কাঁচা আনাজের দাম বাড়ছে ফড়েদের অসাধু রোজগারের কারণেই। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবান্নে বলেছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতে হবে। তিনি বাজারগুলির ওপর নজরদারি করার কথাও বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার পর বুধবার রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় কিছু বাজারে গিয়েছিলেন টাস্ক ফোর্সের সদস্য ও জেলা প্রশাসনের কৃষি আধিকারিকরা। তাঁরা বাজারে গিয়ে কী করলেন? খুচরো আনাজ বিক্রেতাদের বাটখারা ঠিক আছে কীনা তা দেখলেন। বাজারগুলিতে আলু এবং পেঁয়াজের ছোট ছোট গুদামগুলিতে মজুত কত, তা দেখেছেন। এই নজরদারি প্রক্রিয়ায় কাঁচা আনাজের দাম কমবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন বিভিন্ন বাজার কমিটির সম্পাদকরা। কাঁচা আনাজের ক্ষেত্রে তোলাবাজি না কমলে বেগুন ১০০ টাকার ওপরেই থাকবে। দু’দিন আগেই বাজারগুলিতে বেগুন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিন অবশ্য দাম কমে ১২০ টাকায় এসেছে। অথচ এই দাম যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাঁদের খোঁজ পাচ্ছে না রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ।
এদিন হুগলী জেলার সবজিবাজার ধনেখালির শিবাইচণ্ডী বাজার, বারুইপাড়ার কাঁচা আনাজের বাজার অথবা নালিকুল খুচরো বাজারে সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। অন্যদিকে এদিন হুগলী জেলায় ঢেঁড়শ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা পাল্লা (৫ কজি) দরে। অর্থাৎ ঢেঁড়শ ৩০ টাকা কিলো। খুচরো বাজারে এই ঢেঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কিলো দরে। এদিন এক পাল্লা পটলের দাম ছিল ৮০ টাকা। খুচরো বাজারে পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কিলো দরে। বেগুন এক পাল্লার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। খুচরো বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কিলো দরে। কাঁচা আনাজের এক হাত আরেক হাতে যাওয়ার মধ্যে তোলাবাজির মাশুল সাধারণ মানুষকে গুণতে হচ্ছে। বর্ধমানের বাজারগুলিতে একই অবস্থা। পূর্বস্থলীর নিমদহ পঞ্চায়েত এলাকার সবজি চাষের কৃষক সমর বাজোয়ার অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। তিনি বলেন, ‘আমি ঢেঁড়শ বিক্রি করছি ১৭ টাকা কিলো দরে, পটল বিক্রি করছি ১৫ টাকা কিলো দরে। কিন্তু বাজারে এই সমস্ত সবজির দাম তিনগুণ, চারগুণ বেড়ে যাচ্ছে। পূর্বস্থলী বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কাঁচা আনাজ বাজারে আনতে গিয়ে ফোড়েদের হাতে যেমন টাকা দিতে হচ্ছে, তেমনভাবে সড়ক পথে গেলে পুলিশ তোলা নিচ্ছে। রেলপথে গেলে জিআরপি’কে টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে খুচরো বাজারগুলিতে কাঁচা আনাজের দাম অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে গত ১২দিন ধরে টানা বর্ষা এবং দক্ষিণবঙ্গে অপ্রতুল বৃষ্টির ফলে কাঁচাসবজি উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এই ঘাটতি চাহিদার তুলনায় কম। ফসল যে পরিমাণ হবে বলে কৃষকরা আশা করেছিলেন তা এবছর হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের কৃষকরা আমন ধানের বীজতলা করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে আমনের চাষ কী ভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। কিন্তু কাঁচা সবজির সঙ্গে আলু, আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কা, টমাটোর দাম বাড়ছে কেন— উদ্বিগ্ন মানুষ। কোচবিহারের হিমঘরগুলিতে এখনও ৬০ শতাংশ আলু মজুত আছে কিন্তু সেখানকার মানুষ অনেকবেশি দাম দিয়ে আলু কিনছেন। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও ৪৫ লক্ষ টন আলু মজুত আছে। এই মজুত আলুর মধ্যে একটি অংশ রয়েছে বীজ আলুর জন্য। রাজ্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ৬ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। হিমঘরে আলু থাকা সত্ত্বেও এখন বাজারে চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কিলো দরে। শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য, আলুর দাম আরও বাড়বে। কাঁচালঙ্কা, আদা এবং রসুন নিয়ে একাংশ অসাধুভাবে ব্যবসা করছেন। অল্প হলেও এই তিনটি জিনিস সকলের প্রয়োজন হয়। রাজ্যে যে পরিমাণ আদা এবং রসুন মজুত রয়েছে তাতে আদার দাম ২২০ বা ২৫০ টাকা কেজি হওয়ার কথা নয়। আদা এবং রসুন ব্যবসায়ীরা মজুত করা আদা বাজারের চাহিদার তুলনায় কম জোগান দিচ্ছেন। ফলে আদার দাম বাড়ছে। আদার দাম ৩০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। এখন তা ২২০ টাকায় নেমেছে। তাঁদের আশঙ্কা, গত ২০ দিনে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছে গেছে। অন্যান্য সমস্ত সবজির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা হওয়ায় পেঁয়াজদের দাম নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। এই পেঁয়াজের দাম আরও অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। টমাটো সহ কাঁচা সবজি মাঠ থেকে বাজারে পৌঁছাতে যে পরিমাণ তোলা গুণতে হচ্ছে তাতে করে বাজারে বাজারে ঘুরে খুচরো ব্যবসায়ীদের ধমকালে-চমকালে দাম কমবে না। সবজির ওপর থেকে ফোড়েদের তোলা আদায় বন্ধ করতে হবে।
Vegetable Price Hike
বাজারে চলে দেদার তোলাবাজি, এর জেরে বাড়ছে সবজির দামও
×
Comments :0