Gujarat Election

গুজরাটে ভোট ডিসেম্বরের ১ ও ৫

জাতীয়

Gujarat Election

‘বিচ্ছিন্নভাবে’ মোদীর রাজ্য গুজরাটে বিধানসভার দিন ঘোষণা করবেন বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের পর প্রশ্নে জড়িয়ে কমিশন প্রধানকে বেশিরভাগ সময়টাই ব্যয় করতে হলো কমিশনের ‘নিরপেক্ষতা’ জাহির করতে। সেই ‘নিরপেক্ষ’ কমিশনের তদারকিতেই ডিসেম্বরের ১ ও ৫ তারিখে দু-দফায় ভোটগ্রহণ হতে চলেছে গুজরাটে। খোদ মোদী ও কেন্দ্রে তাঁর সরকারের কৃতকর্ম, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি, সদ্য মোরবির সেতু ভাঙা, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, কৃষক দুর্দশা, জমি অধিগ্রহণ এবং সর্বোপরি সেই ১৯৯৮ থেকে একটানা ২৪ বছরের বিজেপি শাসনে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ধাক্কা সামলে ফের বিজেপি-ই গুজরাটে ক্ষমতায় আসবে কিনা তা এই দু’দিনের মতো প্রকাশেই নির্ধারিত হবে। তেমনই তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কেজরিওয়ালের দলের প্রবেশকে পাশ কাটিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী কংগ্রেস গতবার বিধানসভার ভোটের মতোই তুল্যমূল্য লড়াইয়ে বাজিমাত করতে পারে কিনা তা দেখার। তবে কৃষক আন্দোলনের ফায়দা নিজেদের ঝুলিতে ভরে পাঞ্জাবের মতো সুদূর পশ্চিম ভারতে বাজি জিতে না নিতে পারলেও, শেষ পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভোটে ভাগ বসিয়ে আপ বিজেপি-রই ফায়দা করে দেয় কিনা তাও দেখার। এমনই এক ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার গুজরাটে ভোটের দিন ঘোষণা করলো।
১২ ডিসেম্বর, একই দিনে দুই রাজ্য হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাটের ভোটের ফল ঘোষণার হবে জানানো হলেও একইদিনে কেন দুই রাজ্যে ভোট হবে না। এই প্রশ্নের পাশাপাশি গত মাসে হিমাচলে ভোটের দিন ঘোষণা হলেও গুজরাটের ভোটের দিন ঘোষণা করতে এতটা সময় লাগল কেন, তা নিয়ে প্রশ্নে জেরবার কমিশন প্রধান এদিন বলে ফেললেন, দিন তিনেক আগে মোরবিতে ঝোলতা পুল ভেঙে পড়ার জেরে দিন ঘোষণা করতে দেরি হয়েছে।
এর খানিক আগেই রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর গুজরাটে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। সেই দফায় ৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে মোরবি। গুজরাট বিধানসভার বাকি ৯৩টিতে ৫ ডিসেম্বর। ৯ থেকে ১৪ নভেম্বর প্রথম দফার জন্য এবং ১০ থেকে ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয় দফার জন্য মনোনয়ন পেশের কাজ চলবে। গণনা হবে ৮ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার থেকেই সে রাজ্যে নির্বাচন আচরণ বিধি বলবৎ হয়েছে।
গত মাসে কমিশন হিমাচল প্রদেশের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু গুজরাটের নির্বাচনের দিন জানায়নি কমিশন। এনিয়ে দেশজুড়ে নানা চর্চা শুরু হয়েছিল। বিরোধীরাও এনিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিরোধীদের দাবি, গুজরাট সফরে গিয়ে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। সেকারণেই ভোটের দিন ঘোষণা করা হচ্ছিল না।
শেষ পর্যন্ত গুজরাটে এদিন ভোটের দিন ঘোষণা করতে এসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার অবশ্য জানিয়েছেন, মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। মোরবি সেতু বিপর্যয়ের জেরে দিন ঘোষণায় দেরি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কমিশন খতিয়ে দেখবে সেতু ভেঙে ১৩৫জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হলে তাতে কোনও পক্ষ বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব। 
ভোট ঘোষণায় দেরির সাফাই দিয়ে রাজীব কুমার বলেন, ‘আরও দিন দুয়েক আগে নির্বাচন ঘোষণা করা যেত। কিন্তু মোরবি ব্রিজ ভেঙে পড়ার মতো একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল গুজরাটে। কেন দেরি হলো তার এটি একটি কারণ হলো। বুধবার পর্যন্ত তো গুজরাটে শোকের দিন ছিল।’ তাঁর দাবি, ভোটের দিন ঘোষণার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। আবহাওয়া, বিধানসভার মেয়াদের শেষ দিন ও আচরণবিধি বলবতের দিন সবকিছু মাথায় রেখে ভোটের দিন ঠিক করতে হয়। 
এসব সাফাই দিলেও মোদীকে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণার সুযোগ করে দিয়ে গুজরাটের ভোট ঘোষণায় কালবিলম্ব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ জোরালো হয়। তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবেই রাজীব কুমার বলেন, ‘কাজ ও ফলাফল’ কথার চেয়ে জোরদার। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগেই ‘নেতিবাচক পরিবেশ’ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘একটা ক্রিকেট ম্যাচের পর পরাজিত দল আম্পায়ারকে দোষে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দাবি, ‘এখানে কোনও তৃতীয় আম্পায়ার নেই। কিন্তু ফলগুলিই হলো নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার সাক্ষ্য’।

Comments :0

Login to leave a comment