Haldia Port

দুই ঠিকাদারি সংস্থার সংঘাতে পণ্য খালাস বন্ধ হলদিয়ায়

রাজ্য

Haldia Port

ঠিক এক দশক আগের এবিজি কাণ্ডের স্মৃতি যেন ফিরে এসেছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। আশঙ্কার কারণ সেই শাসক তৃণমূল আর তোলাবাজিই।
সেই কার্গো- হ্যান্ডেলিংয়ের বরাত নিয়েই গন্ডগোল দুটি ঠিকাদারি সংস্থার। দুই সংস্থার নিয়ন্ত্রণই মূলত শাসক দলের বাহিনীর হাতে। যার জেরে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে হলদিয়া বন্দরে দাঁড়িয়ে পণ্যবাহী জাহাজ। দুদিন হয়ে গেছে সেই পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মাল খালাস হয়নি। বন্দরেই রয়েছে বিবদমান দুই ঠিকাদারি সংস্থার কর্মীরাও। ফের হলদিয়া বন্দরে অশনি সঙ্কেত। 
ঠিকই এভাবে এক দশক আগে হলদিয়া বন্দরে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল তৎকালীন তৃণমূলী সাংসদ বর্তমানে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারির তাণ্ডবে। সেই সময় বন্দরের অচলাবস্থার জন্য ৭৪হাজার মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই একটি জাহাজ হলদিয়ার মোহনা ছেড়ে চলে গেছে ওডিশার ধামড়াতে। গ্লোবাল টেন্ডারে কার্গো হ্যান্ডেলিং’র বরাত পেয়েছিল এবিজি সংস্থা। কিন্তু প্রাক্তন তৃণমূলী সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর সংস্থা ‘রিপ্লে কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থাকেই কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের বরাত দেওয়ার জন্য চাপ শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ২ ও ৮ নম্বর বার্থে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি রাতের অন্ধকারে হামলা চালানো হয় টাউনশিপে এবিজি সংস্থার আধিকারিকদের ওপর। দীর্ঘ অচলাবস্থার শেষে ২০১২ সালের অক্টোবরে পণ্য খালাসকারী বেসরকারি সংস্থা এবিজি হলদিয়া বন্দর থেকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এবিজি চলে গেলে সেই সেই সংস্থার ঠিকা শ্রমিকদের বড় অংশ ছাঁটাইয়ের মুখে পড়ে, রিপ্লে তাঁদের কাজেও নেয়নি।
প্রায় একই কাহিনী যেন ফের হলদিয়া বন্দরে। 
বন্দরের একটি সূত্রে জানা গেছে ‘ফাইভ স্টার গ্রুপ অব কোম্পানি’ বন্দরের ১৩ নম্বর বার্থে কাজ পেয়েছিল, টেন্ডারের মাধ্যমেই। সেই ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিকরা কাজ করে এই বার্থে। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার শেখ মুজাফ্‌ফর। তাঁর ছেলেও হলদিয়া পৌরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলর। কিছুদিন আগে আবার সেই বার্থে নতুন করে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের বরাত পায় আরেকটি সংস্থা অ্যারো ইন্ডিয়া। এই সংস্থাটি তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদের রিপ্লের সাব-কনট্রাক্টেই কাজ করে বলে দাবি বন্দরের শ্রমিকদের। 
ফলে বন্দরের ১৩ নম্বর বার্থে একটি পণ্যবাহী জাহাজ খালি করা নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়। ফাইভ স্টার ঠিকাদারি সংস্থা দাবি করে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত তাদের কাছে টেন্ডার রয়েছে। ফলে ওই জাহাজ খালি করবে তারাই। অন্যদিকে অন্য সংস্থাটি দাবি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদেরকেই কার্গো হ্যান্ডেলিং করার বরাত দিয়েছে। দু-পক্ষের অনড় মনোভাবে বন্ধ মাল খালাসের কাজ। জাহাজ দাঁড়িয়ে, অচলাবস্থার রেশ গোটা বন্দর জুড়েই। 
ফাইভ স্টার গ্রুপ অব কোম্পানির পক্ষ থেকে শেখ মুজাফ্‌ফর বলেন "ফাইভ স্টার কাজ পেয়েছে, ফাইভ স্টারই তো এই কাজ করবে। যে কোনভাবে যথাসময়ে জাহাজের মাল খালাস করাই আমাদের কাজ। আমরা নিয়মমতো কাজের টেন্ডার পেয়েছি, তবুও কাজ করতে বাধা দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমরা কাজ করতে রাজি আছি। কিন্তু ফাইভ স্টারের ব্যানারেই ১৩ নম্বর বার্থে যতদিন পর্যন্ত টেন্ডার রয়েছে ততদিনই কাজ করবে শ্রমিকরা’। হলদিয়ায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঐ অ্যারো ইন্ডিয়া নামক সংস্থার পিছনে মদত আছে শাসক দলের অন্যতম ক্ষমতাবান গুরুত্বপূর্ণ এক সাংসদের। ফলে তৃণমূলেরই দুটি সংস্থার মধ্যে বিরোধ, বিপাকে শ্রমিকরাও। ইতিমধ্যে ফাইভ স্টারের সিংহভাগ ঠিকা শ্রমিক অ্যারো সংস্থার অধীনে ।
এর আগে হলদিয়ায় এসে অভিষেক ব্যানার্জি বলে গিয়েছিলেন, আমাকে একশো দিন সময় দিন, হলদিয়ায় যত কারখানা আছে সব সমস্যা মেটাবো, সব বকেয়া বেতন চুক্তি সম্পাদন করা হবে। অথচ ১০০দিন পেরিয়ে গেছে। হয়নি কারখানাগুলোতে বকেয়া বেতন চুক্তি সম্পাদন। তৃণমূলের নেতারাই প্রকাশ্যে জানাচ্ছে, কোন ঠিকাদার গোষ্ঠী কত টাকা দেবে তার ওপরেই তো নির্ভর করে বেতন চুক্তি।  
ফলে ফের এক বন্দরের বার্থে মাল খালাস নিয়ে অচলাবস্থার জেরে আশঙ্কা ছড়িয়েছে গোটা শিল্পশহর জুড়েই। কখন মিটবে সমস্যা, ধন্দে শ্রমিকরাও। সিআইটিইউ হলদিয়া রিজিওনাল কমিটির নেতা অচিন্ত্য শাসমল বলেন, ‘২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হলদিয়া বন্দরের কাজ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছিল। এবিজি-কে তাড়ানো হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীদের মদতে। এখনও সেই ধারাবাহিকতা রয়েছে। শ্রমিকদের স্বার্থ না দেখে ঠিকাদারদের স্বার্থই বেশি দেখছে বর্তমান সরকার।’
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে হলদিয়ার এক্সাইড কারখানায় দুই ঠিকাদারি সংস্থার সমস্যার দরুন উৎপাদনের কাজ বন্ধ হয়। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর ছোট বড় সব ধরনের প্রায় ৩০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়েছে হলদিয়ায়। কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কয়েক হাজার ঠিকা শ্রমিক তৃণমূলী তাণ্ডবে ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment