Fishermen Protest

বেসরকারি হাতে জলাভূমি দেওয়ার প্রতিবাদে মৎস্যজীবীরা আন্দোলনে

রাজ্য

 রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অধীনে থাকা জলাভূমিগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার নীতির প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মৎস্যজীবী সমিতি রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের কর্মসূচিতে নামছে। সমিতির সম্পাদক দেবাশিস বর্মণ জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর রাজ্যর ২২টি জেলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মৎস্যজীবী সমিতির আহবানে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে। প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রে গণজমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান, সমাবেশের মাধ্যমে গণডেপুটেশন দেওয়া হবে। ১১ ডিসেম্বর কলকাতায় হরেকৃষ্ণ কোনার স্মৃতি ভবনে কেন্দ্রীয় কনভেনশন সংগঠিত করা হবে। এরপর ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় কেন্দ্রীয় জমায়েত ও বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
তৃণমূল সরকারের মৎস্যজীবী-বিরোধী ‘পন্ডস পলিসি’র প্রতিবাদে এই আন্দোলন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মৎস্যজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তৃণমূল সরকার রাজ্যের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তরের জমি একত্রিত করে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার নীতি গ্রহণের পর রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের অধীন জলাভূমিগুলিকেও এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে বেসরকারি ও বহুজাতিক পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। সেই উদ্দেশ্যেই ‘পন্ডস পলিসি’ নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজ্যের ৩৭ লক্ষ অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের মৎস্যজীবীদের জীবনজীবিকার ক্ষেত্র জলাভূমি, বিল, বাওর, দিঘি, পুকুর, খাল, মজা হ্রদ, মজা নদী, নিচু-ভিজে জমি ইত্যাদি মাছ চাষের উপযোগী প্রায় এক লক্ষ একর জমি সরকারের মৎস্য দপ্তর, পূর্ত দপ্তর, কৃষি দপ্তর, বন দপ্তর প্রভৃতি দপ্তরের হাতে রয়েছে। এই জলাভূমিগুলি একত্রিত করে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিয়ে মৎস্যজীবীদের জীবনজীবিকা, বাসস্থানের ক্ষেত্র থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে সরকার। এই সব জলাভূমিকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বারোশোর বেশি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ও সাড়ে তিন হাজারের বেশি মৎস্যজীবী গ্রুপ গ‍‌ড়ে উঠেছিল বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে। কয়েক লক্ষ মৎস্যজীবী, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে সমবায় ভিত্তিতে মৎস্যচাষ করে জীবনজীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, তাঁরা বিপদে পড়বেন মৎস্যজীবীদের সমবায় ও গোষ্ঠীগুলিকে ধ্বংস করা হলে। গরিব মৎস্যজীবীদের জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে পন্ডস পলিসি-তে। জলাভূমি কেন্দ্রিক বসবাসের স্থান থেকে লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবী উচ্ছেদ হয়ে যাবেন। কৃষি নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যের মৎস্যভোগী ৯০ শতাংশ মানুষ সস্তার প্রোটিন খাদ্য হিসাবে যে মাছ ব্যবহার করেন, তার জোগানে আকাল সৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যের উপর ভয়ানক আঘাত নেমে আসবে। কেন্দ্রের কর্পোরেটসেবী বিজেপি সরকারের একনিষ্ঠ অনুসরণকারী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সরকার এই আক্রমণ নামিয়ে আনছে। রাজ্য সরকারের এই মুনাফালোভী, বেসরকারিমুখী ও কর্পোরেটসেবী ষড়যন্ত্রের ফলে রাজ্যের তপশিলি, আদিবাসী, অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর, সংখ্যালঘু সহ বিভিন্ন অংশের দরিদ্র মানুষ এবং রাজ্যের সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবিকা ধ্বংস হবে। নতুন করে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হবেন। তাই মৎস্যজীবী-বিরোধী ‘পন্ডস পলিসি’ অবিলম্বে বাতিল করা এবং স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে মৎস্যচাষের জন্য মৎস্যজীবীদের অগ্রাধিকার সুনিশ্চিত করার দাবিতে  ১৫- ৩০ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রতিটি মৎস্যজীবী এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল, সভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত করা হচ্ছে। জেলা কেন্দ্রগুলিতে মৎস্যজীবী ও মৎস্য শ্রমিক, মৎস্য চাষি এবং সংশ্লিষ্ট জীবিকার মানুষদের সংগঠিত করা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment