Putin India

পুতিন স্মৃতির আড়ালে

সম্পাদকীয় বিভাগ

দু’দিনের ভারত সফর সেরে মস্কোয় ফিরেছেন রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর পুতিনের এটাই প্রথম ভারত সফর। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপের নজর ছিল এই সফরের দিকে। এই সফরে লাল কার্পেট পেতে মহা ধুমধাম করে রাজকীয় সংবর্ধনা ও আপ্যায়ন পুতিনের জন্য করা হলেও মনের দিক থেকে চাপমুক্ত ছিল না ভারত। সময়টা যে ভারতের পক্ষে বি‍‌শেষ করে রুশ-ভারত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বিশেষ স্বস্তির নয় সেটা বলাই বাহুল্য। সেই মনমোহন সিয়ের আমল থেকে ভারত সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে দ্রুত আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পডার গতি জোরালো হয়েছে মোদী জমানায়। মোদী সরকারের অতি দক্ষিণপন্থার সঙ্গে ট্রাম্পের আদর্শগত নৈকট্য অনেক কাছাকাছি হওয়ায় মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা দৃঢ় হয়। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় চীনকে ঠেকানোর জন্য সম্ভাব্য সহযোগী শক্তি হিসাবে অনেকদিন ধরেই চাইছিল ভারতকে মার্কিন বৃত্তে ঢুকিয়ে নিতে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর সেটা অনেকটা সহজ হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আমেরিকার জোট কোয়াড দ্রুত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে মোদী সরকারের অতিরিক্ত উৎসাহে।
কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হবার পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। আমেরিকার ক্রমশ দুর্বল হতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ট্রাম্পের একাধিক অতি দক্ষিণপন্থী দাওয়াইয়ের অন্যতম ‍‌বিদেশি পণ্যে উচ্চ শুল্ক ও অভিবাসী বিরোধিতায় বড় শিকার হয় ভারত। বাণিজ্যে বড় ধাক্কার মুখে পড়ে বিকল্প হাতড়াতে গিয়ে রাশিয়াকে আশ্রয় করে আমেরিকাকে চাপ দেবার কৌশল নেয়। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে যখন বিশ্বজুড়ে রুশবিরোধী হাওয়া বইছে তখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা শুরু করে ভারত। বদলা হিসাবে ভারতের পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপায় আমেরিকা।
এটা ঠিক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাশিয়া হলেও চীন বিরোধিতার জন্য ভারত ধীরে ধীরে আমেরিকার পক্ষ নিতে শুরু করে এই শতাব্দীর গোড়া থেকে বাজপেয়ীর আমলে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কার মোকাবিলা করতে রুশ ঘনিষ্ঠতার অস্ত্র সাময়িকভাবে ব্যবহার করে। আমেরিকাও ভারতকে দূরে  ঠেলে দিয়ে চীনের মুখে ফেলার কৌশল নেয়। এই কৌশল যুদ্ধে স্পষ্ট হয়ে যায় ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ভারত কিন্তু নীরব। কারণ শেষ পর্যন্ত মোদীদের লক্ষ্য ভারতকে আমেরিকার ছাতার তলায় জায়গা পাওয়া। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক প্রশ্নাতীত হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকার কাছে পৌঁছাতে মোদীরা পুতিনকে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়েছেন। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধের প্রশ্নে আমেরিকা চাপে রেখেছে ভারতকে। আসলে ট্রাম্প চাইছেন ভারতকে আমেরিকার শর্তে সঙ্গী করতে। মোদীরা সেটা সরাসরি অস্বীকার করতে পারছেন না বলে যাবতীয় অপমান হজম করছেন। মার্কিন বিরোধী কথা বললে পাছে ট্রাম্প পুরোপুরি ত্যাজ্য করে দেয় সেই ভয়ও আছে। তাই ট্রাম্পের মন পেতে নরমে গরমে নানাভাবে চেষ্টা করে চলেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment