সইফুদ্দিন মোল্লা
বর্তমান ভারতে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চর্চিত বিষয় হলো ওয়াকফ। ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের পরিবর্তে নতুন আইন এনে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মুসলিম সমাজের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে যা দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে বিপজ্জনক।
ওয়াকফ কি?
ওয়াকফ শব্দটি আরবি শব্দ, এর ধর্মীয় ও আইনি অর্থ হলো, ইসলামি আইন (শরিয়াহ) অনুসারে, স্থায়ীভাবে আল্লাহর কাছে অর্পিত কোনও সম্পত্তি বা সম্পদকে ওয়াকফ বলা হয়। ওয়াকফ বলতে বোঝায় কোনও ব্যক্তি (সাধারণত একজন মুসলিম) যখন জনকল্যাণমূলক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে তার মালিকানাধীন কোনও সম্পত্তি (যেমন জমি, বাড়ি, নগদ অর্থ ইত্যাদি) স্থায়ীভাবে দান করে দেন। একবার ওয়াকফ করা হলে, সম্পত্তির মালিকানা আর সেই ব্যক্তির বা তার উত্তরাধিকারীদের থাকে না, তা আল্লাহর মালিকানা বা ট্রাস্টের অধীনে চলে যায়। এটা স্থাবর বা অস্থাবর হতে পারে। ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং জমি।
ওয়াকফ' (Waqf) সাধারণত যে দুই প্রধান প্রকারে করা হয়— ওয়াকফে আউলাদ এবং ওয়াকফে লিল্লাহ। এই বিভাজন মূলত ওয়াকফ সম্পত্তির সুবিধাভোগী কারা হবেন, তার ওপর নির্ভর করে।
'ওয়াকফ' (Waqf) সাধারণত যে দুই প্রধান প্রকারে করা হয়, সেগুলি হলো: ওয়াকফে আউলাদ এবং ওয়াকফে লিল্লাহ। এই বিভাজন মূলত ওয়াকফ সম্পত্তির সুবিধাভোগী কারা হবেন, তার ওপর নির্ভর করে।
ওয়াকফ-এ-আউলাদ (Waqf alal-aulad) – এই শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ 'আউলাদ' থেকে, যার অর্থ হলো সন্তান বা বংশধর। যখন কোনও ব্যক্তি তার সম্পত্তি প্রাথমিকভাবে নিজেকে বা তার সন্তান, পরিবার এবং বংশধরদের কল্যাণের জন্য ওয়াকফ করেন, তখন তাকে ‘ওয়াকফ-এ-আওলাদ’ বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো তার পারিবারিক সম্পদকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে সেই সম্পত্তি কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তর না হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির আয় বা সুবিধা প্রথমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা হয়। পারিবারিক বংশধরদের বিলুপ্তির পরে, বা ওয়াকফ দাতার নির্দেশ অনুসারে, সম্পত্তিটি সাধারণত জনকল্যাণমূলক (খয়রাতি) উদ্দেশ্যে রূপান্তরিত হয়। এই ধরনের ওয়াকফকে ইংরেজিতে 'Family Waqf' বা 'Private Waqf'ও বলা হয়।
'ওয়াকফে লিল্লাহ' শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ 'লিল্লাহ' থেকে, যার অর্থ হলো ‘আল্লাহর জন্য’ বা ‘আল্লাহর পথে’। যখন কোনও ব্যক্তি তার সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে ও সরাসরি জনকল্যাণমূলক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করেন, তাকেই বলে 'ওয়াকফে লিল্লাহ'। এক্ষেত্রে যিনি বা যারা ওয়াকফ করলেন, তাদের বংশধররা কোনও দাবি করতে পারবে না। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সমাজের দরিদ্র, অভাবী এবং সাধারণ মানুষের সেবায় সম্পত্তি ব্যবহার করা, যা ইসলামে ‘সদকাহ জারিয়াহ’ (চলমান দান বা পুণ্য) হিসাবে গণ্য হয়। এই সম্পত্তির সুবিধাভোগী সরাসরি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবার নয়, বরং সমগ্র জনসাধারণ বা নির্দিষ্ট জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে (যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল বা এতিমখানা) ব্যবহৃত বা ব্যয় করা হয়।
ওয়াকফ গঠন হয় হজরত মহম্মদের জীবদ্দশাতেই। ভারতে ওয়াকফ গঠিত হয় মধ্যযুগে ইসলামের আগমনের পরে। সুলতানি আমলে, মুঘল আমলে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাবে, সুলতানে, নিজামশাহের আমলে অবিভক্ত অন্ধ্রে, নবাব শাহী আমলে বাংলায় এবং অন্যান্য রাজ্যে বহু ওয়াকফ সম্পত্তি গঠিত হয়। এইসব ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহৃত হতো দাতব্য সুলভ কাজে এবং মুসলমান জনগণের সেবায়। ঐ অর্থে তৈরি করা হতো মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরখানা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত।
ওয়াকফ বোর্ড কি ?
ওয়াকফ সম্পত্তি যাদের দায়িত্বে থাকে আইনি ভাষায় তারাই ওয়াকফ বোর্ড। ১৯৬৪ সালে তৈরি হয় সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল। দেশজুড়ে ওয়াকফ বোর্ডগুলি এই কাউন্সিলের নজরদারিতে চলে। ওয়াকফ বোর্ড ছাড়াও রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও সম্পত্তির বিষয়ে কথা বলে এই কাউন্সিল, প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারে। ওয়াকফ বোর্ড কেমন কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে অডিট রিপোর্টও তৈরি করতে পারে এই কাউন্সিল।
১৯৯৫ সালে একটি আইন তৈরি হয় অনেক সংশোধন করে। ২০১৩ সালে, সেই আইনে ওয়াকফ বোর্ডকেই ক্ষমতা দেওয়া হয়, যাতে তারাই ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করতে পারে।
ওয়াকফ সম্পত্তি
ভারত সরকারের WAMSI (Waqf Assets Management System of India) পোর্টালে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে মোট সম্পত্তির সংখ্যা ৮,৭২,৩২৮টি। জমির পরিমাণ ৩৮,১৬,২৯১.৭৮৮ একর, যার মধ্যে কৃষি জমিই বেশি। ভারতে এই বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তির বাজার মূল্য লক্ষ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা প্রায় ৮০,৪৯০ থেকে ৮১,০০০। বোর্ডের পুরানো নথি অনুসারে, এই জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৩,০০০ একরের কাছাকাছি। বিভিন্ন সময় জরিপ বা ডিজিটালাইজেশনের কারণে এই সংখ্যায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। সরকারি নথি এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে নিবন্ধিত ওয়াকফ সম্পত্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবৈধভাবে দখলীকৃত, যার পরিমাণ দশ হাজার থেকে কুড়ি হাজার একরের মধ্যে, যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শাসক দল যুক্ত। এ তো সরকারি হিসাব, বাস্তবে এর চাইতে অনেক বেশি জমি মাতব্বররা এরাজ্যে দখল করে ফেলেছে।
১৯৯৫ ও ২০২৫ ওয়াকফ আইন
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫, লোকসভায় পেশ হয় ৮ আগস্ট ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের ২-৪ এপ্রিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর ৮ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হয়েছে।
নতুন আইনে কেন্দ্রীয় সরকারকে ওয়াকফ নিবন্ধন, নিরীক্ষা ও অ্যাকাউন্টের নিয়ম তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণে জেলাশাসকের ভূমিকা বাড়ানো হয়েছে এবং আপিল প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক বোর্ড গঠন এবং নারী ও বঞ্চিতদের কল্যাণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
পূর্বের আইনের ৪০ নম্বর ধারা বাতিল করে ওয়াকফ বোর্ডের কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে; এখন এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জেলাশাসক বা সম পদের কোনও আমলার হাতে দেওয়া হয়েছে। সব ওয়াকফ সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে জেলা কালেক্টরের অফিসে নিবন্ধন করতে হবে এবং ওয়াকফ কাউন্সিল কোনও জমির অধিকার দাবি করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে ওয়াকফ নিবন্ধন, হিসাব প্রকাশ এবং বোর্ডের কার্যবিধি নিয়ন্ত্রণের নিয়ম তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এবং ১ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য অডিটর বা সিএজি’র মাধ্যমে অডিট বাধ্যতামূলক। বোর্ডে অমুসলিম সদস্য এবং অন্তত দু’জন মহিলা সদস্য যোগ করার বিধান চালু হয়েছে, যা আসলে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়াবার সুযোগ তৈরি করেছে।
কেন বিরোধিতা
ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অত্যধিক হস্তক্ষেপ, যা ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত স্বায়ত্বশাসন হ্রাস করেছে। মুসলমানদের দেওয়া সম্পত্তিতে অমুসলমানরা কেন থাকবে, মুসলমানরা তো অ-মুসলমানদের কোনও বোর্ডে নেই বা থাকতে চায়নি। অন্য কোনও ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু এই আইন নেই।
মালিকানা ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদগুলো বিচারকের অনুমতিতে কেন্দ্রীয় রাজস্ব কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর হওয়া এবং আদালতের এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সরকারের আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে নতুন আইনে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা না করে এই বিল পাশ করানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর প্রভাব পড়েছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এসব কারণে মুসলিমরা মনে করেন যে এই আইন তাদের ধর্মীয় সম্পত্তির উপর সরকারের ‘বেআইনি নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করছে এবং তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
আইনে সবচেয়ে বিতর্কিত দিকগুলির মধ্যে আর একটি হলো,মালিকানা বিধি পরিবর্তন, যা বোর্ডের মালিকানাধীন ঐতিহ্যগুলি মসজিদ, দরগা এবং কবরস্থানগুলিকে প্রভাবিত করবে।
এই সম্পত্তিগুলির অনেকগুলি মুসলিমরা বংশ পরম্পরায় ব্যবহার করে আসছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক নথিপত্রের অভাব রয়েছে কারণ এগুলি কয়েক দশক বা শতাব্দী আগে মৌখিকভাবে বা আইনি রেকর্ড ছাড়াই দান করা হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের ওয়াকফ আইনে এই ধরনের সম্পত্তিকে ‘ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নতুন আইনে এই আইনটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এই সম্পত্তিগুলির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংশোধিত এই আইন আসলে আরএসএস-বিজেপি’র অ্যা জেন্ডারই বাস্তবায়ন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান একজন প্রবীণ ও সম্মানিত জনবুদ্ধিজীবী হিসাবে, কেবল বাংলাদেশই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নীতি ও রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তাঁর মতে, “মনে হচ্ছে কেবল মুসলিমদের সম্পত্তির উপর শুধু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নয় বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনের উপর হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ন্ত্রণও আনার চেষ্টা চলছে”।
আইনে বলা হয়েছে কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের অধীন থাকলে তা আর ওয়াকফ সম্পত্তি থাকবে না। তা কেন হবে? মালিকানা কেন ওয়াকফ সম্পত্তি থাকবে না? ওয়াকফ কেন মালিকানা হারাবে? বরং সরকারের দেখা উচিত যে সব সরকারি সম্পত্তির মালিকানা ওয়াকফের নামে আছে ,অথচ সরকার ভোগ করছে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়া।
১৯৯৫ সালের সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, ওয়াকফ সম্পত্তি সার্ভে করার জন্য ওয়াকফ বোর্ড সার্ভে কমিশনার এবং অতিরিক্ত সার্ভে কমিশনার নিযুক্ত করবে। বর্তমান আইনে বলা হয়েছে - জেলা শাসক সেই কাজ করবেন। আসলে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে জেলা শাসকের মাধ্যমে কেন্দ্র ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চাপাতে চাইছে। দেশে প্রতিরক্ষা ও রেল দপ্তরের পর সবচেয়ে বেশি পরিমান জমি হলো ওযাকফ সম্পত্তি। সেই সম্পত্তিতে এখন নজর পড়েছে কর্পোরেট মালিকদের এবং তাদের সেবক হলেন মোদী।
পশ্চিমবাংলা সহ বহু রাজ্যে ওয়াকফ সম্পত্তিতে অবৈধ দখলদারি তৈরি হয়েছে কিংবা বেআইনিভাবে বিক্রি হয়েছে। কোথাও সরকার নিজেই ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করেছে বা লিজ দিয়েছে। যেমন, অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং ওয়াইএস রেড্ডি সরকার দরগা হোসেন শাহ আলির ওয়াকফ সম্পত্তি বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাকে স্বল্প মূল্যে লিজ দিয়েছে। দিল্লিতে এবং উত্তরাখণ্ডেও একই কাজ হয়েছে। মোদী সরকারের কর্পোরেট তোষণ এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মিশেল বানিয়ে সরকার চালাচ্ছে। সেই লক্ষ্য পূরণেই ওয়াকফ আইনে এই পরিবর্তন।
কেন এই বৈষম্য
অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের যেমন হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টানদের মন্দির, গুরুদ্বার বা গির্জার সম্পত্তি হয় সাধারণ আইন, যেমন ট্রাস্ট আইন অধীনে বা রাজ্য সরকারের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী। যেমন হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ‘হিন্দু চ্যারিটেবল অ্যা ন্ড রিলিজিয়াস এনডাউমেন্ট অ্যাক্ট’ দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরি করা ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি অর্থাৎ সকল ধর্মের প্রতি সম-আচরণের পরিপন্থী। ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য যোগ করা এবং সম্পত্তি নির্ধারণে জেলাশাসকের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া ধর্মীয় স্বায়ত্তশাসনের উপর হস্তক্ষেপ, যা ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটি একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে নিশানা করে সরকারের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ, যেখানে হিন্দু মন্দির বা অন্যান্য ধর্মের ট্রাস্টের উপর একই নিয়ন্ত্রণ নেই। এই আইন, ২০২৫ ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী কারণ এটি শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মীয় ওয়াকফ সম্পত্তির উপরই সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে, অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় সম্পত্তি আইনের ক্ষেত্রে একই সংস্কার আনা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিচারিতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথা বারবার প্রচার করেন। কিন্তু ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের ভূমিকা দ্বিচারিতারই পরিচয় বহন করে।
পশ্চিমবঙ্গের ওয়াকফ বোর্ডগুলি শাসকের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, পুলিশ বা প্রশাসন প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। ওয়াকফ বোর্ডগুলি তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব প্রবল। ফলে বোর্ড অনেক ক্ষেত্রে শাসক দলের নির্দেশেই পরিচালিত হয়, যা সম্পত্তি রক্ষায় কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য বক্তব্য এবং উল্টোদিকে তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের ওয়াকফ সম্পত্তি দখল, এই দ্বিচারিতা ক্রমেই প্রকাশ্যে আসছে। একদিকে আরএসএস-বিজেপি’র নির্দেশ পালন করার জন্য সরকারি অর্থে বেআইনিভাবে মন্দির নির্মাণ, অন্যদিকে ‘মুসলিমদের মসীহা’ সাজার চেষ্টা, এই দ্বিচারিতা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
আমাদের দাবি ও করণীয় কাজ
আমাদের দাবি এই আইন বাতিল করতে হবে এবং ওয়াকফ বোর্ড কাউন্সিলে মুসলিম আইন সম্পর্কে জ্ঞান আছে কেবল এমন ব্যক্তিদের বা অফিসারদের বসানো উচিত, ওয়াকফ সম্পত্তি সংখ্যালঘু জনগণের উন্নয়নেই ব্যবহার করতে হবে। ইতিমধ্যেই আমাদের পার্টি সহ বিভিন্ন বিভিন্ন দল বা ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। তবে এনিয়ে কোনও ধ্বংসাত্মক আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি না। আমরা চাই সংবিধানের মাধ্যমেই এর সমাধান হোক। সমাজের সকল অংশ এবং ধর্মের মানুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে।
Comments :0