Cbi raid

নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই হানা আরেক তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে

জেলা

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডেই আরো এক তৃণমূল বিধায়কের দুয়ারে এবার সিবিআই। এজেন্ট চক্রের মাধ্যমে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেলায় জেলায় বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা হয়েছিল। সেই টাকার ভাগ কেন্দ্রীয়ভাবেই পৌঁছেছে শাসক দলের শীর্ষ মহলে। নিয়োগ দু্নীতির তদন্তে সেই গতিপথ জানতেই এবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। দুপুর থেকে শুরু হয় তল্লাশি ও জেরা, রাত পর্যন্ত তা চলেছে। বিস্তর নথি উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি দেখা যায় তল্লাশি পর্বে বিধায়কের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি এলাকার একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে জেরক্স করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। জীবন কৃষ্ণ সাহার বাড়িতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ আসে সিবিআই’র তদন্তকারী আধিকারিকদের একটি দল। এদিনই দুপুরে রঘুনাথগঞ্জ- ২ ব্লকের পিয়ারাপুরের মধ্যমপাড়ায় জীবন সাহার শ্বশুরবাড়িতেও হানা দেয় ছয় জনের তদন্তকারী আধিকারিকদের আরেকটি দল। আধঘণ্টার মতো সেই বাড়িতে ছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেখান থেকেও বেশ কিছু নথি হাতে বেরোতে দেখা যায় সিবিআই আধিকারিকদের। বিধায়কের অফিসেও চলে তল্লাশি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছিল বড়ঞার আন্দি এলাকায় তৃণমূলের বিধায়কের বাড়ি। সদর দরজা বন্ধ করে বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। জীবন সাহার বাড়ির পিছনের বাগানেও তল্লাশি চলে। রাত পর্যন্ত বাড়িতই সিবিআই আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে গত জানুয়ারি মাসে নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হয় অভিষেক ব্যানার্জির ‘আশীর্বাদে’ যুব তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক বনে যাওয়া কুন্তল ঘোষ। এই কুন্তল ঘোষকে জেরা করেই মেলে মুর্শিবাদের আরেক কীর্তিমান কৌশিক ঘোষের নাম। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিবিআই এই নিয়োগ কেলেঙ্কারিতেই বাগদার সেই ‘সৎ রঞ্জন’ সহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। কৌশিক ঘোষকেও গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন। হেপাজতে টানা জেরায় সেই কৌশিক ঘোষের কাছ থেকেই তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন একাধিক তথ্য। কৌশিকও স্বীকার করেছে যে তৃণমূল বিধায়কের হয়েই সেই টাকা তুলত। অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে নামের তালিকার পাঠানোর নির্দেশ দিত এই তৃণমূলী বিধায়ক। সেই সূত্রেই এবার এই তৃণমূলী বিধায়কের বাড়িতে চড়াও হয় সিবিআই। কৌশিক ঘোষের ফেসবুক পোস্টেও দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহার সঙ্গে বিধানসভার লবিতে দাড়িয়ে আছেন তিনি। শিক্ষক নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত সাব এজেন্ট কৌশিকে ঘোষের বিধানসভাতেও ছিল যাতায়াত! এলাকায় দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী বলেই পরিচিত কৌশিক। জেলার বাইরে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার চাকরি ছেড়ে নেমেছিলেন চাকরি বিক্রির পেশায়। স্কুলে চাকরি করেন কৌশিকের একাধিক আত্মীয়। দাপট, সম্পত্তি বৃদ্ধি শুরু ২০২১ সাল থেকেই। ২০২১-এর নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জীবন কৃষ্ণ সাহাকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে কৌশিক। গ্রামবাসীদের দাবি, শুধু গ্রামে দোতলা বাড়িই নয়, বোলপুরেও ফ্ল্যাট আছে কৌশিকের। বড়ঞার ভড়ঞা গ্রামের কৌশিক ঘোষের ঝাঁ চকচকে পেল্লাই দোতলা বাড়ি। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ এলাকায় যতজনের সরকারি চাকরি হয়েছে সবার থেকে টাকা তুলেছে এই কৌশিক ঘোষ। তৃণমূলের দাপুটে নেতা, ফলে কেউ মুখ খুলতে পারেনি ভয়ে। বড় বড় নেতা,মন্ত্রীর সঙ্গেও তার যোগাযোগের কথা বলে বেড়াতো। কৌশিক ঘোষের মেন্টর ছিল বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। এলাকাবাসীদের দাবি বিধায়ক ও তাঁর চেলা কৌশিক ঘোষ রীতিমত দোকান খুলে বসেছিল। কত লোক আসতো টাকা দিতে। আবার টাকা দিয়েও সরকারি চাকরি না পাওয়ায় বিক্ষোভও হয়েছে কয়েকবার। বিধায়ক তো ঐ কৌশিক ঘোষের সঙ্গেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়। হেপাজতে থাকাকালীন কৌশিক ঘোষকে জেরা এই বিধায়কের ভূমিকা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। মিলেছে আর্থিক লেনদেনের যোগও।

Comments :0

Login to leave a comment