হামলা সিপিআই(এম) দপ্তরে। হামলাবাজ তৃণমূলের একজনকেও ধরা হলো না। জেলে পাঠানো হলো আক্রান্ত সিপিআই(এম) নেতাদেরই। প্রতিবাদে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে জলপাইগুড়িতে। শনিবার পথে নামলেন নাগরিকরা।
জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে ধৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। শহরের চিকিৎসক, অধ্যাপক, কবি, নাট্যকার, সমাজকর্মীরা হাজির হয়ে তাঁদের প্রতিবাদী বক্তব্য রাখেন। ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্ত, জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক চিকিৎসক সুদীপন মিত্র, অধ্যাপক রুপন সরকার, অধ্যাপিকা কোয়েলা গাঙ্গুলি, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী অধ্যাপক তমজিৎ রায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক রঞ্জিত মিত্র, সংস্কৃতি কর্মী প্রশান্ত নাগ চৌধুরী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শিক্ষক সৌভিক কুন্ডা, কবি গৌতম গুহ রায় সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের ব্যক্তিবর্গ।
গত ১৬ আগস্ট জলপাইগুড়ির সুবোধ সেন ভবন দখলের উদ্যেশ্যে হামলাকারীদের মদতে পুলিশ শ্রমিক আন্দোলন ও গন আন্দোলনের ৩ জন নেতৃত্ব এবং ২ জন শিক্ষক সহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। শাসক দলের পরিকল্পনায় এঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। পুলিশের দেওয়া মিথ্যা মামলায় গত ১৭ আগস্ট পার্টিনেতাদের জামিনের আবেদন নাকচ হয়ে যায় জলপাইগুড়ি আদালতে। জেলা পুলিশের শীর্ষস্তর থেকে সক্রিয়তা রয়েছে বলে অভিযোগ।
শনিবার দুপুরে ‘অভিমুখ’ নামক একটি সামাজিক সংস্থার তরফে জেলাশাসক জলপাইগুড়ির উদ্দেশে লেখা এক প্রতিবাদ পত্রের প্রতিলিপি জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি’কে দেওয়া হলো।
নাগরিকরা বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রে শাসকের বিরুদ্ধে মত পোষণ করলেই তাকে গারদে পোড়া হবে, এ তো সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। রবিবার বেলা দুটোয় সমাজপাড়া মোড় থেকে সংগঠিত শ্রমজীবী অংশের মানুষের প্রতিবাদ মিছিলে গণতন্ত্র প্রিয় সমস্ত মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
১৬ আগস্ট রাতে টিএমসিপি’র মিছিল সোজা এসএফআই কার্যালয় দখলের নামে সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা কার্যালয় দখলের চেষ্টা করে। পুলিশের সামনেই জেলা কার্যালয়ে ছোঁড়া হয় বোতল, ঢিল। টায়ার জ্বালিয়ে ছুড়ে মারা হয়। প্রতিবাদে সুবোধ সেন ভবনে থাকা এসএফআই কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পুলিশ টিএমসিপি দুষ্কৃতি বাহিনীকে না সরিয়ে দীর্ঘক্ষণ গন্ডগোল জিইয়ে রাখে। ঘটনা শুরুর প্রায় এক ঘন্টা পর অ্যাডিশনাল এসপি জলপাইগুড়ির নেতৃত্বে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ডিবিসি রোডে এসে মৃদু লাঠি চার্জ করে টিএমসিপি-র তিনজন কর্মী কে আটকও করে। এরপরই ডিএসপি সমীর পালের নির্দেশে পুলিশ সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব পীযূষ মিশ্র, তমাল চক্রবর্তী, শিক্ষক নেতা এবিটিএ’র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় এবং শ্রমিক নেতা জিয়াউল আলমকে নতুন পাড়া মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে।
যুব আন্দোলনের কর্মী আহত সোহিনী রায়কে দেখতে হাসপাতালে যান তাঁর স্বামী, তাঁকেও হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টিএমসিপি কর্মীদের রাতে থানা থেকেই মুক্তি দেওয়া হলেও আটক বাম নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ১৭ আগস্ট কোর্টে পাঠায় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
Comments :0