জানা অজানা | নতুনপাতা
চাঁচর - ন্যাড়াপোড়া উৎসব থেকে কাল্পনিক হোলিকা দহনের গপ্পো
তপন কুমার বৈরাগ্য
গপ্পো কথায় বসন্তের শুরু হয় শ্রীপঞ্চমীতে দেবী সরস্বতীর আবাহনের
মধ্যে দিয়ে। আর এই উৎসবের পরিপূর্ণতা আসে রঙের
উৎসব দোল অথবা হোলী উৎসবের মাধ্যমে। দোলের আগের দিন
কাল্পনিক হোলিকা দহন উৎসব। গ্রাম বাংলায় একে অনেকে ন্যাড়াপোড়া
বা চাঁচর উৎসব বলে। দোলের আগের দিন থাকে শুক্লা চতুর্দশী।
হোলিকা দহন উৎসব। যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়
পরের দিন দোল উৎসব।
এই হোলিকা দহন উৎসবের পৌরাণিক গপ্পো কথা হলো
দানবকুলের রাজা ছিলেন হিরণ্যকশিপু। তিনি ছিলেন
অত্যাচারী শাসক। ভগবান বিষ্ণুকে একেবারেও সহ্য করতে
পারতেন না। বিষ্ণুর নাম শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন।
তিনি ছিলেন একপ্রকার অমর। দেবতার বরে দেব,দানব,
পশু ,মানুষ কেউ তাঁকে বধ করতে পারতেন না। তাই
তিনি পৃথিবীতে অত্যাচারী শাসক হয়ে ওঠেন। তাঁর পুত্রের
নাম ভক্ত প্রহ্লাদ। তিনি ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত।
হিরণ্যকশিপুর বোন ছিলেন হোলিকা। তিনি ব্রহ্মার কাছ
থেকে বর পান আগুন তাঁকে কোনোদিন পুড়িয়ে মারতে
পারবে না। এদিকে হিরণ্যকশিপুর ছেলেকে নানাভাবে
নিষেধ করেও বিষ্ণুর নাম মুখ থেকে বন্ধ করতে পারলেন
নি।শেষে একদিন তিনি ছেলের প্রতি রুষ্ট হয়ে ছেলেকে
বহু উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার
ব্যবস্থা করলেন ।কিন্ত রাখে হরি তো মারে কে! প্রহ্লাদের
মৃত্য হল না।যেহেতু তাঁর পিসি হোলিকার আগুনে মৃত্যু
নেই; তাই হোলিকা বল প্রয়োগ করে প্রহ্লাদকে নিয়ে
আগুনে গিয়ে বসল। ভগবান বিষ্ণু তাঁর ভক্তকে
রক্ষা করলেন। ব্রহ্মা এবার হোলিকার উপর রেগে
গেলেন। নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারতে যাওয়ার
জন্য হোলিকাকে ব্রহ্মার দেওয়া বর নষ্ট হয়ে গেল।
হোলিকা নিজেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন।
আর হিরণ্যকশিপু নরসিংহরূপী বিষ্ণুর নখাঘাতে
মারা গেলেন। হোলিকার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াকে
গপ্পো কথায় হোলিকা দহন উৎসব বলে।
এই উৎসবের তাৎপর্য
অন্যায় অবিচারকে একেবারে শেষ করে দাও।
সেটা পারে একমাত্র আগুন। হোলিকা অন্যায় করে
প্রহ্লাদকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। তাই সেই আগুনে
তাঁরই মৃত্যু হলো। তাই তো আমরা দোলের আগের দিন
এই আগুন উৎসব পালন করি একটাই উদ্দেশ্য অন্যায়কে
দূর করে দিয়ে নিষ্পাপভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা।
এই উৎসব আমাদের শিক্ষা দেয় ন্যায়ের পথ ধরে
এগিয়ে চলো জয় আমাদের হবেই হবে।
Comments :0