Darjeeling landslides

বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে মৃত বেড়ে ২০

রাজ্য জেলা

ছবি রাজু ভট্টাচার্য।

অনিন্দিতা দত্ত: শিলিগুড়ি
অবিরাম বৃষ্টি ও ধসজনিত পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। নাগাড়ে বৃষ্টিতে ধস বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গোটা পাহাড়। পাহাড় পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। প্রবল বর্ষনে মাটি, পাথর, গাছ গাছালি হুড়মুড়িয়ে নেমে আসছে পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তায়। পাহাড়ী গ্রামের বাড়ি ঘর ধসে মাটি চাপা পড়েছে। ক্রমাগত ভারি বৃষ্টিতে ভাসছে দার্জিলিঙ পার্বত্য অঞ্চল। দার্জিলিঙ পাহাড়ে একাধিক জায়গায় ধস নামার খবর মিলেছে। ধসের কারণে বাংলা-সিকিম লাইন লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রয়েছে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ধসের কারণে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ধসে চাপা পড়ে এখনও পর্যন্ত শিশু সহ মোট ২০ জনের মৃত্যুর খবর জানা যাচ্ছে। তবে পাহাড়ের পরিস্থিতি এতোটাই বিপর্যস্ত যে ধসে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। এরই মাঝে প্রবল বর্ষনে মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে পড়েছে। নতুন করে ধসে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে পাহাড়। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে। এদিকে বৃষ্টি ধসে বিপর্যস্ত সিকিমেও অনেক জায়গায় পর্যটকদের আটকে পড়ার খবর মিলেছে। আগামী ২৪ঘন্টা পাহাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনার কথাই আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।  
গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি চলছে পাহাড় জুড়ে। আগামী কয়েকদিনও ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাষ জারি করা হয়েছিলো। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে দার্জিলিঙ ও কালিম্পঙের উঁচু পার্বত্য এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। পার্বত্য এলাকার পাশাপাশি সমতলেও অস্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাষ ছিলোই। সেই পূর্বাভাষ অনুযায়ী শনিবার রাত থেকেই প্রবল বর্ষন শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেরবার সমগ্র পাহাড় ও সমতলে উত্তরের জেলাগুলি। এছাড়াও আহতদের সংখ্যা প্রচুর। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে মিরিক মহকুমায় মৃতরা হলো ঊষা রাই (৭২), বিজেন্দ্র রাই (৭০), সাধনা তামাঙ (৩৫), আহান ছেত্রী (৯), রুহি তামাঙ (১১), স্নেহা পরধান (১৯), অনুজ প্রধান (৪২), আরুষি ছেত্রী (১২), অনিতা প্রধান (৪১), ফুচুঙ ডুকপা (৫০), সুমিত লেপচা (৪৬), মিনা সেওয়া (৬২), জ্ঞানচুক তামাঙ (২০)। এছাড়াও মানেভঞ্জন এলাকায় আরোও পাঁচটি এবং সুখিয়াপোখরি ব্লকের সোমসিয়কে দুটি অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, দার্জিলিঙে ধসে নিখোঁজ রয়েছেন বাঙালী পর্যটক। নিখোঁজ পর্যটকের নাম হিমাদ্রি পুরকাইত (২৫)। তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পারুলিয়া কোস্টাল থানার দক্ষিন কামারপোলের বাসিন্দা। সোনাদায় শনিবার রাতে বড় আকারের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি হোমস্টে। জিটিএ-র পক্ষ থেকে নিখোঁজ পর্যটকের খোঁজ চলছে। 


দার্জিলিঙ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধস সরানোর কাজ শুরু হলেও, টানা বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে ধসের বালি পাথর। ফলে ধস পরিষ্কারের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। কার্শিয়াঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় জানান, মিরিকে ধস সরিয়ে পাঁচটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার ভোরে আরো দুটি দেহ মিলেছে। সুখিয়াতে চারজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মিরিকে ভয়াবহ ধস নেমেছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনে উদ্ধার কাজ চালাতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙগামী রোহিনীর রাস্তায় একাধিক জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বত্রই জোরকদমে উদ্ধার কাজ চলছে। শনিবার রাত থেকেই ঝড় বৃষ্টির ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। প্রবল বৃষ্টিতে সেবকের কাছে ১০নম্বর জাতীয় সড়কে বিশালাকার গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে জায়। এরপর থেকে বৃষ্টির পরিমান বাড়তেই বাংলা সিকিম লাইনে লিকুভিড়, শ্বেতীঝোরা, সেলফিদারা, চিত্রে সহ একাধিক জায়গায় ছোট বড় ধস নামে। যার জেরে ১০নম্বর জাতীয় সড়ক সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ড্রোন উড়িয়ে দুধিয়াতে বন্যা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে সেনাবাহিনী। মুষলধারায় বৃষ্টিতে বালাসন নদীও ভয়ঙ্করী হয়ে উঠেছে। নদীপাড় লাগোয়া তিনটি বাড়ি সম্পূর্ন ধসে গেছে। আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। ধস বিধ্বস্ত পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের ফেরাতে এনবিএসটি’র পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি-কলকাতা বিশেষ বাস চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙগামী সড়কে কার্শিয়াঙের দিলারামের কাছে ধসের নামে। ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোহীনি রোডও। পুলবাজার এলাকায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় থানালাইন, বিজনবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিকিম এবং কালিম্পঙের মধ্যে যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেই জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। স্থানীয় প্রশাসন, দার্জিলিঙ জেলা পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা একযোগে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। 
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় জনিত পরিস্থিতিতে তিস্তাপাড়ের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। কালিম্পঙের জেলা শাসক বালা সুব্রক্ষ্মনিয়াম টি বলেন, তিস্তা নদীর জল বিপদ সীমা অতিক্রম করে বয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই তিস্তাপাড়ের প্রায় দেড়শো পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে আনা হয়েছে। পাহাড় সমতল ধস, বৃষ্টি ও বন্যাজনিত পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। একাধিক ট্রেন বাতিল করার পাশাপাশি বেশ কিছু ট্রেন ঘুরিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু ট্রেন। এরমধ্যে শিলিগুড়ি বক্সিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি আলিপুরদুবার জংশন ট্যুরিষ্ট স্পেশাল ট্রেন, ধুবড়ি শিলিগুড়ি ডেমু স্পেশাল ট্রেন বাতিল হয়েছে। সুকনা মহানদী স্টেশনের মধ্যে রেললাইনের ধস নেমেছে। ধসের জেরে শিলিগুড়ি—দার্জিলিঙ টয়ট্রেন পরিষেবাও বন্ধ।
পাহাড় ও সমতলে ভারি বৃষ্টির কারণে ভারত নেপাল সীমান্তের মেচি নদীতেও জল বেড়েছে। মেচি নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে দার্জিলিঙ জেলার শেষ প্রান্তের খড়িবাড়ির ডাঙ্গুজোত এলাকা। এর জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় তিন শতাধিক বাড়ি। মেচি নদীর জলস্রোতে ভেসে যাওয়ার আগে উদ্ধার করা হয় এক হস্তি শাবককে।

Comments :0

Login to leave a comment