অনেক হিসাব-নিকাশ করে নিখুঁতভাবে ঘুঁটি সাজিয়ে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ ‘ইন্ডিয়ার’ অন্যতম নেতা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেপ্তার করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ঠিক একইরকম ছকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকেও। লক্ষ্য ছিল ভোটের মুখে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইডি-কে ব্যবহার করে ইন্ডিয়ার অন্যতম দুই খুঁটিকে জেলবন্দি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারের ঝড় তুলে বিরোধী জোটের ভিত টলিয়ে দেওয়া। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদী-শাহরা মুখ্যমন্ত্রীদেরও রেয়াত করেনা এই বার্তা প্রচার করে মোদীর ভাবমূর্তি আর একটু উজ্জ্বল করে ভোটে বাড়তি সুবিধা পাবার আশা করেছিল। কিন্তু সেই প্রচার মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। মানুষ একে ক্ষমতালোভী মোদীর বিরোধীদের বিরুদ্ধে নোংরা ষড়যন্ত্র হিসাবেই গণ্য করেছিলেন। ঝাড়খণ্ডে ভোটের ফলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। দিল্লিতে বাড়তি কোনও সুবিধা হয়নি। সাধারণভাবে এই ধারণাই গোটা দেশে ছড়িয়েছে বিরোধী জোটকে দুর্বল করা এবং বিরোধীদের প্রতি মানুষের সংশয় ও অনাস্থা বাড়ানোর জন্যই মোদী সরকার ইডি-কে শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহার করেছে। কেজরিওয়ালের জামিন এখনও না মিললেও পাঁচ মাস বন্দি জীবন কাটানোর পর হেমন্ত সোরেন জামিন পেয়েছেন। কেজরিওয়ালাও যে জামিন পেয়ে যাবেন তাতে সন্দেহ নেই। সোরেনের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ এনে বিশেষ করে ভোটের আগে বিস্তর লম্ফঝম্ফ করলেও কোনও অভিযোগের পক্ষে একটি প্রমাণও হাজির করতে পারেনি। অর্থাৎ সোরেনকে গ্রেপ্তারের পেছনে মোদীদের মূল উদ্দেশ্য জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সোরেনকে জেলে আটকে রেখে সোরেনের দলে ভাঙন ধরিয়ে চেনা কায়দায় ঝাড়খণ্ডের সরকার দখল করতে চেয়েছিল বিজেপি। যেমন করেছিল মহারাষ্ট্রে। তারও আগে মধ্য প্রদেশে, কর্নাটকে। আর রাজ্যের ক্ষমতা পেলে লোকসভায় ঝাড়খণ্ডে বেশিরভাগ আসনে জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। তার চেয়েও বড় কথা এবছরের শেষে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া সহজ হবে।
মোদীরা যা ভেবেছিলেন কিছুই হলো না। উলটে সোরেন ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় মোদী-শাহদের মুখে চুনকালি পড়েছে। সোরেন শুধু ছাড়া পাননি। ফিরে এসে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এমন কি আসন্ন বিধানসভা সোরেনকেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে লড়াই করবে বিরোধীরা। এই ঘটনা শাসক দলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বুঝে গেছে ঝাড়খণ্ডে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত। এই অবস্থায় বিরোধীদের ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সোরেনের জামিন আটকানোর পরিকল্পনা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও ঠিক করেছে যদি সোরেনকে ফের জেলে পোরে তবে জেলে বসেই কেজরিওয়ালের মতো সরকার চালাবেন হেমন্ত সোরেন। সেটা বিজেপি’র পক্ষে আরও চাপের হয়ে যাবে।
ক্ষমতার সীমাহীন লোভে জনমতকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীদল ভাঙিয়ে সরকার দখলের যে কুৎসিত রাজনৈতিক ঘরানা মোদী-শাহ’রা আমদানি করেছে মানুষ সেটা মেনে নিচ্ছেন না। মহারাষ্ট্রে তার প্রতিফলন ঘটেছে গত লোকসভা নির্বাচনে। বছর শেষে বিধানচনও যে মোদীদের পক্ষে সুখকর হবে না তা একপ্রকার নিশ্চিত। তিন রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে বর্জনের যে ধারার সূচনা হয়েছে আগামী নির্বাচনগুলিতেও তা বজায় থাকবে। অর্থাৎ বিজেপি-র বিসর্জনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
Editorial
বিসর্জনের যাত্রা শুরু
×
Comments :0