কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়ামের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। কিন্তু তার দায়িত্ব কী কেবল ভারত বা চীনের মতো বিকাশশীল দেশগুলির।
বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখ করে সমঝোতা হয়েছে বুধবারই। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইয়ে রাষ্ট্রসংঘের ‘কপ-২৮’ সম্মেলনের পরও ঝুলে রয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলির দায় এড়ানো নিয়ে একাধিক প্রশ্ন।
এ বছরেই ‘অয়েলচেঞ্চ ইন্টারন্যাশনাল’ একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। বলা হয়েছে শিল্পোন্নত পাঁচ দেশ, মার্কিন যু্তরাষ্ট্র কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং নরওয়ে বেশিরভাগ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প সম্প্রসারণের পেছনে রয়েছে। ২০২৫০ পর্যন্ত এই দুই ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের যত প্রকল্প রয়েছে তার ৫১ শতাংশ এই পাঁচ দেশের।
পরিবেশকর্মীরা মনে করিয়েছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বন এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের ৯২ শতাংশ বাতাসে মেশাচ্ছে শিল্পোন্নত কয়েকটি দেশ।
দুবাই পরিবেশ সম্মেলনেও বিকাশশীল এবং শিল্পের বিচারে কম উন্নত দেশগুলি এই যুক্তিতে সরবও হয়েছে। চলে এসেছে ‘ক্লাইমেট কলোনিয়ালিজম’ বা পরিবেশের নাম করে নতুন উপনিবেশবাদ কায়েমের অভিযোগও।
বিকাশশীল দেশগুলির বক্তব্য, ভারত এবং চীনের মতো দেশগুলির কয়লা খনি বন্ধ করানোর জন্য সরব পশ্চিমী দুনিয়া। অথচ ঐতিহাসিকভাবে তো বটেই, আজও উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাসের বেশিরভাগ বাতাসে মেশাচ্ছে এরাই।
বিকল্প জ্বালানির প্রযুক্তির জন্য তহবিলে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্লাসগো সম্মেলনেই দিয়েছিল ধনী দেশগুলি। বিভিন্ন অংশই সরব হচ্ছেন। মুখ্যত ধনী দেশগুলিরই মঞ্চ ওইসিডি’র তথ্য বলছে ২০২১ সালেও ধনী দেশগুলি তহবিলে দিয়েছে ৮৯.৬ বিলিয়ন। অথচ ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে ১০০ বিলিয়ন ডলার বা বছরে ১০ হাজার ডলার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই তহবিলের অর্থ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উষ্ণায়ন রোধী প্রযুক্তি এবং জ্বালানির জন্য ব্যবহার হওয়ার কথা।
দুবাই সম্মেলনেই রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিভাগের প্রধান সাইমন স্টেইল বলেছেন, ‘‘লুকানোর জায়গা কোথাও নেই। ‘আমি জিতব, তুমি হারবে’- এভাবে যারা ভাবছে তারা আসলে সবাইকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’’
পশ্চিমী বিশ্বের পরিবেশ কর্মীরাও সম্মেলনে সরব হয়েছেন নিজেদের দেশগুলির ভূমিকার বিরুদ্ধে। তাঁরা বলেছেন, ২৪০ কোটি শিশু সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভুগছে। তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। কম শিল্পোন্নত বিশ্ব যাতে সবুজ প্রযুক্তি পেতে পারে তার জন্য তহবিলে অর্থ দিন। ব্রিটেনের বাসিন্দা শিশু পরিবেশকর্মী মোক্ষ রায় পরিবেশ আন্দোলনের এই বার্তা পাঠ করেছে দুবাইয়ে।
CLIMATE COLONIALISM
ধনী বিশ্বের দ্বিচারিতায় ক্ষোভ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে
×
Comments :0