Amit Shah

বিভাজনেই জোর, জানিয়ে গেলেন অমিত শাহ

জেলা

বিভাজনের রাজনীতিকে উসকানি দিয়েইে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ৩৫’রও বেশি আসন বিজেপি’র ঝুলিতে দেওয়ার আহ্বান জানালেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। অথচ দরজায় কড়া নাড়া বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না অমিত শাহ! সিউড়িতে শুক্রবার বিজেপি’র তরফ থেকে ‘জনসম্পর্ক যাত্রা’র নামে ডাক দেওয়া হয়েছিল জনসভার। সেখানে প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন অমিত শাহ। কিছুদিন আগেই রাজ্যে এসে দলীয় সভায় বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধিতে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এদিন সিউড়ির বেণীমাধব স্কুলের মাঠে হওয়া সেই সভায় অমিত শাহ মূলত সেই ‘তৃণমূলের বিকল্প শুধু বিজেপি’— এই অঙ্কটিকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। তিনি এদিন বলেছেন, ‘‘দেশের সুরক্ষা একমাত্র দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানকে জবাব মমতা দিতে পারবে না, কাশ্মীরকে ঠান্ডা মমতা করতে পারবে না। কিন্তু মোদী পারবে। রামমন্দির মোদী শিলান্যাস করে দেখিয়ে দিয়েছেন। সেই কাজ শেষের দিকে। দেশকে সুরক্ষা দিতে, অনুপ্রবেশ রুখতে, দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং ভাই ভাতিজাকে তাড়াতে গেলে মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। আমাদের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাই দিদির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলের ভিতর যেতে হবে।’’ এরপরেই অমিত শাহর গলায় চলে আসে সম্প্রতি রিষড়া, হাওড়ায় ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গ। অমিত শাহ যোগ করেন, “২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৩৫টির বেশি আসন বিজেপি’কে দিয়ে মোদীকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী বানান। আপনারা ৩৫টির বেশি লোকসভায় আসন দিলে ’২৫ সালের আগেই মমতার সরকার পড়ে যাবে। একবার বাংলায় বিজেপি’কে আনুন। তাহলে আর রামনবমীর মিছিলে হামলা হবে না। এখানে মমতার তুষ্টিকরণের জন্য মিছিলে হামলা হচ্ছে। রামনবমী হাওড়া, রিষড়ায় ঝামেলা হয়েছে। তৃণমূলের তুষ্টিকরণের কারণে এসব হচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রামনবমীর মিছিলে হামলার করার ক্ষমতা কারও থাকবে না, অনুপ্রবেশ ঘটবে না। আসামে যেমন হয়েছে।’’ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, অমিত শাহর পাখির চোখ এখন থেকেই লোকসভা। আর সেই নির্বাচনে বাংলা থেকে আসন নিতে মরিয়া অমিত শাহরা হাঁটবেন হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেই। এখন গ্রামে গ্রামে তৃণমূলের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তৃণমূলকে তাড়াতে যারা বিজেপি’কে ঢাল করেছিল তাদের বড় অংশও সরছে গেরুয়া শিবির থেকে। বরং প্রতিদিন লালঝান্ডার মিছিলে মানুষের অংশগ্রহণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। একদিন আগে হওয়া ডিওয়াইএফআই’র উত্তরকন্যা অভিযান আবার তা প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি এই অমিত শাহই রাজ্য বিজেপি’র কাছে কিছুদিন আগে জানতে চেয়েছিলেন, ‘বাংলায় বামেরা বাড়ছে কেন?’ অমিত শাহর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে হাতিয়ার করে মানুষের মধ্যে বিভাজনের মাধ্যমেই অমিত শাহদের লক্ষ্য ২০২৪। পঞ্চায়েত নিয়ে তাদের উদ্বেগ নেই স্বাভাবিক। বিজেপি-তৃণমূল দুইয়ের ঢাল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ। কারণ দু’দলেরই টিকি বাঁধা নাগপুরে। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, নবি দিবস তো মানুষ পালন করে। তাতে বিজেপি-তৃণমূলের রাজনীতির প্রসঙ্গ আসছে কেন? আসলে তারা এগুলো নিয়ে রাজনীতির কারবার করছে। দেশের সুরক্ষার জন্য মোদী কি করছেন সবাই দেখছেন। তবে বারবার বিভাজনের সমীকরণে লাভ হবে না।’’ শুক্রবার দুর্গাপুর বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টারে চড়ে সিউড়িতে পা দেন অমিত শাহ। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার এমনকি ত্রিপুরা থেকে আগত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, ঝাড়খণ্ডের মঙ্গল পান্ডে সহ আরও অন্যান্যদের পাশে নিয়ে অমিত শাহ আরও বলেন, “দিদির একমাত্র লক্ষ্য ভাতিজাকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো। দিদির সরকার এতো দুর্নীতি করেছে বেকার যুবকদের চাকরির নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে। ইডি’কে ২ট্রাক টাকা নিয়ে যেতে হয়েছে। যার বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে তাকে গ্রেপ্তার করে কোনও ভুল করা হয়েছে? এই জেলার এক দুর্নীতিগ্রস্ত এখন জেলে। আমরা মমতার হিটলারি শাসন চলতে দেব না। আগামী মুখ্যমন্ত্রী হবে বিজেপি’র। এখন ট্রেলার চলছে। ২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দিদির সরকার পড়ে যাবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment