Youth's Death North Dinajpur

কালিয়াগঞ্জে পুলিশি তল্লাশিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবকের মৃত্যু

রাজ্য

Youths Death North Dinajpur


বিশ্বনাথ সিংহ: কালিয়াগঞ্জ 

গভীর রাতে পুলিশি তল্লাশির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে কালিয়াগঞ্জে। পুলিশের গুলিতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এই ঘটনার পর আরও উত্তেজনা ছড়িয়েছে কালিয়াগঞ্জে। যে পঞ্চায়েতে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই পঞ্চায়েত তৃণমূল এবং বিজেপি মিলেমিশে চালায়। প্রধান বিজেপি-র। উপপ্রধান তৃণমূলের। গুলি, নিহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে তৃণমূলের উপপ্রধান কৃষ্ণা বর্মণের পাড়ায়, মির্জাগড়ে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণা বর্মণ জানিয়েছেন,‘‘পুলিশকে আটকাতে যারা গেছিল তাদের মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি-র সমর্থক, কর্মীরা মিলেমিশে ছিল। আরও গ্রামবাসীরাও ছিল। পুলিশ যাকে খুঁজতে এসেছিল রাত ২টোর সময়, তিনি আমার কাকাশ্বশুরের ছেলে। তিনি বিজেপি-র পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। কিন্তু সেদিন তিনি কালিয়াগঞ্জে থানা ভাঙচুরে যাননি। গ্রামেই ছিলেন। আমাদের পরিবারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল।’’


কৃষ্ণা বর্মণের দাবি,‘‘পুলিশ না জেনেই এই গ্রামে এসেছিল। আমার কাকাশ্বশুরের ছেলে বিষ্ণুপদ বর্মণকে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরে তাঁকে ছেড়ে আমার কাকাশ্বশুর সোমেন বর্মণকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল।’’
অর্থাৎ পুলিশ বেপরোয়া হয়ে কিছু একটা করতে চাইছিল। দ্বিতীয়ত, পুলিশকে আটকানোর চেষ্টায় তৃণমূলও ছিল বুধবার রাতে।
বুধবার রাতে নিহতের নাম মৃত্যুঞ্জয় রায় (৩৩)। তিনি রাধিকাপুরেরই বাসিন্দা। বুধবার রাতে ওই গ্রামেই তল্লাশিতে গেছিল পুলিশ। কালিয়াগঞ্জ থানা জ্বালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে ওই গ্রামে তারা গেছিল বলে পুলিশের দাবি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঢুকে মাঝরাতে সবাই জাগিয়ে তল্লাশির নামে জুলুম করছিল। পুলিশ এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণুপদ বর্মণকে খুঁজছিল। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল সশস্ত্র পুলিশরা। গ্রামবাসীরা বাধা দেন। তখনই গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন মৃত্যুঞ্জয় রায়। পুলিশ আহতকে রেখেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। 


গ্রামবাসীরা কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে যুবককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার ভোরে কালিয়াগঞ্জ থেকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্যে মৃতদেহ পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, নাবালিকা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত রয়েছে কালিয়াগঞ্জ। মঙ্গলবার সেখানে থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত কিছু গ্রামবাসী। আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এদিকে থানা জ্বালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার জন্য তল্লাশিতে গিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় রায় নামে যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি শিলিগুড়িতে কাজ করতেন। সম্প্রতি গ্রামে এসেছিলেন।


বৃহস্পতিবার রাধিকাপুর এলাকায় পৌঁছান বামফ্রন্টের নেতা দেবাশিস পাট্টাদার, পুলক কুণ্ডু, মনোরঞ্জন পাটোয়ারী, দেবব্রত কর প্রমুখ। বেলা বাড়তেই গোটা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ। বেপাত্তা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী। আতঙ্কে কালিয়াগঞ্জ শহর কার্যত অলিখিত বন্‌ধের চেহারা নেয়। কালিয়াগঞ্জের মানুষের অভিযোগ বাণিজ্যিক শহর বলেই পরিচিত কালিয়াগঞ্জ।  ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ যারা দিন মজুর তাদের কাজ হারিয়েছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। আতঙ্কের কালিয়াগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এর ফলে ঠেলা, রিক্সা, টোটো, মুটিয়া মজদুর কাল থেকে অনাহারে ভুগবেন, সেই  আশঙ্কা মানুষের। কালিয়াগঞ্জ শহর থেকে গ্রামের মানুষের এই মুহূর্তে সর্বদলীয় সভা না হলে শান্ত হবে না কালিয়াগঞ্জ।  সর্বদলীয় সভার পক্ষে ফের সওয়াল করলেন জেলা বামফ্রন্ট নেতা আনোয়ারুল হক,  তিনিও বৃহস্পতিবার কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা বামফ্রন্টের নেতৃত্বকে কাছে পেয়ে মানুষের ক্ষোভে জানা যায়, পুলিশ ধরপাকড়ের নামে সাধারণ মানুষকে চরম হয়রানি করছে। বিভাজনের রাজনীতি চলছে। শান্তিপ্রিয় কালিয়াগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর অবস্থার জন্যে দায়ী বিজেপি- তৃণমূল সঙ্গে অবশ্যই প্রশাসন। 


মঙ্গলবার রাতেই কালিয়াগঞ্জ শহরে ৪, ৫, ৬, ১১ নং ওয়ার্ডে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কালিয়াগঞ্জ ব্লকের সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গোটা  কালিয়াগঞ্জে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে হত রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে নিন্দা জানালো সামাজিক ন্যায় মঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের এক রাজ্য প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউল কাস্টস এর পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিনিধি দলের নেতা পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সভাপতি ও প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক বাসুদেব বর্মণকে আধিকারিক বলেন ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউল কাস্টসের এক প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে কিছু নির্দিষ্ট ধারণায় পৌঁছয়। তাদের মতামতগুলি সুপারিশ আকারে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিশনকে পাঠানো হয়েছে। এদিন ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্টের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অরুণাভ ভট্টাচার্য। স্মারকলিপি তাঁর হাতে তুলে দেন  পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের পক্ষ থেকে অধ্যাপক বাসুদেব বর্মণ, প্রীতি কুমার রায় এবং তারকচন্দ্র দাস। পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অলকেশ দাস বলেন যে গতকালও প্রশাসনের হটকারী পদক্ষেপে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রং চাপানোর কাজ বিজেপি এবং আরএসএস-র পক্ষে সহজ হয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটিকে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দিকে ধাবিত করে রাজ্যে দাঙ্গা বাধানোর মতো পরিস্থিতি করতে চাইছে আরএসএস এবং বিজেপি। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃঢ় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই দিকে যাবে না, কারণ তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সাম্প্রদায়িকতায় থাকতে চায়। সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ দু’টি ঘটনারই দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে। 


ইতিমধ্যে কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় কমিশন। রাজ্য  প্রশাসনের চার কর্তাকে তলব করেছে দিল্লিতে। উত্তরবঙ্গের আইজি, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক, রায়গঞ্জের পুলিশ সুপার ও ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিককে তলব করল ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউল কাস্টস। তাঁদের শুক্রবার সকাল ১১টায় দিল্লিতে কমিশনের সদর দপ্তরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। ঘটনা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি নিয়ে তাঁদের হাজির হতে বলা হয়েছে। এবিষয়ে কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের আইজি, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক ও রায়গঞ্জের পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সুত্রে জানা গেছে। 
এদিকে পরপর মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার ১২ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গ বন্‌ধের ডাক দিল বিজেপি।


Comments :0

Login to leave a comment