Government want to sale land

হাট বাজারের বিপুল জমিও বেচতে চায় রাজ্য

রাজ্য

হাট-বাজারের জমিকে সরকারি খতিয়ানে তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন। 
এমনিতেই মমতা ব্যানার্জির সরকার মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে রাজ্যের সরকারি জমিকে লিজ হোল্ডের পরিবর্তে ফ্রি হোল্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের হাতে কত জমি আছে তা চিহ্নিত করে সেই জমির আর্থিক মূল্য ঠিক করার জন্য জারি হয়েছে নির্দেশিকা। এখন ভূমি সংস্কার দপ্তর যদি জমিদারি অধিগ্রহণ আইনকে ব্যবহার করে হাট ও বাজারের জমিকে ব্যক্তি মালিকানার রেকর্ড থেকে নাম পরিবর্তন করে সরকারি খতিয়ানে যুক্ত করে নেয়, তাহলে এক লপ্তে সরকারের হাতে বাড়তি জমি চলে আসবে। 
এতদিন সরকারি জমি নিয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে একের পর এক নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছিল রাজ্য সরকার। তাতেই সরকারি জমিকে বিক্রি করার পথ খুলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল। বুধবার মিলনমেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগীদের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন সরকারের জমি বিক্রির সিদ্ধান্তকে। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘বাংলায় অনেক সরকারি জমি পড়ে আছে। সেই জমিগুলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিলাম করব। সেই টাকা সরকারি ট্রেজারিতে আসবে।’’ ফলে আগামী দিনে রাজ্য দেদার সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করতে চলেছে। জনমানসে যাতে জমি বিক্রি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয় তার জন্য টাকা দিয়ে রাজ্য সরকার বিনা পয়সায় রেশন দেবে, লক্ষীর ভাণ্ডার চালাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর বিপুল সরকারি জমিকে যে প্রোমোটিং করার জন্যই তুলে দেওয়া হতে চলেছে সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
জমি আন্দোলনের স্বঘোষিত নেত্রী হয়ে এরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। এক দশকের মধ্যেই সরকারি খাস জমি নবান্ন থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে জমি হাঙরদের কাছে। স্বাভাবিক কারণেই যে জমি ভূমিহীনদের বিলি করে দেওয়া যেত, সেই সরকারি জমি চলে যাবে প্রোমোটিং চক্রের হাতে। যার সর্বশেষ নির্দেশিকায় সরকারি হাতে থাকা হাট-বাজারের বিপুল জমি।
জমিদারি অধিগ্রহণ আইনে জমিদারের সম্পত্তির তালিকায় থাকা হাট, বাজার, ফেরি ও টোল আদায়ের সমস্ত জমিই সরকারি সম্পত্তি। রাজ্যজুড়ে সেই জমির পরিমাণ কত তা জানতে চেয়ে ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে সম্প্রতি চিঠি পৌঁছেছে প্রতিটি জেলার ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে। জেলা আধিকারিকদের নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয়েছে, হাট বাজারের তালিকায় থাকা জমিকে সরকারি খতিয়ানে নথিভুক্ত করার কাজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি করে আগামী এক মাসের মধ্যে নবান্নে ভূমি সংস্কার দপ্তরে জমা দিতে হবে। 
১৯৫৩ সালে চালু হয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যাক্ট অর্থাৎ জমিদারি অধিগ্রহণ আইন। ১৯৫৪ সালের ১৫ এপ্রিল ও ১৯৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল এরাজ্যে লাগু হয়েছিল জমিদারি অধিগ্রহণ আইন। ওই আইনের চতুর্থ ও পঞ্চম ধারার অনুচ্ছেদে জমিদারের সম্পত্তির তালিকায় থাকা হাট, বাজার, ফেরি ও টোল সরকারি খতিয়ানে নথিভুক্ত করার ঘোষণা ছিল। নবান্নের জারি করা নির্দেশিকাতে আইনের এই ধারা উল্লেখ করে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে, যে জমিদারি সম্পত্তির আওতা থেকে হাট বাজারের জমি এখনও ব্যক্তি মালিকানায় থেকে গেছে। সরকারি রেকর্ডে এখন তা রায়তি জমি হিসাবেই উল্লেখ করা আছে। দীর্ঘদিন ধরে এই জমি ব্যক্তি মালিকানার মধ্যে পড়ে থাকাটাকে নির্দেশিকাতে আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে দ্রুত তা নিষ্পত্তির জন্য আধিকারিকদের কাছে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
জমিদারি অধিগ্রহণের আইনের যে ধারার কথা নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে তাতে হাট, বাজারের সঙ্গে টোল ও ফেরির প্রসঙ্গ আছে। কিন্তু নবান্নের নির্দেশিকাতে শুধু হাট ও বাজারের কথা উল্লেখ করে সেই জমির পরিমাণ চিহ্নিত করে সরকারি খতিয়ানে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার এখন সরকারি হাতে কত জমি পড়ে আছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই হাট ও বাজারের কথাই বলা হয়েছে। কারণ, ফেরি বা টোল থেকে জমি উদ্ধার করলেও তা থেকে জমির পরিমাণে বিশেষ রকমফের হবে না। কিন্তু রাজ্যজুড়ে হাট ও বাজার থেকে জমি উদ্ধার করে সরকারি খতিয়ানে যুক্ত হলে তার পরিমাণ ঢের বেশি। 
এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল গ্রামীণ এলাকায় জমিদারি সম্পত্তির তালিকায় থাকা হাট, বাজার, টোল ও ফেরি আওতায় থাকা জমিকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের হাতে তুলে দেওয়া। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্যই ছিল, হাট, বাজার, ফেরি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া। ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ বিগত সরকারের আমলে জমিদারি অধিগ্রহণ আইন মেনে হাট বাজারের সব জমি সরকারের খাতায় নথিভুক্ত হয়নি এটা যেমন ঠিক, তেমনই যতটুকু নথিভুক্ত করা হয়েছিল সেই হাট বাজারকে তুলে দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েতের হাতে। যার মধ্য দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত আয়ের ব্যবস্থা করত। কিন্তু এখন তা হবে না।’’ কারণ হিসাবে আধিকারিকদের বক্তব্য,‘‘ জমি সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে তা বিক্রি করাই বর্তমান সরকারের প্রধান পরিকল্পনা।’’ 
ইতিমধ্যেই সরকারি জমি যেখানে দখল হয়ে আছে তা দখলমুক্ত কীভাবে করা যায় তা চূড়ান্ত করতে মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে মমতা ব্যানার্জি মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছেন। রাজ্যজুড়ে কোথায় সরকারি জমি দখল হয়ে আছে তা চিহ্নিত করে কীভাবে সেই জমি দখলমুক্ত করে বিক্রয়যোগ্য করা যায় তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্য সরকার। কলকাতা কর্পোরেশন এলাকায় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া ১০৭, ১০৮ ও ১০৯-এই তিন ওয়ার্ডের বিপুল জমির মালিক রাজ্য সরকার। সেই জমিতে কতটা বেআইনিভাবে দখল হয়ে আছে তার প্লট ভিত্তিক সমীক্ষার কাজ গত শনিবার থেকেই ভূমি সংস্কার দপ্তর ও কলকাতা কর্পোরেশন যৌথভাবে শুরু করেছে।
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও কলকাতা কর্পোরেশনের যৌথ সমীক্ষায় মোট ৫২টি জমির প্লট চিহ্নিত হয়েছে। যার মধ্যে ১০৭ নং ওয়ার্ডে ২৬টি, ১০৮ নং ওয়ার্ডে ১২টি ও ১০৯ নং ওয়ার্ডে ১৪টি প্লটে গত শনিবারই শেষ হয়েছে সমীক্ষা। সমীক্ষা পর্বে যে জমি দখল হয়ে আছে সেখানে সরকারি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা কর্পোরেশনের উল্লিখিত তিন ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের অধীনে আছে প্রায় ৮০০টি জমির প্লট। যার মধ্যে ৫০ শতাংশ বর্তমানে দখল হয়ে আছে। তবে সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা শুরুতে দখলমুক্ত ফাঁকা জমিকে বিক্রির জন্য টার্গেট করা। পরের ধাপে জমির জন্য উচ্ছেদের পরিকল্পনা। মুখ্যমন্ত্রীই গত বুধবার জানিয়েছেন, বাংলায় অনেক সরকারি জমি দখল হয়ে আছে।

Comments :0

Login to leave a comment