Scam Cooperative Alipuduar HC

মহিলা সমবায়ে দুর্নীতিতে রাজ্যকে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা হাইকোর্টের

রাজ্য

Scam Cooperative Alipuduar

 গরিব মহিলারা সবজি বেচে সামান্য অর্থ সমবায়ে রাখেন। তাঁদের টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে। তিন বছর ধরে সিআইডি তদন্ত করে কিছুই করতে পারছে না। শুক্রবার এই মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমিতিতে দুর্নীতির মামলায় এই মন্তব্য করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানাও আরোপ করেছে। এই টাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 
আগেই এই মামলা সিবিআই’র হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার সিবিআই আদালতকে জানায়, সিআইডি কোনও নথি হস্তান্তর করেনি। সিবিআই’র এই বক্তব্য শুনে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে সিআইডি-কে নথি হস্তান্তর করতে হবে। এদিনই সিআইডি’র তরফে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন জানানো হয়েছিল। এই আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ওই সমবায়ে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। তার কোনও সুরাহা হবে না! রাজ্য সরকার এই মামলায় ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা দেবে। বিচারপতি সিআইডি’কে ভর্ৎসনা করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘গত তিন বছরে মামলার কী অগ্রগতি হয়েছে? যাঁরা হাটে-বাজারে শাক-সবজি বেচে টাকা সমবায়ে গচ্ছিত রাখলেন, তাঁদের টাকা যাঁরা লুটে নিলেন, তাঁরা গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনারা কী করলেন?’’ 
উল্লেখ্য, এই সমবায়ের দুর্নীতি নিয়ে প্রথম পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা অলোক রায়। পরে গত ২০২২ সালে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেন আলিপুরদুয়ার শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেভিনিউ ইন্সপেক্টর কল্পনা দাস সরকার। সার্কিট বেঞ্চে গত ২৩ আগস্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় সিআইডি তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইডি এবং সিবিআই এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 
এই মামলার আবেদনকারী কল্পনা দাস সরকার ভালো সুদের আশায় সমবায় সমিতির দু’টি স্কিমে ১২ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলেন। সেই টাকা তিনি ফেরত পাননি। তিনি এদিন হাইকোর্টের নির্দেশ শুনে বলেন, ‘‘আদালতের উপর আমার ভরসা আছে। আমি চাই, আমার মতো যাঁরা প্রতারিত, প্রত্যেকেই টাকা ফেরত পান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’’ আলিপুরদুয়ারের আরেক প্রতারিত বাসিন্দা সুধীর রায় শুক্রবার আদালতের রায়ের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘‘দুর্নীতির মূল মাথারা গ্রেপ্তার হোক। আমানতকারীরা টাকা ফেরত পান, এটাই আমরা চাই।’’
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ১৮ জানুয়ারি এই সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু হয়। আলিপুরদুয়ার শহরের বিএফ রোডে একটি ভবনের দোতলায় অফিস খোলা হয় সমবায়ের। এরপর এজেন্ট নিয়োগ, মহিলা স্বনির্ভর দল গড়ে আমানত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। সমবায়ের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয় প্রায় ২২ হাজার। ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকেই দুর্নীতির আঁচ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। ওই বছরের আগস্ট মাসে টাকা ফেরতের দাবিতে আমানতকারীরা আন্দোলন শুরু করেন। এরপরেই বন্ধ হয়ে যায় সমবায় সমিতির দপ্তর। সামনে আসতে থাকে টাকা নয়ছয়ের একের পর এক খবর। দেখা যায়, গচ্ছিত আমানতের পুরোটাই ঋণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ঋণের আসল এবং সুদ কিছুই সমিতির কোষাগারে ফেরত আসেনি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিধি ভেঙে যাঁরা ঋণের নামে সমবায়ের টাকা লুট করেছেন, তাঁদের মধ্যে শহরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও রাজনৈতিক নেতারাও রয়েছেন। এই ঘটনায় সমিতির ম্যানেজার, চেয়ারপার্সন সহ ৫ জন গ্রেপ্তার হলেও কোনও টাকাই উদ্ধার হয়নি। গ্রেপ্তার হননি একজন প্রভাবশালীও।

Comments :0

Login to leave a comment