক স্কুলের একটি পরিত্যক্ত ঘরে রান্না হয়। ছাদ ভাঙ্গা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সেখান থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে আরেকটি কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। এটি তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। এর আগে ওই গ্রামেরই এক তেঁতুল গাছের তলায় কেন্দ্রটি চলতো। ৫/৬ বছর ধরে এই ভাঙ্গা ঘরেই রান্না হয়। ২০১৫ সালে পঞ্চায়েত সমিতি সেখানে ১২ লক্ষ ষাট হাজার টাকার টেন্ডার ডেকে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করেছিল- যাত্রাটাঁড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। বন্ড করে দুই ডেসিমেল দান করা জমির ওপর এই কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছিল। অথচ সেই ঘরটিতে কেন্দ্রটি চলে না। যাত্রাটাঁড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপভোক্তা কুন্তী গঁড়াই বলে দিলেন যে তৈরি হওয়া নতুন কেন্দ্রটি দখলে রেখেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জিত গঁড়াই। একসময় এই নেতার স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। শাসক দলের নেতা বলেই উনি নতুন তৈরি হওয়া ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি দখলে রেখেছেন।
ওই কেন্দ্রের রাঁধুনী ছবি রানী মাহাতো বাস্তব অবস্থাটা স্বীকার করে নিয়েছেন। অকপট স্বীকারোক্তি- পড়াশোনা হয় না। ছোট ছোট শিশুরাও কেউ আসে না। পরিবারের কেউ এসে খিঁচুড়ি নিয়ে চলে যায়। শুধুমাত্র খিচুড়ি দেওয়ার জন্যই রয়েছে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি।
ওই বেলডি পঞ্চায়েতের ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত থাকা সিপিআই(এম)’র পঞ্চায়েত প্রধান ফুলেশ্বর সহিস সরাসরি না বললেও মেনে নিয়েছেন তৈরি হওয়া ওই আইসিডিএস কেন্দ্রে রান্নাবান্না, পড়াশোনা কিছুই হয় না। বর্তমান প্রধান গীতা রজক অবশ্য কিছুই নাকি জানেন না। অথচ তাঁর বাড়ির পেছনে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা নতুন কেন্দ্রটি ওই নেতা দখল করে রেখেছেন। প্রশ্ন করাতে তাঁর পরিবারের লোকজন রীতিমতো হুমকির সুরে কথা বলেন। সরকারি অর্থ ব্যয় করে নির্মিত ওই আইসিডিএস সেন্টারটি দখল করে রেখেছেন তৃণমূল নেতা রঞ্জিত গড়াই। কেন্দ্রটির একটি ঘরে আবার মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ভাইপোর ছবি ঝুলিয়ে অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় খুলেছেন। দখল করে রাখার অভিযোগ শুনে তাঁর বক্তব্য তৈরি হওয়ার পর তিনি চার লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ইঁট সিমেন্ট বালি সরবরাহকারীকে। অতএব সরকার যতক্ষণ না তাকে টাকা দিচ্ছে ততক্ষণ ওই ঘরের তিনি দখল ছাড়বেন না। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতোর কাছে এ বিষয়ে কোনো খবর নেই। খবর পাওয়ার পর তিনি গোটা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দশ বছর ধরে সরকারি সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর গোটা বিষয়টি জানে। অথচ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ কেউ কখনো নেয়নি। আদৌ কি প্রশাসন পারবে ওই ডাকসাইটে তৃণমূল নেতার হাত থেকে আইসিডিএস কেন্দ্রটি উদ্ধার করতে।
ICDS Center
আইসিডিএস কেন্দ্র দখল করে ১০ বছর ধরে চলছে তৃণমূলের পার্টি অফিস
×
Comments :0